আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল : বরিশালের আগৈলঝাড়ায় “শহিদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো ইসলাম বিরোধী, এটা বেদ-আত, এটা মূর্তি পূজার সমান” মসজিদের খুতবায় ফতোয়া দিয়ে শিশুদের নির্মিত শহিদ মিনার ভাঙ্গতে বাধ্য করা সেই ইমাম আবু ইউসুফকে শনিবার বিকেলে আটকের পরে ওই রাতেই ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ।

এদিকে ইমামের নির্দেশে ভেঙ্গে ফেলা উপজেলার পূর্ব রাংতা গ্রামের সেই শহিদ মিনার স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় পুণরায় নতুন করে অস্থায়ীভাবে নির্মাণ করে শনিবার রাতে ও রবিবার সকালে সেই শহিদ মিনারে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে ওই এলাকার কোমলমতি শিশুরা।

এদিকে শনিবার বিকেলে পূর্ব রাংতা জামে মসজিদ কমিটির এক জরুরী সভায় মসজিদের অভিযুক্ত ইমাম আবু ইউসুফকে ইমামের চাকুরী থেকে অব্যাহতি প্রদান করেছেন বলে জানিয়েছেন মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও রাংতা ২নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আকন মো. নূর মোহম্মদ। তিনি জানান, কমিটির জরুরী সভায় উপস্থিত ইমাম গত শুক্রবারের খুৎবায় দেয়া তার বক্তব্যর আংশিক সত্যতা স্বীকার করায় তাকে ইমামের পদ থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে।

প্রকাশ, গত শুক্রবার জুম্মার নামাজের খুৎবায় আগৈলঝাড়া উপজেলার রাজিহার ইউনিয়নের পূর্ব রাংতা গ্রামে জামে মসজিদের পেশ ইমাম আবু ইউসুফ “শহিদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো ইসলাম বিরোধী, এটা বেদ-আত, এটা মুর্তি পুজার সমান” ইমাম খুৎবায় এমন বক্তব্য দিয়ে ওই দিন জম্মার নামাজ শেষে মসজিদের অনতিদূরে ভাষা শহীদদের জন্য কচিকাচা শিশুদের হাতে নির্মিত অস্থায়ী শহীদ মিনার ওই শিশুদের দিয়ে ভেঙ্গে ফেলতে বাধ্য করান। শহিদ সিনার ভাঙ্গার বিষয়ে ইমামকে সহযোগীতা করে শিশুদের শহিদ মিনার ভাঙ্গতে পরামর্শ প্রদান করেছিলেন ওই গ্রামের রজ্জব আলীর ছেলে মো. হাতেম আলী। শহিদ মিনার নির্মানকারী ওই শিশুরা স্থানীয় সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও মক্তবে ইমামের কাছে পড়ালেখা করত।

শহীদ মিনার ভাংচুরের খবরে স্থানীয়রা ফুঁসে উঠলে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ইমাম আবু ইউসুফকে শনিবার বিকেলে আটক করে থানায় নেয়া হয়। শনিবার রাতেই আটক ইমাম পটুয়াখালী জেলার রাঙ্গাবালী উপজেলার রাঙ্গাবালী গ্রামের আক্কাস চৌধুরীর ছেলে আবু ইউসুফকে ছেড়ে দেয়।

থানা অফিসার ইস চার্জ মো. গোলাম ছরোয়ার বলেন, জিজ্ঞাসবাদের জন্য ইমাম আবু ইউসুফকে থানায় ডেকে আনা হয়েছিল। কোন লিখিত অভিযোগ না পাওয়ায় জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ওই মসজিদ কমিটির সভাপতির জিম্মায় মুচলেকা রেখে তাকে ছাড়া হয়েছে।

মুচলেকার মাধ্যমে ইমামকে ছেড়ে দেয়ার সত্যতা স্বীকার করে মসজিদ কমিটির সভাপতি আকন নূর মোহম্মদ বলেন, মসজিদের চাকুরী থেকে তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। বর্তমানে আবু ইউসুফ গৌরনদীর চাঁদশী মাদ্রাসায় পড়াশুনা করায় তাকে সেখানে চলে গেছে।

(টিবি/এসপি/ফেব্রুয়ারি ২১, ২০২১)