নওগাঁ প্রতিনিধি : নওগাঁর মান্দা উপজেলার মৈনম গ্রামের বাসিন্দা বিষ্ণুপদ কবিরাজ। তার স্ত্রী বর্ষা রানি কবিরাজ। বিষ্ণু-বর্ষা দম্পতির কৃষি জমি নেই। তাদের আয়ের প্রধান উৎস গবাদিপশু পালন। এ দম্পতির একমাত্র মেয়ে তিশি রানি কবিরাজ মৈনম বালিকা বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী। 

কৃষি জমি না থাকলেও গবাদিপশু পালন করে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন এ দম্পতি। উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের সহযোগিতায় ১৩টি ছাগল ও ৫টি গরু পালন করছেন তারা। ৫টি গরুর মধ্যে ৩টি গাভী দুধ দিচ্ছে। বিষ্ণুপদ কবিরাজ একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ি। নিয়মিত দুধ বিক্রি ও ক্ষুদ্র ব্যবসার আয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে চলছে এই দম্পতির সংসার।

খামারি বর্ষা রানি কবিরাজ জানান, এক সময় তাদের সংসারে অভাব-অনটন লেগেই থাকত। কিন্তু উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের পরামর্শে তারা গরু-ছাগল পালন শুরু করেন। এখন ভালোভাবেই চলছে তাদের সংসার। একমাত্র মেয়ে তিশি রানিকে উচ্চ শিক্ষিত করতে চান তারা। এ দম্পতির মতো অনেক পরিবার গবাদিপশু পালন করে এখন স্বাবলম্বী হওয়া স্বপ্ন দেখছেন।

এদিকে মান্দা উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর খামারিসহ গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগি পালনকারীদের বিভিন্ন ধরণের সেবা দিয়ে গত একবছরে রাজস্ব আয় করেছে ১৪ লাখ ৬১ হাজার ৩১৫ টাকা। এ রাজস্ব আয় বিগত বছরগুলোর তুলনায় অনন্য রেকর্ড।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর সূত্র জানায়, মহামারি করোনা ভাইরাসের মধ্যেও বিভিন্ন সেবা প্রদান করছে উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর। এ দপ্তরের সার্বিক তত্ত্বাবধানে মৈনম ইউনিয়নের ললিতপুর গ্রামকে ‘মডেল প্রাণিসম্পদ গ্রাম’ হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। এ গ্রামে নিয়মিত সবধরণের সেবা প্রদান করছেন এ দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারিরা। বিভিন্ন ধরনের সেবার মাধ্যমে গত একবছরে রেকর্ড পরিমাণ রাজস্ব আয় করেছে এ দপ্তর।

সূত্রটি আরও জানায়, করোনার ঝুঁকি মাথায় নিয়ে প্রাণিসম্পদ দপ্তরের চিকিৎসকসহ কর্মকর্তা-কর্মচারিরা সেবাপ্রদান কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন। গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির রোগ প্রতিরোধে টিকা প্রদান, গবাদিপশুর চিকিৎসাসেবা, গবাদি পশু পাখির রোগ অনুসন্ধানে নমুনা সংগ্রহ ও গবেষণাগারে প্রেরণ, গাভীর কৃত্রিম প্রজনন কার্যক্রম, ফ্রি ভেটেরিনারি মেডিকেল ক্যাম্প পরিচালনা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ ছাড়া খামারিদের প্রশিক্ষণ, স্থায়ী ঘাস চাষ প্রশিক্ষণ, খামার, ফিডমিল ও হ্যাচারি পরিদর্শন, গবাদিপশু ও পোল্ট্রি খামার রেজিস্ট্রেশন, মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. অভিমুন্য চন্দ্র জানান, করোনা ভাইরাসের ঝুঁকি মাথায় নিয়ে উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ সব ধরনের সেবা প্রদান কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। উপজেলার মৈনম ইউনিয়নের ললিতপুরে গড়ে তোলা হয়েছে ‘মডেল প্রাণিসম্পদ গ্রাম’। সেখানে সবধণের সেবা ও পরামর্শ প্রদান করছেন এ বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারিরা।

তিনি আরও বলেন, ২০২০ সালে টিকা বিক্রি, কৃত্রিম প্রজনন, খামার রেজিস্ট্রেশন, ফিডপ্রিমিক্স বিক্রেতা, ভেটেরিনারি ওধুষ বিক্রেতা, গবাদিগশু ও পাখির খাদ্য বিক্রেতা, বাচ্চা মুরগি বিক্রেতার লাইসেন্স প্রদান ও নবায়নসহ বিভিন্ন সেবা প্রদানের মাধ্যমে এ বিভাগ গত একবছরে ১৪ লাখ ৬১ হাজার ৩১৫ টাকা রাজস্ব আয় করেছে। বর্তমানে বার্ডফ্লু বিষয়ে পোল্ট্রি খামারিদের সচেতনতামুলক পরামর্শ প্রদান কার্যক্রম চালানো হচ্ছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।

(বিএস/এসপি/জানুয়ারি ৩১, ২০২১)