শেখ সাদ বীনশরীফ, নড়াইল : শিল্পী এসএম সুলতানের ঘনিষ্ট শিষ্য চিত্র শিল্পী বিমানেশ চন্দ্র বিশ্বাস। নিভৃতে কাজ করা দেশের একজন প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী। পাওয়া না পাওয়ার অনেক গল্প থাকলেও নিজের সবকিছু দিয়ে শিশুদের নিয়ে শিল্পের সাধ মেটাতে চান। গড়ে তুলেছেন “শিল্পাঞ্জলি” নামের শিশুদের ছবি আকার ৫টি অবৈতনিক প্রতিষ্ঠান।এখানে আদিবাসী শিশুরা নিজের মতো করে ছবি আর নকশা আঁকা, খায় আবার বাড়ি চলে যায়। সুবিধা বঞ্চিত এইসব শিশুদের নিয়ে “শিল্পাঞ্জলি” তে তৈরী হচ্ছে ১৬’শ ফুট দীর্ঘ আর ৩ ফুট চওড়া বিশ্বের সবচেয়ে বড় শিশু চিত্র।

শিল্পী বিমানেশের “শিল্পাঞ্জলি” তে গিয়ে দেখা গেল আদিবাসী শিশুরা আপনমনে একে চলেছে ছবি। কখনো পেন্সিলে আবার কখনো রঙ্গে ভরিয়ে তুলছে তার মনের ভাব। শিশুরা মনের আনন্দে বড় কাগজে একে চলেছে ম্যারাথন ছবি। চলছে আদিবাসীসহ একশজন শিশুর আঁকা বিশ্বের সর্ববৃহৎ শিশু-চিত্রাঙ্কনের কাজ। বিশাল দুটি রোল থেকে আর্ট পেপার বের করে দেয়া হয়। যা বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়েছে। এরপর শিশুরা ছবির দুইধার দিয়ে বসে কেউ নতুন ছবি আকছে আবার কেউবা অসমাপ্ত ছবিতে রং করা শুরু করলো।

শিল্পাঞ্জলীতে তখন ছবি আঁকাছে দিঘির পাড় এলাকার আদিবাসি শিশু চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী রুম্পা মালি, শীলা মালি, ২য় শ্রেণির সিপন মালি, শহরের কুড়িগ্রাম এলাকার সপ্তম শ্রেণির ছাত্র অর্পণ, তাবাচ্ছুম, দ্বিতীয় শ্রেণির দৃষ্টি, মোহনাসহ আরো ৩০ জন। শিশুরা নিজের ভাবনায় বিভিন্ন বিষয়ের ওপর ছবি আঁকছে। যেমন- মুক্তিযুদ্ধ, গ্রামীন জীবন, মসজিদ-মন্দির, নৌকাবাইচসহ বিভিন্ন লোকজ উৎসব, বর-কনে, পালকি, রাখাল, কৃষক-শ্রমিক, কম্পিউটার, মোবাইল টাওয়ার, মাছ শিকার, ঈদের নামাজ ইত্যাদি।

এরপর দুপুরে খেয়ে আবার শুরু করছে আকা। নিজের মনে মতো আঁকা ছবিতে আবার মনের মতো করে রং করে চলেছে। শিশুদের ছবি আঁকা শেখানোয় সাহায্য করেন একমাত্র সন্তান ভারতের রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পেইন্টিং বিভাগে মাস্টার্স করা হীরা বিশ্বাস, নড়াইলের এস.এম সুলতান বেঙ্গল চারুকলা মহাবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অন্তরা বৈরাগী ও সৌমিত্র মোস্তবী।

অ্যামেরিকান কার্তিস পেপারে ২০১৬ সালের ২ ডিসেম্বর থেকে প্রায় ৩ বছর ধরে শিল্পী বিমানেশ বিশ্বাসের শিল্পাঞ্জলী তে সপ্তাহের শুক্র ও শনিবার এ ছবি আঁকা চলছে। প্রায় দুই শতাধিক শিশু শিল্পীকার্তিজ পেপারে মোম রং-এর মাধ্যমে তৈরী হচ্ছে শিশুদের আকা সর্বদীর্ঘ ছবি। যারআয়তন (১৬০০ ফুটী ৩ ফুট)= ৪৮০০ বর্গফুট।

সেই ছবির ডিজিটাল প্রিন্ট এখন নড়াইল ও যশোরের বিভিন্ন গ্রামের স্কুলে স্কুলে ভ্রাম্যমান প্রদর্শনী করে দেখানো হচ্ছে। এ পর্যন্ত ২৪টি স্কুলে চিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়েছে। আগামী ডিসেম্বরে বৃহৎ এই ছবির প্রদর্শনী করা হবে বলে শিল্পী বিমানেশ জানান।যা গিনেস বুক অফ ওয়াল্ড রেকর্ড এ স্থান পাওয়ার সম্ভাবনা আছে।

(ওএস/এসপি/ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২১)