নাটোর প্রতিনিধি : সৌন্দর্য বৃদ্ধির অজুহাতে জেলার ঐতিহ্যবাহি জয়কালি দিঘির পাড়ের পাঁচ শতাধিক গাছপালা কেটেছে নাটোর পৌরসভা । সদর ভূমি অফিসের পাশেই গত বৃহষ্পতিবার থেকে প্রকাশ্যে গাছ হত্যা চলে।

এলাকাবাসীরা জানান, শহরের লালবাজার এলাকায় রাণী ভবানীর রাজবাড়ির চারিপাশে জয়কালি দিঘি রয়েছে। ১৯৯৯ সালে সরকার ৩০ বছরের জন্য দিঘিটি স্থানীয় মাছচাষী গোলাম নবীর কাছে ইজারা দেন। তবে দিঘিটির চারদিকের পাড় ভরাট হয়ে যাওয়ায় আশে পাশের লোকজন অসংখ্য ফলজ ও বনজ গাছগাছড়া লাগায়ে ভোগদখল করে আসছেন। হটাৎ গত বৃহষ্পতিবার সকালে নাটোর পৌরসভার শ্রমিকরা এসে এসব গাছপালা কাটতে শুরু করে। কাটা গাছপালা পৌরসভার গাড়িতে করে নিয়েও যাওয়া হয়। স্থানীয়দের হিসেব মতে গত কয়েকদিনে দিঘির পূর্ব, পশ্চিম ও উত্তর পাড়ের কিছু অংশ থেকে পাঁচশতাধিক গাছ কাটা হয়েছে। কিছু গাছ সম্পূর্ণ কাটা হয়েছে। বাঁকিগুলোর ডালপালা কেটে মুড়ো করে ফেলা হয়েছে। এতে একদিকে যেমন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নষ্ট হয়েছে, তেমনি যারা গাছগুলো লাগিয়েছেন তাঁদের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। এলাকাবাসী নিষেধ করলেও শ্রমীকরা গাছ কাটা বন্ধ রাখেনি। দিঘির পাড়ে অবস্থিত সদর উপজেলা ভূমি অফিসের কর্মকর্তারাও গাছগুলো রক্ষায় এগিয়ে আসেননি। পরে এলাকাবাসীর কাছে খবর পেয়ে জেলা প্রশাসক পৌর মেয়রকে গাছ কাটা বন্ধ রাখতে বলেন। ফলে রোববার সকালে গাছ কাটা বন্ধ হয়।

পাড়ের বাসিন্দা নিমাই তালুকদার বলেন, জমি সরকারের হলেও আমরা অনেক কষ্ট করে গাছপালা লাগিয়ে বড় করেছি। গাছপালা ঠিক রেখেও এখানকার উন্নয়ন করা যায়। তাছাড়া গাছগুলো কাটার আগে আমাদের তো বলার দরকার ছিল। সমীর বাগচী বলেন, উন্নয়নের নামে গাছগুলো হজম করার চেষ্টা চলছে। দিঘির বর্তমান ইজারাদার গোলাম নবী বলেন, সরকার এই দিঘি উপযুক্ত অর্থের বিনিময়ে আমার কাছে ইজারা দিয়েছে। ত্রিশ বছর শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমাকে না বলে এখানকার গাছ কেটে পৌর মেয়র অন্যায় করেছেন। এ ব্যাপারে সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহীন আখতারের সাথে রোববার দুপুরে গণমাধ্যম কর্মীরা যোগাযোগ করতে গেলে তিনি প্রথমে উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। পরে তিনি বলেন, প্রাথমিক তদন্তে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে। ইতোমধ্যে পৌর কর্তৃপক্ষকে গাছ কাটা বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর পরেও গাছ কাটা হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে পৌর মেয়র শেখ এমদাদুল হক আল মামুনের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, দিঘির পাড়ে প্রতিমা বিসর্জনের একটি ঘাট ও একটি শিশু পার্ক নির্মাণ করা হবে। এই প্রকল্পের জরিপ কাজ শুরু হয়েছে। তাঁদের পরামর্শে কিছু ঝোপঝাড় পরিষ্কার করা হয়েছে। এটা পৌরসভার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। ইজারাদার ও প্রশাসনকে না জানিয়ে সরকারি জমিতে গাছ কাটার কোন অধিকার পৌরসভার আছে কি না জানতে চাইলে বলেন, এখন তো কেবল জরিপ শুরু হয়েছে। তাই জানানো হয়নি। তবে জেলা প্রশাসকের অনুরোধে গাছগাছড়া কাটা বন্ধ রাখা হয়েছে।

জেলা প্রশাসক মশিউর রহমান বলেন, গাছ কাটা বন্ধ করা হয়েছে। সরকারী জমিতে পৌর কর্তৃপক্ষ প্রতিমা বিসর্জনের ঘাট বা শিশু পার্ক নির্মাণ করতে পারে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোন স্থাপনা করতে হলে অবশ্যই জমির মালিকের (সরকার) অনুমতি নিতে হবে।

(এমআর/এটিআর/আগস্ট ২৪, ২০১৪)