শেরপুর প্রতিনিধি : ডিজিটালাইজেশনের চমকপ্রদ অভিজ্ঞতার পরিবর্তে চরম ভোগান্তিত পড়েছে শেরপুরের প্রাথমিক শিক্ষকরা। ই-প্রাইমারী স্কুল সিস্টেমে অনলাইনে তথ্য প্রদান করতে গিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটের বৈরী আচরনের শিকার হচ্ছেন। কেবল তাই নয়, অসাধু ইন্টারনেট সেবাদানকারী কিছু প্রতিষ্ঠানের অসাধু ব্যবসার ফাঁদে পড়ে সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়েছেন শিক্ষকরা। ওইসব ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো স্কুলের পাসওয়ার্ড পরিবর্তনের ফলে এমন বিড়ম্বনার শিকার হয়েছেন। কেউ কেউ এ ভোগান্তির নাম দিয়েছেন ‘ডিজিটাল ভোগান্তি’।

ভূক্তভোগী শিক্ষক ও ইন্টারনেট অপারেটরদের সূত্রে জানা গেছে, ই-প্রাইমারী স্কুল সিস্টেমের ওয়েবসাইটে যথাযথভাবে কাজ করা যাচ্ছে না। সাধারণত কোন ওয়েবসাইট বা সফ্টওয়ারে কাজ করতে কোন সমস্যা হলে সেই সমস্যার কারণ এবং করণীয় সম্পর্কে নির্দেশনা সম্বলিত ম্যাসেজ আসে। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী পদক্ষেপ নিয়ে একজন ব্যবহারকারী তার কাজ সমাধা করতে পারে। কিন্তু ই-প্রাইমারী স্কুল সিস্টেমের ওয়েবসাইটে ডাটা এন্ট্রি করতে গেলে কখনও Server Error in '/' Application.আবার কখনওORA-00001: unique constraint (MSRDPE.TBL_TEACHER_INFO_PK) violated query error. ইত্যাদি লেখা দূর্বুদ্ধ সবerror ম্যাসেজ আসে। যা থেকে একজন সাধারণ অপারেটরের কোন কিছুই বুঝার বা করার উপায় নেই। ফলে একজন অপারেটরকে আবার প্রথম থেকে কাজটা শুরু করতে হচ্ছে।
সূত্রগুলো জানায়, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে ই-প্রাইমারী নির্দেশিকা নামে একটি পেইজে প্রয়োজনীয় সাহায্য পাওয়ার জন্য কিছু মোবাইল ফোন নাম্বার দেওয়া আছে। কিন্তু এসব নাম্বারে বারবার ফোন করেও কাউকেই পাওয়া যাচ্ছে না। এভাবে কাজ করতে গিয়ে একটি স্কুলের তথ্য বা একজন শিক্ষকের ডাটা এন্ট্রি করতে যেখানে মাত্র ১৫-২০ মিনিট সময় লাগার কথা, সেখানে কোন কোন ক্ষেত্রে ২/৩ ঘন্টা সময় লেগে যাচ্ছে। ফলে বিড়ম্বনার শিকার হতে হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষকদেরকে।
এদিকে ‘গোদের উপর বিষফোঁড়া’র মত যুক্ত হয়েছে আরেক সমস্যা। অধিকাংশ প্রাথমিক শিক্ষক তাদের ডাটা এন্ট্রি করতে কোন ইন্টারনেট সেবা কেন্দ্রে গিয়ে দেখছেন, তাদের স্কুলের একাউন্ট পাসওয়ার্ড দিয়ে লক্ড করা রয়েছে। শত চেষ্টা করেও একাউন্টে ঢুকতে কিংবা ডাটা এন্ট্রি করতে পারছেন না। পাসওয়ার্ড় পরিবর্তনের অপকর্মের বিষয়ে শেরপুর সদরের শিক্ষকদের সন্দেহের তীর শহরের থানা মোড় এলাকার একটি দোকানের দিকে। সেই দোকানের মালিক আবার শেরপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে কর্মরত বলে অনেক শিক্ষক জানান।
শেরপুর সদর উপজেলার চকসাহাব্দী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গোলাম রববানী জানান, বারবার চেষ্টা করেও একাউন্টে ঢুকতে পারছি না। এক সপ্তাহ ধরে চেষ্টা করছি, আমার স্কুলের ৭ জন শিক্ষকের কারোরই ডাটা এন্ট্রি করতে পারছি না। দারুণ ভোগান্তি হচ্ছে। এদিকে, সময়ও চলে যাচ্ছে। হরিণধরা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জয়নাল আবেদীন বলেন, আমরা এখন ই-প্রাইমারী ডাটা এন্ট্রি নিয়ে ডিজিটাল ভোগান্তিতে পড়েছি। ৬/৭ দিন ধরে বিভিন্ন কম্পিউটারের দোকানে দোকানে ঘুরছি, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। খালিerror ম্যাসেজ আসছে।
উল্লেখ্য, গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ‘ই-প্রাইমারী স্কুল সিস্টেম’ শিরোনামে প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের অনলাইনে ডাটা এন্ট্রি কার্যক্রম শুরু করে। তখন শুধুমাত্র রেজিস্টার্ড স্কুলের তথ্য নেওয়া হয়। গত ফেব্রুয়ারি মাসে শেরপুর সদরের প্রধান শিক্ষকদেরকে অনলাইনে ডাটা এন্ট্রি করার নির্দেশ দেওয়া হয়। এর পরপরই শিক্ষকদের মাঝে কোনভাবে ছড়িয়ে যায়, শুধুমাত্র স্কুলের তথ্য দিলেই চলবে, শিক্ষকদের তথ্য পরে দিতে হবে। সেই অনুযায়ী প্রায় সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক স্ব স্ব স্কুলের তথ্য এবং ছবি উপজেলা রিসোর্স সেন্টারের অপারেটরদের কাছে জমা দেয়। চলতি এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে হঠাৎ করেই নির্দেশ আসে-চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে সকল শিক্ষকের তথ্য অনলাইনে প্রেরণ করতে হবে। তখন থেকেই শিক্ষকরা প্রয়োজনীয় তথ্য নিয়ে শহরের কম্পিউটার/ইন্টারনেট দোকানগুলোতে ভিড় করতে থাকেন। কিন্তু কাজের কাজ না হওয়ায় তারা ভোগান্তি পোহাচ্ছেন।
এ ব্যপারে জানার জন্য শেরপুর সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসার আব্দুল্লাহ আল বাকীর মোবাইলে ফোন করলে অনলাইনে ডাটা এন্ট্রির কথা শুনেই ব্যস্ত আছি বলে লাইন কেটে দেন। পরবর্তীতে আরও কয়েকবার তার মোবাইলে ফোন করা হলে রিং হলেও ফোন রিসিভ করেননি। শেরপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এনামুল হকের মোবাইল ফোনে কল করলে তিনি ঢাকায় মিটিংয়ে ব্যস্ত রয়েছেন বলে জানিয়ে শেরপুর ফিরে বিষয়টি তিনি দেখবেন বলে জানান।
(এইচবি/এএস/এপ্রিল ২০, ২০১৪)