স্টাফ রিপোর্টার : তালিকাভুক্তির প্রথম বছরেই বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ বঞ্চিত করায় বহুজাতিক কোম্পানি রবি আজিয়াটা থেকে কিছুটা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। ফলে গত সপ্তাহে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ হারানোর শীর্ষ স্থানটি দখল করেছে এই কোম্পানিটি।

বিনিয়োগকারীরা কোম্পানিটির শেয়ার কিনতে আগ্রহী না হওয়ায় সপ্তাহজুড়ে শেয়ারের দাম কমেছে। গত সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির শেয়ার দাম কমেছে ১২ দশমিক ২৮ শতাংশ। টাকার অঙ্কে প্রতিটি শেয়ারের দাম কমেছে ৫ টাকা ৫০ পয়সা। সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস শেষে কোম্পানিটির শেয়ার দাম দাঁড়িয়েছে ৩৯ টাকা ৩০ পয়সায়, যা আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস শেষে ছিল ৪৪ টাকা ৮০ পয়সা।

এদিকে শেয়ারের দাম কমে যাওয়ায় বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ কম দামে কোম্পানিটির শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছে। ফলে গত সপ্তাহজুড়ে লেনদেন হয়েছে ২৪৯ কোটি ২২ লাখ ৯৮ হাজার টাকা। এতে প্রতি কার্যদিবসে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৪৯ কোটি ৮৪ লাখ ৫৯ হাজার টাকা।

নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ ও আইপিও খরচের কথা বলে এই মোবাইল অপারেটর কোম্পানিটি আইপিওতে শেয়ার ছেড়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে থেকে ৫২৩ কোটি ৭৯ লাখ ৩৩ হাজার ৩৪০ টাকা সংগ্রহ করে। বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে টাকা নেয়ার পর গত ২৪ ডিসেম্বর থেকে শেয়ারবাজারে কোম্পানিটির লেনদেন হচ্ছ।

লেনদেনের প্রথম দিন থেকেই কোম্পানিটির শেয়ার দাম বাড়ার ক্ষেত্রে মহাদাপট দেখায়। লেনদেনের প্রথম কার্যদিবস থেকে টানা ১৫ কার্যদিবস দাম বেড়ে কোম্পানিটির ১০ টাকার শেয়ার ৭৭ টাকা ১০ পয়সায় উঠে যায়। এর মধ্যে লেনদেনের প্রথম ১৩ কার্যদিবসের প্রতিটি দিন দাম বাড়ার সর্বোচ্চ সীমা স্পর্শ করে দেশের শেয়ারবাজারে ইতিহাস সৃষ্টি করে কোম্পানিটি।

এমনকি ২০২০ সালের সমাপ্ত বছরে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দেবে শেয়ারবাজারে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়লে ১৫ ফেব্রয়ারি শেয়ার দামে বড় উত্থান হয়। কিন্তু ১৫ ফেব্রুয়ারি বিকালে পরিচালনা পর্ষদ সভা করে কোম্পানিটি শেয়ারহোল্ডারদের কোনো ধরনের লভ্যাংশ না দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এতে পরের তিন কার্যদিবসেই কোম্পানিটির শেয়ারের দরপতন হয়।

কোম্পানিটির এমন আচরণে ক্ষুদ্ধ হয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এ জন্য প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পর্ষদের শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিএসইসির কর্যালয়ে জরুরি তলব করে ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে। সেই সঙ্গে দ্রুত পর্ষদের সঙ্গে আলোচনা করে বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি কিভাবে লাঘব করা যায়, তার প্রতিকার জানাতে বলা হয়।

বিএসইসির তলবের পর মঙ্গলবার ভার্চুয়ালি এক সংবাদ সম্মেলন করে রবি। ওই সংবাদ সম্মেলনে রবি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মাহতাব উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘সঠিক সময়, সঠিক মুহূর্তে লভ্যাংশ দেয়া হবে। তবে সেটা কতো তাড়াতাড়ি হবে, সেটা বলা মুশকিল।’

লভ্যাংশ না দেয়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, আমাদের যে ডিভিডেন্ড পলসি আছে, তাতে ৫০ শতাংশ লভ্যাংশ দিলে এটা মাত্র ১.৬ অথবা ১.৭ শতাংশ আসতো। এমনকি শতভাগ লভ্যাংশ দিলেও ৩ শতাংশের মতো আসে। এতো কম লভ্যাংশ দিয়ে কোন পজিটিভ ইমপ্যাক্ট (ইতিবাচক প্রভাব) ফেলা যেত কিনা, দ্যাট ওয়াজ ওয়ান অফ দ্যা ক্রিটিকাল কনসার্ন। তাছাড়া লভ্যাংশের টাকাটা আমরা যদি রিইনভেস্টমেন্ট (পুনঃবিনিয়োগ) করি, তাহলে ব্যবসায় ভালো গ্রোথ হবে এবং এটা ভালো রিটান পাওয়া নিশ্চিত করবে।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের বোর্ড অবশ্যই লভ্যাংশ দেবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই।’

রবি’র পর গত সপ্তাহে দাম কমার তালিকায় রয়েছে জিল বাংলা সুগার মিল। সপ্তাহজুড়ে এই প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার দাম কমেছে ১২ দশমিক ২১ শতাংশ। ১০ দশমিক ১৫ শতাংশ দাম কমার মাধ্যমে পরের স্থানে রয়েছে প্রাইম ইন্স্যুরেন্স।

এছাড়া গত সপ্তাহে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ হারানোর শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় থাকা- মীর আখতারের ৭ দশমিক ৬৮ শতাংশ, ব্র্যাক ব্যাংকের ৬ দশমিক ৬৩ শতাংশ, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর ৬ দশমিক ৩৫ শতাংশ, বিডি থাইয়ের ৫ দশমিক ৮১ শতাংশ, ইষ্টার্ন ব্যাংকের ৫ দশমিক ৫৪ শতংশ, ইউনাইটেড ইন্স্যুরেন্সের ৫ দশমিক ১৭ শতাংশ এবং আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের ৫ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ দাম কমেছে।

(ওএস/এসপি/ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২১)