রাজন্য রুহানি, জামালপুর : শীতের সকালে দরিদ্র পরিবারের শিশু জান্নাত আরা (৮) আগুন পোহাতে গিয়ে দগ্ধ হবার পর তার পাশে দাঁড়িয়েছেন জামালপুরের বকশীগঞ্জের ইউএনও মুনমুন জাহান লিজা।

আগুনে দগ্ধ হয়ে ১৫ দিন ধরে এক শিশুর অবর্ণনীয় কষ্টের কথা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানতে পেরে অফিসে আসতে খবর পাঠান ইউএনও। বুধবার (২৭ জানুয়ারি) ওই শিশুর দাদা শিশুটিকে সঙ্গে নিয়ে আসলে অবস্থার অবনতি দেখে তাকে দ্রুত ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। চিকিৎসার ব্যয় বহনের আশ্বাস দেন। ব্যক্তিগতভাবে তাৎক্ষণিক অর্থ সহায়তা করেন।

জান্নাত আরা জামালপুর জেলার বকশীগঞ্জ উপজেলার বগারচর আউলপাড়া গ্রামের জালাল উদ্দিনের মে‌য়ে। ১৫ দিন আগে সমবয়সী‌দের সা‌থে আগুন পোহা‌তে গি‌য়ে কাপ‌ড়ে আগুন লেগে শরী‌রে এক পাশে পা হ‌তে কাঁধ পর্যন্ত পুড়ে যায়। এতদিন ধরে তাকে লতাপাতা দিয়ে কবিরাজি চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল।

জান্নাত আরার জন্মের দু মাস পর তার মা অন্যত্র পালিয়ে যান। তাকে দিনমজুর দাদা মইনুল ইসলামের কাছে রেখে পেটের তাগিদে রিকশাচালক পিতাও চলে যান ঢাকায়। এতদিন ধরে সে দাদার কাছেই প্রতিপালিত হচ্ছিল। পরিবারের দারিদ্র্যতার কারণে তার শীত নিবারণের উপযুক্ত পোশাক ছিল না। তাই প্রায়ই সমবয়সীদের সাথে সে আগুন পোহাতো।

দাদা মইনুল ইসলাম জানান, 'আমরা দিনমজুর বাপু। ঠিকমুতো চাইড্ডে ভাতই পাইনে, জারের পোশাক কিনমু কিবেই! নাতনিডার পুরেন এডা ছিঁড়ে জাম্ফার আছে। ওইডেই পিন্দে আর আগুন তাপায়ে জার ছাড়াইতো। আগুন তাপাতে না গেলে ও তো পুড়ত না। ইউএনও স্যার খবর পাঠাইছিল, গেলে টেহাপয়সা দিয়ে মমিসিং হাসপাতালো পাঠাইছে। কইছে তিনি আরও দিবো।'

এ বিষয়ে ইউএনও মুনমুন জাহান লিজা জানান, স্থানীয় এক ব্যক্তি সামা‌জিক যোগা‌যোগ মাধ‌্যম ফেসবু‌কে তার ব্যক্তিগত আইডিতে জান্নাতের অবস্থা বর্ণনা করে সহযোগিতা চান। স্ট্যাটাসটি আমার নজরে পড়ে। আমি জান্নাতের পরিবারকে খবর পাঠাই। তারা এলে জান্নাতের অবস্থার অবনতি দেখে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছি। আমার ব্যক্তিগত সহযোগিতা ছাড়াও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তার চিকিৎসার জন্য আর্থিক সহায়তা করা হয়েছে।'

(আরআর/এসপি/জানুয়ারি ২৮, ২০২১)