রঞ্জন কৃষ্ণ পন্ডিত, টাঙ্গাইল : শ্বশুর শাশুড়ির সেবা করলেই উপহার পৌছে দিচ্ছেন পুলিশ কর্মকর্তা। এমন ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছেন টাঙ্গাইল সদর থানার অফিসার ইনচার্জ মীর মোশারফ হোসেন। তিনি নিজে গিয়ে উপহার পৌছে দিচ্ছেন। উপহারের মধ্যে রয়েছে টাঙ্গাইলের তাঁত শাড়ি, পোড়াবাড়ির চমচম ও ক্রেস্ট। সেই সাথে পরিবারকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। তার এমন উদ্যোগের কারণে চারদিক থেকে আসছে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।

কলেজ পাড়ার শিউলি জানান, আমি টাঙ্গাইল জেলা সংবাদে একটি পোস্ট দেখতে পাই। সেটি দেখে আমার খুব ভালো লাগে। আমিও আমার শ্বশুর-শাশুড়িকে নিজের বাবা-মায়ের মতো ভালোবাসি এবং তাদের সেবাযতœ করি। তাদের সেবা করে আমি আত্মতৃপ্তি পাই। বিষয়টি অবগত করার জন্য আমি পোস্টে উল্লেখিত নাম্বারে ফোন করি। পরবর্তীতে বিকেল বেলায় দেখি ওসি স্যার নিজে এসে আমাকে উপহারগুলো তুলে দেন।

মাহমুদা আক্তার জানান, আমি পুরস্কার পেয়েছি। পুরস্কার পেয়ে নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস আরও বেড়ে গেছে। আমি আমার শ্বশুর শাশুড়িকে এমনিতেই দেখাশুনা করি। ভবিষ্যতেও একই রকম তাদের সেবা করে যাবো।

শ্বশুর কাজী মুজিবুর রহমান জানান, আমার মেয়ে আমাকে যেমন ভালোবাসে, আমার ছেলের বউও ঠিক তেমনি ভালোবাসে। আমাদের দেখভাল ও সেবাযতেœ কোন ত্রুটি করে না। এমন পুত্রবধু পেয়ে আমি সত্যিই সৌভাগ্যবান।

বীর মুক্তিযোদ্ধা আলমগীর হোসেন জানান, আমার ছেলে ও ছেলে বৌ তাদের সাধ্য অনুযায়ি আমাদের সেবা করে। একজন পুলিশ অফিসার আমার বৌমাকে পুরস্কৃত করেছে। পুরস্কার পেয়ে সে তো আত্মহারা।

মীর মোশারফ হোসেন জানান, আমি লক্ষ্য করেছি বৃদ্ধ বয়সে সন্তানের অবহেলায় বাবা ও মা অযতেœ জীবন যাবন করেন। অনেকেই ঠিকমত খাবারও দেয় না। আর্থিক অবস্থা ভালো থাকা স্বত্বেও সস্তানেরা বাবা-মাকে ছেড়ে বউ বাচ্চা নিয়ে আলাদা বসবাস করে। অনেক সন্তানরাই ভুলে যায় এই বাবা-মা দিনরাত পরিশ্রম করে এই সন্তানের মুখে আহার তুলে দেন এবং উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করেন। তারা এও ভুলে যায় তাদের একদিন বৃদ্ধ হতে হবে। অনেক সন্তানরা কাজের প্রয়োজনে বাহিরে ব্যস্ত থাকে। তাদের বাবা-মা পুত্রবধূর কাছে বেশি সময় কাটায়। আমার উদ্দেশ্য ওই পুত্রবধূদের উৎসাহিত করা।

তিনি আরও জানান, অনেক বাবা-মা’র একাধিক সন্তান থাকার কারণে তারা বাবা-মাকে ভরনপোষন দিতে কার্পন্য করে বাবা-মাকে দুরে সরিয়ে দেয়। সেই সব সন্তান ও পুত্রবধূর প্রতি প্রতিবাদ স্বরূপ আমি এ উদ্যোগ নিয়েছি। যাতে কোন বাবা-মাকে অবহেলিত হয়ে বৃদ্ধাশ্রমে যেতে না হয়।

(আরকেপি/এসপি/ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২১)