রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : মণষা মন্দিরের জায়গা বেড়া দেওয়ার সময়  দু’ কলেজ ছাত্রীসহ দলিত পরিবারের চারজনকে পিটিয়ে জখম করা হয়েছে। সোমবার সকাল ১১টার দিকে সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলা চাঁচাই গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। আহতদের উদ্ধার করে কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

আহতরা হলেন, কালিগঞ্জ উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের চাঁচাই গ্রামের বিষ্ণুপদ দাসের ছেলে জয়দেব দাস (৬৫), তার স্ত্রী নীলা দাস (৫২), তাদের মেয়ে কালিগঞ্জ ভোকেশানাল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী জয়ন্তী দাস (২০) ও কুশুলিয়া কলেজিয়েট স্কুলের দ্বাদশ শ্রেণীর সদ্য ফলপ্রাপ্ত পিয়া দাস (১৮)।

কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন কলেজ ছাত্রী পিয়া দাস জানান, তার ঠাকুরদাদা বিষ্ণুপদ দাস ও খইয়ে দাস ২০ বছর আগে তাদের গ্রামের মকবুল গাজীর ছেলে কুদ্দুস গাজী, পারুলগাছা গ্রামের আনছার আলী, ইছা গাজী ও মুসা গাজীর কাছে এক বিঘা জমি বিক্রি করেন। বর্তমান মাঠ পড়চায় এক বিঘা জমি তাদের নামে রেকর্ডও হয়েছে। ঠাকুরদাদা মারা যাওয়ার পর তার বাবা জয়দেব দাস পাঁচ শতক জমি ও মণষা পুজার স্থানটি মালিকানা পান। স্বাধীনতার পর থেকে ওই স্থানে প্রতি বছর মণষা পুজা করা হয়।

পিয়া দাস আরো জানায়, তার ঠাকুর দাদার কাছ থেকে কেনা জমি ব্যতীত দু’শতক জমির উপর থাকা মণষা পুজার স্থানটি তার বলে দাবি করে আসছিল। এ নিয়ে ইতিপূর্বে কয়েকবার মারপিটের ঘটনাও ঘটেছে। আড়াই মাস আগে বিষ্ণপুর ইউপি চেয়ারম্যান শেখ রিয়াজউদ্দিন ও ইউপি সদস্য আফছার আলীর মধ্যস্ততায় আমিন ডেকে মাপ জরিপ করা হয়।

সোমবার তার বাবা মণষার পূজা বেদীর চারপাশ বেড়া দিয়ে ঘিরছিলেন। এমন সময় কুদ্দুস গাজী, ছেলে আনারুল গাজী, ফেরদৌস গাজী ও জামাতা নাজমুল, আব্দুর রাজ্জাক ও খোকন টাপালীসহ কয়েকজন বাঁশের লাঠি দিয়ে বাবাকে মারপিট শুরু করে। খবর পেয়ে সেসহ দিদি জয়ন্তী ও মা নীলা দাস বাবাকে রক্ষায় এগিয়ে এলে তাদেরকেও এলোপাতাড়ি পিটিয়ে জখম করা হয়। দিদি জয়ন্তী, মা ও তার পরিহিত পোশাক টেনে হিঁচড়ে ছিঁড়ে ফেলা হয়। ট্রিপল নাইনে ফোন করলে কালিগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক মোকাদ্দেস আলীর নেতৃত্বে পুলিশ এসে তাদেরকে উদ্ধার করে কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।

প্রত্যক্ষদর্শী সুভাষ দাস, শিপ চরণ দাস, নূরন্নেছা, ভোলা নাথ মণ্ডল ও তাপস মণ্ডল জানান, কেনা জমি বুঝে পাওয়ার পরও আব্দুল কুদ্দুস ওই মণষা পুজার বেদী জোরপূর্বক দখলের চেষ্টা করলে জয়দেব দাস ও তার পরিবারের সদস্যদের উপর কয়েকবার হামলা চালিয়েছে। চেয়ারম্যান ও মেম্বর মাপ জরিপ করে দিয়ে যাওয়ার পরও কুদ্দুস ও তার লোকজন যেভাবে জয়দেব, তার স্ত্রী ও কলেজ পড়–য়া দু’ মেয়েকে যেভাবে মারপিট করেছে তা যে কোন বর্বরতাকে হার মানায়।
কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ শেখ তৈয়বুর রহমান বলেন, আহতদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে ভারী জিনিস দিয়ে আঘাতের ফলে রক্তাক্ত ফোলা জখম হয়েছে। তবে তারা সকলেই বিপদমুক্ত।

জানতে চাইলে কুদ্দুস গাজী বলেন, মণষা পূজার বেদীর জমি তার জমির মধ্যে পড়ে তাই ঘেরা দিতে গেলে উভয়পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি হয়েছে।

কালিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দেলোয়ার হুসেন জানান, খবর পেয়ে উপপরিদর্শক মোকাদ্দেসকে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়। এ ঘটনায় নির্যাতিতা নীলী দাস বাদি হয়ে কুদ্দুস গাজীসহ ছয়জনের নাম উল্লেখ করে থানায় একটি এজাহার দায়ের করেছেন। রাতেই মামলা রেকর্ড করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

(আরকে/এসপি/ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২১)