শিতাংশু গুহ


২৬শে জানুয়ারি ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসে দিল্লির রাজপথে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর প্যারেড একটি চমৎকার ঘটনা। মুক্তিযুদ্ধের পঞ্চাশ বছর পূর্তি’র সন্মান হিসাবে ভারত বাংলাদেশকে এ সন্মান জানায়। সেখানে সামরিক ব্যান্ডে পরিবেশিত হয় মুক্তিযুদ্ধকালীন স্মরণীয় সঙ্গীত, ‘শুন একটি মজিবরের থেকে --’ এবং ধারা বর্ণনায় বলা হয়, ‘টুগেদার উই ফট, টুগেদার উই ওয়ান’। এজন্যেই হয়তো ভারত মহান, মানবিক দেশ। বিশ্বের প্রায় ষাট ভাগ ভ্যাকসিন ভারতে উৎপাদিত হয়, হয়তো এজন্যে করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে সংগ্রামে জাতিসংঘ ভারতকে ‘বিশ্ব ফার্মেসী’ উপাধি দিয়েছে। ভারত পাকিস্তানকে বিনামূল্যে ১কোটি ৭০ লক্ষ কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন দিলো। আশপাশের সবগুলো দেশ ভারতের টিকা পেলো। ঢাকার অদূরে ‘গণস্বাস্থ্য’ প্রকল্পের পরিচালক ডাঃ জাফরুল্লাহ ভারতীয় টীকার কট্টর সমালোচক ছিলেন, শেষমেষ তিনিও ভারতীয় টিকা নিয়েছেন!

ক্যালিফোর্নিয়ার ডাভিসে দুস্কৃতিকারী গান্ধীর ভাস্কর্য ভেঙ্গেছে। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ভারতীয় বংশোদ্ভুত ডাক্তার পৃত্তিশ গান্ধীকে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি’র চিফ মেডিকেল অফিসার নিয়োগ দিয়েছেন। এক গান্ধী ভূপাতিত, অন্য গান্ধী রাজভবনে? বাইডেন প্রশাসনে এবার ভারতীয়দের ছড়াছড়ি। ট্রাম্প-মোদী সম্পর্ক ভালোই ছিলো, কমলা দেবী ভারত সম্পর্কে যথেষ্ট জ্ঞান রাখেন, বহুবার তিনি ভারত সফর করেছেন, অতীতে ভারত সম্পর্কে এতটা স্বচ্ছ ধারণা প্রেসিডেন্ট বা ভাইস-প্রেসিডেন্ট কারো কখনোই ছিলোনা, হয়তো বাইডেন প্রশাসনের সাথে ভারতের সম্পর্ক আরো সুউচ্চ পর্যায়ে পৌঁছবে। মঙ্গলবার সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইম্পিচমেন্ট বিচার শুরু হচ্ছে। বাইডেন ক্ষমতায় দু’সপ্তাহ, এরমধ্যে বিশ্ব পরিমণ্ডলে দু’টি বড় ঘটনা ঘটেছে, এক, দিল্লীতে ইসরাইলী দূতাবাসে বিস্ফোরণ; দুই, মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থান।

(২)

ক’দিন আগে রানা দাশগুপ্ত বলেছেন, ‘সংসদে ১৯জন সংখ্যালঘু এমপি আছেন, তাঁরা কেউ সংখ্যালঘু’র পক্ষে কথা বলেন না’! মঙ্গলবার ২রা জানুয়ারী ২০২১ সাংসদ মনোরঞ্জন শীল গোপাল সেই রেকর্ড ভেঙ্গেছেন। দিনাজপুরের চিরিরবন্দরে প্রতিমা ভাঙ্গার বিচার চেয়েছেন, সাথে হিন্দু কল্যাণ ট্রাস্ট্রকে হিন্দু ফাউন্ডেশনে রূপান্তরিত কথা প্রস্তাব এনেছেন। তাকে ধন্যবাদ। পহেলা নভেম্বর ২০২০ কুমিল্লায় তৌহিদী জনতা সাম্প্রদায়িক তান্ডব সৃষ্টি করে, সাংসদ এরোমা দত্ত চুপ ছিলেন, কথা বলেননি? স্বরসতী পূজার দিন পরীক্ষা বন্ধের দাবীতে আন্দোলনরত হিন্দু শিক্ষার্থীদের পক্ষে সংসদে কথা বলেছেন পংকজ দেবনাথ, রটনা আছে, এজন্যে তিনি কিছুটা কোনঠাসা?

কেন কথা বলেন না এমত প্রশ্নের জবাবে তাদের যুক্তি হচ্ছে তাঁরা সংখ্যালঘু’র এমপি নন, দলীয় এমপি! দলীয় সাংসদ নিজের সম্প্রদায়ের পক্ষে কথা বলতে পারবেন না একথা কি কোথাও লেখা আছে? দলের ভেতর থেকে হয়তো বিপ্লব করা যায়না, কথা বলা যায়, প্রধানমন্ত্রী কাছে আবেদন করা যায়, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাথে দেখা যায়, আরো কত কি করা যায়! কথা বলা উচিত, কথার শক্তি অনেক। এটা হয়তো সত্য, কথা বললে বিরাগভাজন হবার সম্ভবনা থাকে, না বললে জনগণ মূল্য দেয়না! সুধাংশু শেখর হালদার সংখ্যালঘুর পক্ষে কথা বলেছেন, মন্ত্রী হননি। সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত কথা বলেছেন, মন্ত্রী হয়েছেন, টিকতে পারেননি? যেসব এলাকায় সংখ্যালঘু নির্যাতন হয়, ধর্মাধর্ম নির্বিশেষে তথাকার এমপি’র কথা বলা দরকার। সচরাচর তাঁরা কথা বলেন না, এমপি’র দায়বদ্ধতা থাকলে অত্যাচার কমে যেতো।

লেখক : আমেরিকা প্রবাসী।