পাথরঘাটা (বরগুনা) প্রতিনিধি : বরগুনার পাথরঘাটা পৌরসভার নির্বাচনে নৌকা ও বিদ্রোহী স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে দফায় দফায় ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশের ছোড়া টিয়ারসেল ও রাবার বুলেটে কমপক্ষে ২৫ জন আহত হয়েছে বলে সর্বশেষ খবরে জানা গেছে। পুলিশের উপর হামলার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় এপর্যন্ত ২জন আটকের খবর পাওয়া গেছে।

মঙ্গলবার বিকেল পাঁচটা থেকে সন্ধ্যে পৌনে ছটা অবদি চলে এই সংঘর্ষের ঘটনা । সংঘর্ষ চলাকালে পৌর শহরের সকল দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়।

এ ঘটনায় পাথরঘাটা থানার ওসি সাহাবুদ্দিন সহ ৬ পুলিশ সদস্য আহত হন। এছাড়াও স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী সোহেল, ২ সাংবাদিকসহ অন্তত ২৫ জন বিভিন্নভাবে যখম সহ আহত হয়েছে। ইটের আঘাতে আহত ওসিসহ পুলিশ সদস্যদের পাথরঘাটা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভর্তি করে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে ।

সংঘর্ষ চলাকালে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান সোহেলকে পুলিশ উদ্ধার করে আহতাবস্থায় থানা হেফাজতে রাখে। থানা থেকে রাত সাড়ে এগারোটার দিকে তাকে পুলিশ প্রহরায় বাসায় পৌঁছে দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে ।
পাথরঘাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) সাঈদ আহমেদ জানান, আহত হওয়ার কারণে সোহেলকে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছিল। মঙ্গলবারের সন্ধ্যায় ঘটে যাওয়া সংঘর্ষের ঘটনায় এখনও অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে তিনি জানান।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেলা ৩টার দিকে মেয়র প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান সোহেলের কর্মীরা গণসংযোগের জন্য তার বাসায় সমবেত হয়।

এসময় পুলিশ, র‍্যাব, ডিবিসহ শতাধিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনির সদস্য সোহেলের বাসার সামনে অবস্থান নেয়। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উপস্থিত হয়ে আচরণবিধি ভঙ্গ না করার জন্য তাদের অনুরোধ করা হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সাথে বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে র‍্যাবের গাড়ি লক্ষ করে ইট ছুড়লে গাড়ির সামনের গ্লাস ফেটে যায়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় মেয়র প্রার্থী সোহেল তার ৬/৭ জন কর্মী নিয়ে নারিকেল গাছ মার্কার লিপলেট বিতরণ শুরু করে। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, সোহেল লিফলেট বিতরণকালে বনবিভাগের সামনে রাস্তায় এলে হঠাৎ করে আওয়ামী লীগ কর্মীরা ইটপাটকেল ছুড়তে শুরু করে।

এখবর পেয়ে সোহেলের শতাধিক কর্মী লাঠিশোটা নিয়ে পাল্টা হামলা করে আওয়ামী লীগের কর্মীদের বিরুদ্ধে। আওয়ামী লীগ কর্মীরা আরও সংগঠিত হয়ে পাল্টা হামলা করলে দু'পক্ষের সংঘর্ষে ঘটনাস্থল রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এ সময় পুলিশ টিয়ারসেল ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। আওয়ামী লীগ কর্মীরা এসময় পৌরশহরের কেজি স্কুল রোডে সাংবাদিক সুমনের টেলিকমের দোকানে হামলা করে ভিডিও ক্যামেরা, ল্যাপটপ ভাঙচুর করাসহ সোহেলের বাসায় হামলা ভাঙচুর করে বলে জানা যায়। এ সময় সোহেলের বাসার সামনে রাখা বেশ কয়েকটি মোটরবাইক গুঁড়িয়ে দেয়া হয় বলেও জানাগেছে।

পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তা সাবরিনা সুলতানা বলেন, বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রযেছে। কোন পক্ষ থেকে নির্বাচনী আচরণবিধ লংঘনের অভিযোগ আমরা পাইনি।

এ ঘটনায় ১৮ জনার নাম উল্লেখ সহ সর্বমোট ৩০০ অজ্ঞাত আসামি করে থানা পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা রুজু করে বলে জানা গেছে।

এদের মধ্য থেকে জাহাঙ্গীর ও রাসেল হাওলাদার নামক দু আসামীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

আজ দুপুরে এরিপোর্ট তৈরিকালে স্বতন্ত্র প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান সোহেল তার বাসায় সাংবাদিক সম্মেলন করে । তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সজাগ থাকায় সর্বত্র পরিস্থিতি স্বাভাবিক দেখা গেছে।

(এটি/এসপি/জানুয়ারি ২৭, ২০২১)