লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি : লক্ষ্মীপুরে ব্যতিক্রমী এক অনুষ্ঠানে ভিক্ষুক তিন মাকে অতিথি করা হয়েছে। সোমবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে শহরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে `মেঘ ফাউন্ডেশন’ নামে একটি সংগঠন এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

‘মায়ের ভাষায় মাকে লিখি’ চিঠি লেখা প্রতিযোগিতার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিন মাকে ফুল দিয়ে বরণ করেন আয়োজক কমিটির সদস্যরা। পরে তাদের হাতে সন্তানদের জন্য শিক্ষা উপকরণ তুলে দেয়া হয়।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন ৬৫ বছর বয়সী রহিমা বেগম। বিয়ে হলেও স্বামী ছেড়ে চলে গেছেন। এরপর আর বিয়ে করেননি তিনি। বৃদ্ধ মাকে নিয়ে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার লাহারকান্দি গ্রামের খালপাড়ে ঝুপড়ি ঘরে বসবাস করেন। ঘরে উপার্জনক্ষম অথবা কোন পুরুষ সদস্য না থাকায় ভিক্ষা করে বেঁচে আছেন তিনি।

অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি ববিতা রাণী দাস। বয়স আনুমানিক ৩৬ বছর। এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে ভিক্ষা করে জীবন চালাতেন তিনি। ‘ভাষার প্রদীপ’-এর প্রতিষ্ঠাতা ফাহাদের অনুপ্রেরণায় এখন তিনি ভিক্ষা করা কমিয়ে মানুষের বাসায় বাড়িতে কাজ করছেন। শাক বিক্রি করে সংসার খরচ চালাচ্ছেন। তবুও বিপদে পড়ে মাঝে মধ্যে তিনি ভিক্ষা করতে বাধ্য হন তিনি। ছেলেমেয়েকে ছেড়ে চলে গিয়ে তার স্বামী অন্যত্র বিয়ে করেছেন।

আরেক বিশেষ অতিথি শিউলি আক্তার। তিনি লাহারকান্দি ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। প্রায় ১২ বছর আগে তার স্বামী মারা গেছেন। এরপর থেকে এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে খুব কষ্টে তার সংসার চলছে। ভিক্ষা করেও তিনি ছেলেমেয়েকে পড়ালেখা করাচ্ছেন।

মেঘ ফাউন্ডেশনের সদস্য রিয়াদ হোসেনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা ফাহাদ বিন বেলায়েত, সবুজ বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন বাবু ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠক রাজীব হোসেন রাজু, ইয়াসিন আরাফাত হৃদয় প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

এ বিষয়ে ‘ভাষার প্রদীপ’ ও ‘মেঘ ফাউন্ডেশন’-এর প্রতিষ্ঠাতা ফাহাদ বিন বেলায়েত বলেন, ‘আমরা স্বেচ্ছাসেবী। সমাজের অসহায় মানুষদের নিয়েই আমাদের কাজ। তাদের জন্য কাজ করে ইতিমধ্যে আমি জাতীয়ভাবে পুরস্কৃত হয়েছি। এ জন্য সমাজের অসহায় মানুষদের মুখে হাসি ফোটানোও আমাদের অন্যতম চ্যালেঞ্জ। সেই থেকেই আমি এ অনুষ্ঠানে তিনজন মমতাময়ী মাকে অতিথি করে প্রতিযোগীতার উদ্বোধন করা হয়েছে।’

আয়োজক কমিটির এক সদস্য জানান, ২০০৭ সাল থেকে ভাষার প্রদীপ সংগঠনের কার্যক্রম শুরু হয়। তখন থেকেই বাংলায় মোবাইল নাম্বার বলতে পারলে ফ্লেক্সিলোড উপহার দিতেন প্রতিষ্ঠাতা ফাহাদ বিন বেলায়েত। এটি ছিল তার ব্যতিক্রম উদ্যোগ। ২০১৪ সাল থেকে তিনি ‘মায়ের ভাষায় মাকে লিখি’ চিঠি লেখা প্রতিযোগীতা নামে আরেকটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগের সূচনা করেন। তখন থেকে প্রতিবছর ভাষার মাস ফেব্রুয়ারিতেই তিনি এ প্রতিযোগীতার উদ্বোধন করেন।

(এস/এসপি/ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২১)