রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার চাম্পাফুল আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র মাধ্যমিক বিদ্যাপীঠের দু’জন অভিভাবক সোলে সূত্রে দেঃ ১২/১৫ মামলা প্রত্যাহার করে নিলেও ম্যানেজিং কমিটি গত বছরের ২৮ নভেম্বর মিটিং এ শিক্ষক আব্দুল হাকিমের নিয়োগ বাতিল ও নতুন নিয়োগপত্র গ্রহণ না করায় ওই শিক্ষক দালিলিকভাবে আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদে অধিষ্ঠিত নন উল্লেখ করে বাদিপক্ষের মামলা খারিজ করে দেওয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার সাতক্ষীরার যুগ্ম জজ -২ আদালতের বিচারক ফারুক ইকবাল এ আদেশ দেন।

চাম্পাফুল আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র মাধ্যমিক বিদ্যাপীঠ সূত্রে জানা গেছে ,২০১৫ সালের ১২ ফেব্র“য়ারি অনিয়ম ও দূর্ণীতির মাধ্যমে অনুষ্ঠিত নিয়োগ পরীক্ষায় আব্দুল হাকিমকে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগে অভিভাবক আশাশুনির গোদাড়া গ্রামের আবুল কালাম ও বাটরা গ্রামের আজিজুল হাকিম নিয়োগ বোর্ডের পাঁচজন সদস্যসহ ১৮ জনের নামে সাতক্ষীরা যুগ্ম জজ-২য় আদালতে দেঃ ১২/১৫ নং মামলা করেন।

২০১৫ সালের ২০ আগষ্ট মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত আব্দুল হাকিমকে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন থেকে বিরত থাকা ও তার এমপিও না করার জন্য বিবাদীপক্ষকে আদেশ দেন বিচারক রিপতি কুমার বিশ্বাস। এ আদেশের বিরুদ্ধে বিবাদীপক্ষ(ম্যানেজিং কমিটি) আপিল করে জেলা ও দায়রা জজ আদালত ও মহামামন্য হাইকোর্ট হেরে যাওয়ার পর গত বছরের ৩০ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্টে লিভ টু আপিল করলে আপনা আপনি খারিজ হয়ে যায়।

এ দীর্ঘ সময়ে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির আহবায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন কালিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।

সূত্রটি আরো জানায়, আবুল কালাম ও আজিজুল হাকিম বিবাদীপক্ষের সঙ্গে সমঝোতা করলে সাতক্ষীরার যুগ্ম জেলা জজ ২য় আদালতে সোলে মূলে মামলা খারিজ হয়ে যায় গত বছরের ২৪ আগষ্ট। ৩১ আগষ্ট আব্দুল হাকিম প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদানের জন্য বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির আহবায়ক বরাবর আবেদন করেন। আহবায়ক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোজাম্মল হক রাসেল গত বছরের ১২ নভেম্বর এনআরসি কর্তৃক নিয়োগ প্রক্রিয়ার কথা বলেন।

একইভাবে তিনি গত ২৫ নভেম্বর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানকে আহবায়ক কমিটির মেয়াদ বাড়ানো বা বিশেষ কমিটি গঠণের অনুরোধ করেন। একইভাবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আইনজীবীর মতামত চাইলে গত বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর অ্যাড. আবুল হোসেন(২) ও ২৮ সেপ্টেম্বর অ্যাড. সোমনাথ ব্যাণার্জী তাদের পৃথক মতামতে বলেন যে, নিম্ন আদালত থেকে বাদিদ্বয় মামলা তুলে নিলেও হাইকোর্ট ও বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট উক্ত অবজারভেশন বাতিল বা প্রত্যাখান করেন নাই। সেক্ষেত্রে আব্দুল হাকিমের নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল হওয়ায় তার নিয়োগপত্র বাতিল।

গত বছরের ২৮ নভেম্বর বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের এক সভায় আব্দুল হাকিমের নিয়োগ অবৈধ বলে ঘোষণা করা হয়। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে (রাজস্ব) সভাপতি করে নিয়োগ প্রদানের ক্ষমতা সম্পন্ন করা, নির্বাচিত কমিটির হাতে যাতে প্রধান শিক্ষক ও সহকারি প্রধান শিক্ষক নিয়োগের ক্ষমতা না যায় সেজন্য বিদ্যালয় পরিচালনার আহবায়ক কমিটির মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব রাখা হয়। এ ছাড়া আব্দুল হাকিমের এমপিও বাতিলের জন্য ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক উদয় ভাস্কর বন্দোপাধ্যায়কে দায়িত্ব দেওয়া হয়।

এমতাবস্থায় গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর আহবায়ক কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে চেয়ার দখলের জন্য শিক্ষক আব্দুল হাকিমের নেতৃত্বে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক নীল কণ্ঠ সোম, গোদাড়ার নজরুল গাইন, তার ছেলে ফরহাদ ওরফে নয়ন ও ইয়াছিন আলীসহ কয়েকজন সোমবার ওই বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক উদয় ভাস্কর বন্দোপাধ্যায় এর উপর গত ২১ ডিসেম্বর হামলা চালানো হয়। উদয় ভাস্কর বন্দোপাধ্যায়ের কাছে থাকা রেজুলেশন খাতা, ক্যাশ খাতা ও ড্রয়ারের চাবিসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্র কেড়ে নিয়ে রুম থেকে বের করে দেওয়া হয়।

এ ঘটনায় ওই শিক্ষক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, জেলা শিক্ষা অফিসার, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেন। যদিও আব্দুল হাকিম ২০১৫ সালের ১৬ ফেব্র“য়ারি প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পওয়া ও হামলার কথা অস্বীকার করে যশোর শিক্ষা বোর্ডের চেযরাম্যান আলম ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের পরামর্শ করেই ২১ ডিসেম্বর তার চেয়ারে বসেছেন বলে দাবি করেন।

এমন এক পরিস্থিতিতে আব্দুল হাকিমের জোরপূর্বক প্রধান শিক্ষকের পদ দখলের বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে ওই বিদ্যালয়ের অভিবাবক মিজানুর রহমান, আব্দুল করিম মোড়ল ও শেখ আলতাফ হোসেন গত ১১ জানুয়ারি সাতক্ষীরার যুগ্ম জজ -২য় আদালতে দেওয়ানী ৭/২১ মামলা দায়ের করেন। ২০ জানুয়ারি শুনানী শেষে আদালত উপরোক্ত রায় দেন।

তিনজন অভিভাবকের দায়েরকৃত দেঃ৭/২১ মামলাটি খারিজের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাড. আবুল হোসেন(২)।

(আরকে/এসপি/ফেব্রুয়ারি ০২, ২০২১)