রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : টেকনাফ থানার ভূয়া গ্রেপ্তারি পরোয়ানায় ছেলেকে গ্রেপ্তার করানো, দুই ছেলের নামে মিথ্যা চাঁদাবাজির মামলা দিয়ে হয়রানি, জমিসহ কোটি টাকার গোডাউন ঘর জবরদখলে ব্যর্থ হয়ে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের এক ব্যবসায়ীকে স্বপরিবারে ভারতে পাঠানোর হুমকির অভিযোগে দায়েরকৃত মামলায় ছয় আসামী জামিন লাভ করেছে। বৃহস্পতিবার তারা সাতক্ষীরার আমলী আদালত-৭ এ হাজির হয়ে আবেদন করলে বিচারক ইয়াসমিন নাহার তাদের জামিন মঞ্জুর করেন।

আসামীরা হলেন, সাতক্ষীরারার দেবহাটা উপজেলার পারুলিয়ার কুরবান গাজীর ছেলে নূর আমিন গাজী (৫৮), একই গ্রামের এনায়েত উল্লাহের ছেলে শেখ আবুল হোসেন (৭০), ছেলে শেখ এমদাদুল পলাশ (৩৫), আবুল হোসেনের শ্যালক সাতক্ষীরা সদরের থানাঘাটার মেহেদী হাসান উত্তম (৪০), দক্ষিণ পারুলিয়ার মাহমুদ গাজীর ছেলে সাইফুজ্জামান প্রিন্স (৩৭) ও নূর মোহাম্মদ পুটুর ছেলে রুবেল হোসেন (২৪)।

মামলার বিবরণে জানা যায়, দেবহাটার পারুলিয়া গ্রামের ব্যবসায়ী তপন বিশ্বাসের কাছ থেকে জমি কিনলেও একই এলাকার শেখ আবুল হোসেন । পরবর্তীতে রেকর্ডে কারচুপি করে তপন বিশ্বাসের বসতবাড়ি সংলগ্ন কোটি টাকার গোডাউন ঘর দখল করতে মামলা করেন শেখ আবুল হোসেন। ওই গোডাউন ঘরটি পলাশপোলের মাহবুব বিশ্বাস দীর্ঘদিন তপন বিশ্বাসের কাছ থেকে ভাড়া নিলেও মাহবুব বিশ্বাসের কাছের লোক হিসেবে ওই গুদামঘরে ব্যবসা করে এক সময়কার বিএনপি’র সক্রিয় কর্মী সাইকেল হেলিকপ্টার ছিনতাই মামলার আসামী নূর আমিন গাজী।

নূর আমিন গাজীর পরামর্শে আবুল হোসেন ওই গুদামঘর দখলের চেষ্টা করেন। এ ছাড়া তপন বিশ্বাসের ছেলে অনুপকে ২০১৫ সালে টেকনাফ থানার একটি ভুয়া গ্রেপ্তারি পরোয়ানায় জেল খাটানো হয়। তাছাড়া অনুপ ও অরুপকে পৃথক দু’টি চাঁদাবাজির মামলা দেওয়া হয়। অনুপের মোটর সাইকেলে ইয়াবা বড়ি রেখে ডিবি পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে দেওয়াসহ বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হয়। হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ি গুদামঘরের সামনে টানিয়ে দেওয়া নোটিশ বোর্ড ভেঙে দেওয়া হয়। ভাঙচুরে বাধা দেওয়ায় তপন বিশ্বাস ও তার পরিবারের সদস্যদের ভারতে পাঠিয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। এসব নিয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন থেকে তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। যাতে মামলায় উল্লেখিত ছয়জনসহ কয়েকজন তপন বিশ্বাসের উপর নিপীড়ন ও নির্যাতনের জন্য দায়ী করা হয়।

সর্বপরি ওইসব আসামীদের দারা তপন বিশ্বাস ২৫ লাখ টাকা ক্ষতিগ্রস্ত হন । সম্পদ জবরদখল, মিথ্যা মামলায় হয়রানি, সম্মানহানি ও হুমকি ধামকির ঘটনায় ২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে তপন বিশ্বাস বাদি হয়ে উপরোক্ত ছয় জনের নাম উল্লেখ করে আদালতে মামলা (সিআরপি-১২/১৯ নং) দায়ের করেন। আদালতের নির্দেশে তদন্ত করে ওই বছরের ১২ মে প্রতিবেদন দাখিল করেন দেবহাটা থানার তদন্ত ওসি উজ্জ্বল কুমার মৈত্র। শমন পেয়ে আসামীরা বাদির সঙ্গে মীমাংসা করে নেবে এমন আশ্বাস দিলে ২০১৯ সালের ২৭ আগষ্ট মামলা(সিআর-৫৫/১৯) প্রত্যাহার করে নেন তপন বিশ্বাস। কিন্তু মীমাংসা না করায় তপন বিশ্বাস গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর ওই মামলা পূণঃরুজ্জীবিত(১০৩/২০) করলে আদালতের শমন পেয়ে তারা বৃহষ্পতিবার আদালতে হাজির হন।

(আরকে/এসপি/জানুয়ারি ২৮, ২০২১)