আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল : “শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো ইসলাম ধর্ম বিরোধী, এটা বেদ-আত, এটা মুর্তি পুজার সমান” শুক্রবার জুম্মার নামাজের খুৎবায় মসজিদের পেশ ইমামের এমন বক্তব্য দেয়ার পরেই ভাষা শহীদদের জন্য কচিকাচা শিশুদের হাতে গড়া অস্থায়ী শহীদ মিনার ভেঙ্গে ফেলতে বাধ্য হয়েছে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে শহীদ মিনার নির্মাণকারী শিশুরা। হুজুরের নির্দেশে শহীদ মিনার ভাঙ্গার ঘটনা শনিবার সকালে জানাজানি হলে ওই এলাকায় সাধারণ জনগনের মাঝে চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষ ছড়িয়ে পরেছে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। শনিবার দুপুরে মসজিদ কমিটির জরুরী সভা অনুষ্ঠিত। ঘটনাটি ঘটেছে বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার রাজিহার ইউনিয়নের পূর্ব রাংতা গ্রামে। 

ওই গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা আকন এনামুল ইসলাম জানান, শুক্রবার (১৯ফেব্রুয়ারি) পূর্ব রাংতা জামে মসজিদের পেশ ইমাম আবু ইউসুফ তিনিসহ অর্ধশতাধিক মুসুল্লীর উপস্থিতিতে জুম্মার খুৎবায় “শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো ইসলাম ধর্ম বিরোধী, এটা বেদ-আত, এটা মুর্তি পুজার সমান” “শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করাও নাজায়েজ’’ দোয়া করলেও তা কোন কাজে লাগে না বলে ফতোয়া দেন মসজিদের পেশ ইমাম আবু ইউসুফ। খুৎবার পরপরই তিনি তার অধীনে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের দিয়ে কলাগাছ দিয়ে নির্মিত অস্থায়ী শহীদ মিনার ভেঙ্গে ফেলতে নির্দেশ প্রদান করেন।

ওই দিন নামাজ শেষে মসদিদের পাশ্ববর্তি মহব্বত আলীর বাড়ির সামনে রাস্তার পাশে স্থানীয় শিশুদের অস্থায়ী নির্মিত শহীদ মিনার ভেঙ্গে ফেলতে শিশুদের নির্দেশ প্রদান করেন মসজিদের ওই হুজুর আবু ইউসুফ। আবু ইউসুফ পটুয়াখালী জেলার রাঙ্গাবালী উপজেলার রাঙ্গাবালী গ্রামের আক্কাস চৌধুরীর ছেলে। তিনি গত দুই মাস আগে উল্লেখিত মসজিদে ইমাম হিসেবে দ্বায়িত্ব পালনের পাশাপাশি চাঁদশী মাদ্রাসায় পড়াশুনা করছেন।

স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ওই হুজুরের মক্তবে পড়–য়া শিক্ষার্থী তাওহিদ, রাকিব, ফয়সাল, নাঈম, রাব্বিসহ অনেকেই জানায়, শুক্রবার দুপুরে তারা শহীদ মিনারের সামনে উপস্থিত হলে সেখানে আসেন স্থানীয় মুরুব্বী রজ্জব আলীর ছেলে হাজি মো. হাতেম আলী। তিনি উপস্থিত হয়ে হুজুরের মতামতের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে শিক্ষার্থীদের শহীদ মিনার ভেঙ্গে ফেলতে নির্দেশ দিলে শিক্ষার্থীরা মনের কস্টে তাদের নির্মিত শহীদ মিনার ভেঙ্গে ফেলে।
শনিবার সকালে ওই গ্রামের লোকজনের সামনে ওই সকল শিশুরা হুজুর আবু ইউসুফ ও হাজি মো. হাতেম আলীকে দেখিয়ে দিয়ে তাদের কথায় শহীদ মিনার ভেঙ্গেছে বলে সাংবাদিকদের কাছে সত্যতা স্বীকার করে।

মসজিদের পেশ ইমাম আবু ইউসুফ সাংবাদিকদের বলেন, স্থানীয় মুরুব্বী হাজি মো. হাতেম আলী তাকে শহীদ মিনারে ফুল দেয়া ফেরানোর জন্য বললে তিনি শহীদ মিনারে ফুল দেয়া বেদ-আত বলে শুক্রবার খুৎবায় ফতোয়া দিয়েছিলেন।
এ ব্যপারে স্থানীয় ২নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য ও উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি রিপন সরদার বলেন, বিষয়টি শুক্রবার পর্যন্ত তার জানা ছিল না। শুক্রবার সকালে শিশুরা তার সামনে সত্য ঘটনা জানালে তিনি ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। এসময় তিনি নিজের দ্বায়িত্বে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর জন্য শিশুদের জন্য অস্থায়ী শহীদ মিনার নির্মাণ করে দেবেন বলে জানান। যাতে ২১ এর প্রথম প্রহরে শিশুরা ফুল দিয়ে ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে পারে। মেম্বরের এমন ঘোষণায় উপস্থিত শিশুরা আননন্দে মাতোয়ারা হয়ে ওঠে।

মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও ২নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি নূর মোহম্মদ আকন বলেন, বিষটি তিনি শনিবার সকালে শুনেছেন। ঘটনা শুনে শনিবার বাদ যোহর মসজিদের জরুরী সভা ডেকেছেন। ওই সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা সাপেক্ষ ব্যবস্থা নেবেন বলেও জানান তিনি।

থানা অফিসার ইন চার্জ মো. গোলাম ছরোয়ার জানান, তিনি শহীদ মিনার ভাঙ্গার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসআই মাহাবুবকে পাঠিয়েছেন। ঘটনা তদন্ত সাপেক্ষ ব্যবস্থা নেবেন বলেও জানান তিনি।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আবুল হাশেম এর সরকারী ফোনে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ না করায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

(টিবি/এসপি/ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২১)