নওগাঁ প্রতিনিধি : নওগাঁ জেলার বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে সবুজের সমারোহ। সমুদ্রের ছোট ছোট ঢেউয়ের মতো দোল খাচ্ছে গমগাছের সবুজ পাতাগুলো। আর এমন সবুজ সমুদ্রের ঢেউয়ে দুলে উঠছে কৃষকের স্বপ্ন। কয়েক সপ্তাহ পরেই সবুজ গাছগুলো সোনালী বর্ণ ধারণ করবে। এক সময় যেসব জমিতে ধান চাষ করা হতো, এখন সেসব জমিতে গম চাষ করছেন কৃষকরা। তেমন একটা রোগবালাই না থাকায় চলতি মৌসুমে বাম্পার ফলনের আশা করছেন গম চাষিরা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় জেলার কৃষি ব্যবস্থায় ঘটছে পরিবর্তন। উন্নত জাত এবং অর্থকরী স্বল্প সময়ের ফসলের প্রতি ঝুঁকছেন কৃষকরা। অন্যদিকে কম মুনাফা ও ঝামেলাযুক্ত ফসলের চাষ পাচ্ছে হ্রাস।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এ বছর রেকর্ড পরিমাণ জমিতে উন্নত জাতের গম চাষ করেছেন কৃষকরা। গত কয়েক বছর থেকে বাম্পার ফলন ও অধিক লাভজনক হওয়ায় কৃষকরা ‘বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট’ উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল (উফশী) জাতের গম চাষ করছেন। কম সেচে অধিক ফসল উৎপাদনসহ রোগ-বালাইয়ের আক্রমণ কম হওয়ায় গম চাষে উৎপাদন ব্যয় কম এবং বাজারে গমের দামও ভাল। কম খরচে অধিক আয়ের লক্ষে গম আবাদে ঝুঁকছেন কৃষকরা ।

বোরো ধানের চেয়ে গম চাষে রাসায়নিক সারের ব্যবহার কম হওয়ায় কৃষকের বিনিয়োগ কম, আয় বেশি। বারি- ২৫, ২৬, ২৮, ৩০, ৩১, প্রদীপ, বিজয় ও শতাব্দী জাতের গমে পোকার আক্রমণ কম হয়। আর তুলনামূলকভাবে অন্য জাতের চেয়ে এসব জাতের গম চাষে উৎপাদন ব্যয় কম। ফলে কৃষকরা এসব জাতের গম চাষ করে বেশি লাভবান হচ্ছেন বলে মনে করছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তরা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাদেবপুর উপজেলা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছ, উপজেলার ১০ টি ইউনিয়নে এবার গম চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৫০ হেক্টর। সেখানে আবাদ হয়েছে ৫৬০ হেক্টর জমিতে। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১০ হেক্টর বেশি। গম চাষ বৃদ্ধির লক্ষ্যে কৃষি বিভাগ প্রণোদনা হিসেবে বিনামূল্যে ৪০০ জন কৃষককে ২০ কেজি করে উন্নত জাতের বীজ, ২০ কেজি করে ডিএপি (ডাই-অ্যামোনিয়াম ফসফেট) ও ১০ কেজি এমওপি (মিউরেট অফ পটাশ) সার সরবরাহ করেছেন।

উপজেলার নাটশাল গ্রামের কৃষক সত্যেন কুমার বলেন, ‘গত বছর ৬ বিঘা জমি থেকে তিনি ১৫০ মণ গম ঘরে তুলেছিলেন। প্রতি মণ গম এক হাজার টাকা করে বিক্রি করে লাভের মুখ দেখতে পাওয়ায় এ বছরও ধানের জমিতে গম চাষ করেছেন।’ একই গ্রামের কৃষক ফরিদুল ইসলাম বলেন, ‘মাঠজুড়ে ফুটে ওঠা গমের শীষ দেখে মনে হচ্ছে গত বছরের মতো এ বছরও বাম্পার ফলন হবে।’

মহাদেবপুর উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ অরুন চন্দ্র রায় বলেন, ‘এবার আবহাওয়া গম উৎপাদনের অনুকূলে। এ ছাড়া কোনো রোগবালাইয়ের আক্রমণ ঘটেনি। ফলে উৎপাদন ভালো হবে। আশা করা যাচ্ছে, লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক বেশি গম পাওয়া যাবে।

তিনি বলেন, কৃষকরা যেন গম চাষে কোন প্রকার সমস্যায় না পড়েন এ জন্য আমরা সার্বক্ষণিক নজর রাখছি। কৃষি বিভাগ কৃষকদের পাশে থেকে নানা পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে।’

(বিএস/এসপি/ফেব্রুয়ারি ০৪, ২০২১)