ময়মনসিংহ প্রতিনিধি : বর্ষায় ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করেছে ব্রহ্মপুত্র নদ। ব্রহ্মপুত্রের অব্যাহত ভাঙ্গনে বিলীন হয়ে যাচ্ছে ময়মনসিংহের গৌরীপুর ও ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার ১০টি গ্রামের শতাধিক ঘরবাড়ি। এদের মধ্যে গৌরীপুর উপজেলার চরাঞ্চলের ভাংনামারী ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্র ঘেঁষা ভাটিপাড়া, উজান কাশিয়ার চর, খোদাবক্সপুর, বয়রা ও দূর্বাচর গ্রামে ৬০টি পরিবারের ঘরবাড়িসহ বিলীন হয়ে গেছে কয়েক শ একর ফসলি জমি ও রাস্তাঘাট।

এদিকে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার উছাখিলা ইউনিয়নের মরিচারচর নামাপাড়া, নয়া বাজার-কালিবাজার গ্রামটিও নিশ্চিহ্ন হতে চলেছে। ইতোমধ্যে, নদীগর্ভে আটটি বাড়ি পুরোপুরি বিলীন হয়ে গেছে। ব্রহ্মপুত্রের ভেতরে চলে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে আরো ২৩টি বাড়ির। এতে করে গৃহহীন হয়ে পড়েছে প্রায় ৫০টি পরিবার। বসতভিটা হারিয়ে অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটছে এসব পরিবারের সদস্যদের।
গ্রামবাসীর অভিযোগ, ভাঙন রোধে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা এবং প্রশাসনের লোকজন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না।
জানা গেছে, গত নয়দিনের টানা বর্ষণে উপজেলার মরিচারচরসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় ব্রহ্মপুত্রে ভাঙন দেখা দেয়। ভাঙন আতঙ্কে নিরূপায় হয়ে অনেক পরিবার তাদের ঘরবাড়ি অন্যখানে সরিয়ে নিচ্ছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, টানা নয়দিনের প্রবল বর্ষণে ব্রক্ষপুত্র নদের ভাঙ্গনে বিলীন হয়ে গেছে ভাংনামারী ইউনিয়নের পূর্ব ও পশ্চিম ভাটিপাড়া গ্রামের অধিকাংশ বাড়িঘর। গত বছর বহ্মপুত্রের ভাঙনে বিলীন হয়ে যায় ওই এলাকার বেশীর ভাগ অঞ্চল। ওই দুই গ্রামের প্রায় শতাধিক লোক এখন পরিবার পরিজন নিয়ে আত্বীয় স্বজনদের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। আবার কোন কোন পরিবার কাজের সন্ধানে দেশের বিভিন্ন এলাকায় চলে গেছেন।
গ্রামবাসীরা জানান আরও সাত বছর আগে থেকেই বহ্মপুত্রের এই ভাঙন শুরু হলেও বিগত দুই বছরে তা ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। গত দুই বছরে ইউনিয়নের বয়ড়া বাজার হতে খোদাব∙পুর এলাকার প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকার মানুষ ভাঙনের কবলে পড়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ২০১২ সালে ভাঙনে শিকার হয়ে ১০টি পরিবার গ্রাম ছেড়ে চলে গেছে। অনেক পরিবার ফসলের জমি হারিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। কিন্তু তারপরও ভাঙন কবলিত মানুষ কোন সরকারি সাহয্য পায়নি। গত বুধবার সরেজমিনে দেখা গেছে, পশ্চিম ভাটিপাড়া ও পূর্ব ভাটিপাড় গ্রাম দুটি লোকশূন্য। নদীর তীরে গিয়ে পাওয়া যায় সাদ্দাম হোসেন নামের এক ব্যক্তিকে। তিনি জানান, ভাংনামারী ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্রঘেঁষা ভাটিপাড়া, উজান কাশিয়ার চর, খোদাবক্সপুর, বয়রা ও দূর্বাচর গ্রামে ভাঙন শুরু হয়েছে। এরই মধ্যেই ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে কয়েক শ একর জমিসহ রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি এবং ফলের বাগান। পশ্চিম ভাটিপাড়া গ্রামের একটি মসজিদ গত বছর নদীভাঙনে বিলীন হয়ে যায়। এরপর নদী ঘেঁষে আবারও মসজিদ বানানো হয়েছে। মসজিদটি আবারও নদীগর্ভে চলে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে ভাটিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টিও।
ভাংনামারী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো : ফজলুল হক জানান, অব্যাহত টানা বর্ষণে পানি বেড়ে যাওয়ায় ভাটিপাড়া এলাকার বহু বাড়িঘর পানির নীচে তলিয়ে গেছে। বিষয়টি স্থানীয় সাংসদ, ইউএনও এবং উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকে জানানো হয়েছে।
ব্রহ্মপুত্র ভয়ঙ্কর থাবা বসিয়েছে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার উছাখিলা মরিচারচর-নামাপাড়া-নয়া বাজার-কালিবাজার রাস্তা সংলগ্ন বাড়িগুলোতে। এখানে যারা বসতি গড়েছিলেন, সর্বনাশা ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে তাদের আশ্রয়হীন হতে হচ্ছে।
পাউবোর ময়মনসিংহ কার্যালয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী ইউনুস আলী বলেন, ‘আমি তিন মাস আগে ময়মনসিংহে এসেছি। তাই গৌরীপুর উপজেলার নদীভাঙনের বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে স্থানীয় সাংসদ বা অন্য কোনো জনপ্রতিনিধির সুপারিশ থাকলে বাধ নির্মাণ করা সম্ভব।’
(এসইএস/এএস/আগস্ট ২৪, ২০১৪)