চট্টগ্রাম প্রতিনিধি : সংঘর্ষ, হামলা, গোলাগুলি, কেন্দ্র দখল, পাল্টা দখল এবং দুইজনের প্রাণহানীর মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে চসিক নির্বাচনের ভোট গ্রহণ। আজ বুধবার সকাল ৮টা থেকে শুরু হয়ে টানা ভোট গ্রহণ চলে বিকেল ৪টা পর্যন্ত।

ভোট চলাকালে কেন্দ্রে হামলা, ককটেল বিস্ফোরণ, বিএনপির এজেন্টদের বের করে দেয়া এবং কাউন্সিলর প্রার্থীর উপ হামলা, নারী এজেন্টদের লাঞ্চিতসহ নানান অপ্রীতকর ঘটনা ঘটে।

আজ বুধবার সকাল ৮টায় ভোট গ্রহণ শুরুর পর থেকে বিএনপির মেয়র প্রার্থী ডা: শাহাদাত হোসেনের এজেন্টদের মারধরণ কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া এবং ভোট কেন্দ্রে প্রবেশ করতে না দেয়া। নারী এজেন্টদের লাঞ্চিত করার অভিযোগ করেন তিনি। এছাড়া আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিল প্রার্থী এবং বিদ্রোহী প্রার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ চলছে নগরীর বিভিন্ন ভোট কেন্দ্রে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ সমর্থিত দুজন নিহত হয়েছেন। বিভিন্ন এলাকায় বিচ্ছিন্ন সংঘর্ষে অহত হয়েছেন অন্তত ৩০ জন।

সকাল ৮টায় ভোট গ্রান শুরুর পরপরই খুলশী থানার ১৩ নম্বর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের আমবাগান ইউসুফ স্কুল আওয়ামীলীগ সমর্থিত ওয়ার্ড কাউন্সির প্রার্থী এবং বিদ্রোহী প্রার্থী সর্মথকরা সংঘর্ষে গুলিতে আলম মিয়া নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। এতে পাঁচজন আহত হয়েছে বলে জানা গেছে।

নির্বাচন শুরুর আগে সকাল সাড়ে ৭টায় পাহাড়তলী ১২ নং সরাইপাড়া ওয়ার্ডে আওয়ামী প্রার্থী নুরুল আমিন ও বিদ্রোহী প্রার্থী সাবের সমর্থক দুই ভাইয়ের বিরোধে বড় ভাইয়ের হাতে ছোটভাই নিজাম উদ্দিন মুন্না খুন হয়েছে।

ভোটগ্রহণ চলাকালীন বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। সকালে চকবাজার কাতালগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংঘর্ষে একজন আহত হয়েছেন। এদিকে লালখান বাজার চানমারি রোডের শহীদ নগর সিটি করপোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে সকাল পৌনে ৯টা থেকে দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।

এ সময় হকিস্টিক ও লাঠি নিয়ে হামলা চালায় দুই পক্ষ। কাচের বোতল, ইটপাটকেল ছোড়া হয় এলোপাতাড়ি। পরে বিজিবি-পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এসেময় বেশ কয়েকটি ককেটেল বিস্ফোরণ ঘটে। এ সংঘর্ষে অন্তত ২০ জন আহত হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানায়।

এদিকে পুলিশ লাইন কেন্দ্রেও সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে। এতে আহত হয়েছেন কাউন্সিলর প্রার্থী আবুল হাসনাত বেলালের সমর্থক শহীদুল ইসলাম শহীদ।

ভোট গ্রহণ শুরু হওয়ার পর অনেক কেন্দ্রে ভোটারদের লম্বা লাইন দেখা গেছে। তবে অনেক ভোট কেন্দ্র বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ভোটারদের দেখা মেলেনি। কিছু কিছু কেন্দ্রের বাইরে নেতাকর্মী সমর্থকদের জটলা দেখা গেলেও কেন্দ্রের ভীতরে ভোটার নেই।

সকাল থেকে এমইএস স্কুল, ঘাট ফরহাদবেগ, হামজারবাগ সরকারী প্রাথমিক স্কুল, কদম মোবারক উচ্চ বিদ্যালয়, সিডিএ স্কুল এন্ড কলেজসহ ১০ কেন্দ্রে ঘুরে ভোটার কম দেখা গেছে। কদম মোবারক মুসলিম এতিম খানা বিদ্যালয় কেন্দ্রে মহিলা ভোটার সংখ্যা ২ হাজার ৮০। সকাল ১০টা পর্যন্ত ভোট গৃহীত হয়েছে ৭৮টি। আরও দুটি কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে সকাল ১০ পর্যন্ত ভোট গৃহীত হয়েছে ১৮টি এবং ১৯টি। তবে বেলা বাড়ার সাথে সাথে ভোটার বাড়তে পারে আশা করা করছে নির্বাচনে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা।

রিটার্নিং অফিসার হাসানুজ্জামান বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ চলছে। দু একটি কেন্দ্রে বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটেছে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনী পরিস্থিতি নিয়নস্ত্রণ করছে। কেন্দ্রগুলোতে পর্যাপ্ত আইন শৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন আছে। তিনি বলেন-ভোটারদের আশ্বস্ত করতে চাই, ভোটকেন্দ্রে এসে নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারবেন।

চট্টগ্রাম নগরীর ৪১ ওয়ার্ডে মেয়র ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে লড়ছেন ২২৬ জন কাউন্সিলর প্রার্থী। এর মধ্যে ৩৯ ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন ১৬৯ জন। বাকি দুই ওয়ার্ডে ওই পদে নির্বাচন হচ্ছে না। সংরক্ষিত ১৪টি ওয়ার্ডে নারী কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করছেন ৫৭ জন।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ৪১ ওয়ার্ডে ৭৩৫টি ভোট কেন্দ্রে তৈরি করা হয়েছে ৪ হাজার ৮৮৬টি বুথ। এসব কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ৭৭৫ প্রিসাইডিং অফিসার, ৪ হাজার ৮৮৬ সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার ও ৯ হাজার ৭৭২ পোলিং অফিসার।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নগর ও জেলার হাটহাজারী উপজেলা মিলিয়ে ৭৩৫টি কেন্দ্র আছে। এসব কেন্দ্রে প্রায় ৯ হাজার পুলিশ সদস্য মোতায়েনসহ বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হয়েছে। ২৫ প্লাটুন বিজিবি মোবাইল টিমে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে সব কেন্দ্রে কাজ করছে।

এদিকে সকাল ১০টার দিকে নগরের খুলশী থানার আমবাগান এলাকায় নির্বাচনি সহিংসতার সময় গুলিতে আলম মিয়া নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া লালখান বাজার এলাকায় আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর প্রার্থী আবুল হাসনাত বেলাল ও বিদ্রোহী প্রার্থী এস কবির মানিকের সমর্থকদের মধ্যে দফায় দফায় হামলা, ককটেল বিস্ফোরন এবং একটি মোটরসাইকেল জ্বালিয়ে দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ সংঘর্ষে অন্তত ২০ জন আহত হয়।

একই সময়ে ১২ নম্বর ওয়ার্ডের অংশ পাহাড়তলীতে আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী নুরুল আমিন ও বিদ্রোহী প্রার্থী সাবের আহমেদের সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। আহত হন অন্তত সাত জন। সেখানে একজন মারা যায়।

এদিকে দুপুর ২টার দিকে নগরীর ৯ নং উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর প্রার্থী আবছার মিয়া ও বিদ্রেহী জহিরুল আলম জসিমের সমর্থকদের বিশ্ব কলোনী কোয়াক স্কুল কেন্দ্র দখলে নিতে প্রকাশ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে।

আকবর শাহ থানার অফিসার ইনচার্জ জহির হোসেন বলেন সংঘর্ষের খবরে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ পাঠানো হয়েছে।

(জেজে/এসপি/জানুয়ারি ২৭, ২০২১)