দিলীপ চন্দ, ফরিদপুর : ফরিদপুরে গ্রাম আদালত সম্পর্কে ব্যাপক জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানদের অংশগ্রহণে সমন্বিত পরিকল্পনা প্রণয়ন শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। 

ফরিদপুর জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সরকার বিভাগের অধীনে বাংলাদেশ গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ (২ য় পর্যায়) প্রকল্পের যৌথ আয়োজনে, বুধবার সকালে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে গ্রাম আদালত সম্পর্কে ব্যাপক জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

গ্রাম আদালত সম্পর্কে ব্যাপক জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে জন প্রতিনিধিদের বিশেষ ভূমিকা’ এবং ইউপি চেয়ারম্যানদের গ্রাম আদালতকে এগিয়ে নিতে হবে। শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এ কথা বলেন।

স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক মোঃ মনিরুজ্জামান এর সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক অতুল সরকার। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ জামাল পাশা, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ- পরিচালক মোঃ হজরত আলী, সমাজ সেবা অধিদপ্তরের উপ- পরিচালক এ. এস. এম আলী আহসান।

এসময় অন্যদের মাঝে বক্তব্য রাখেন মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপ- পরিচালক মাশউদা হোসেন, ইএএলজি প্রকল্পের ডিস্ট্রিক্ট ফ্যাসিলিটেটর মোঃ মনির হোসেন মজুমদার, ব্লাষ্ট আইনজীবী শিপ্রা গোস্বামী, অম্বিকা পুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু সাইদ চৌধুরী ( বারী), প্রথম আলো জেলা প্রতিনিধি পান্না বালা সহ গ্রাম আদালতের উপকারভোগী প্রমূখ। এসময় সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাগণ ও সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

সভায় জেলা প্রশাসক অতুল সরকার বলেন, গ্রাম আদালত সম্পর্কে ব্যাপক জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে ইউনিয়ন জনপ্রতিনিধিদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, আমাদের সমাজে কি কি সমস্যা আছে এগুলো নির্ধারণ করে সমাধানের জন্য চেষ্টা করতে হবে। মানুষের মধ্যে বিশ্বাসের জায়গাটা তৈরি করতে হবে। মানুষ যেন গ্রাম আদালতের উপর আস্থা আনতে পারে। এ ব্যাপারগুলো যখন পত্রিকায় ছাপানো হবে তখন জনগণ জানবে এবং এর সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার মাধ্যমে গ্রাম আদালতকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে বলে তিনি মনে করেন।

তিনি আরো বলেন, গ্রামে অনেকগুলো বিষয় থাকে যেগুলো আমলযোগ্য অপরাধ নয়, সেগুলো সমাধানের জন্যই গ্রাম আদালত। গ্রাম আদালতে মামলা না করে শহরে এসে মামলা করলে বিচারপ্রার্থী যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তেমনি যিনি মামলা করেন তিনিও ক্ষতির শিকার হন। সেজন্যই গ্রাম আদালত তৈরি করা হয়েছে।

তিনি বলেন, গ্রাম আদালত কোনো রায় দিলে সেটি বাস্তবায়ন করা অতি অবশ্যই।

সেমিনারে বক্তারা বলেন, গ্রাম আদালতে মিথ্যা মামলা দেওয়া কঠিন, সবাই সবাইকে চেনে। একজন বিচারপ্রার্থী গ্রাম আদালতের মাধ্যমে আর্থিক ক্ষতি থেকে রক্ষা পায়। এছাড়া মামলার যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য গ্রাম আদালতের সক্রিয়তা দরকার। তাই গ্রাম আদালতের সংবাদগুলো বেশি বেশি প্রচার করা হলে মানুষের হয়রানি কম হবে এবং বিরোধ নিষ্পত্তি করতে পারবে।

বক্তারা আরো বলেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে গ্রাম আদালত গুরুত্বপূর্ণ। তবে এটি সেভাবে কার্যকর না বলেই আজকের এ আয়োজন। একজন বিচারপ্রার্থী গ্রাম থেকে যখন শহরে আসে অর্থনৈতিকভাবে সে ক্ষতিগ্রস্ত হয় তার খরচ বেড়ে যায়। তাই সুবিধাভোগীদের সরাসরি সম্পৃক্ত ঘটাতে গ্রাম আদালতে অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে। আর এক্ষেত্রে গণমাধ্যমই মূল ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করেন তারা।

সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশে গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ (দ্বিতীয় পর্যায়) প্রকল্পের ডিস্ট্রিক্ট ফ্যাসিলিটেটর আমিরুল ইসলাম খান সভায় মূল প্রবন্ধে বলা হয়, বাংলাদেশ সরকার ২০০৬ সালে গ্রাম আদালত আইন পাস করে যা পরে ২০১৩ সালে সংশোধিত হয়। এই আইন ইউনিয়ন পরিষদকে ছোটখাট মামলার নিষ্পত্তি ক্ষমতা দিয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন উপকরণ, দক্ষ জনশক্তি ও প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর অভাব এবং আদালতের মাধ্যমে বিচারের সুযোগ পাওয়া সম্পর্কে স্থানীয় লোকের সচেতনতার অভাব, গ্রাম আদালতের মাধ্যমে বিচারিক সুবিধা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ হিসেবে কাজ করে।

এ পরিপ্রেক্ষিতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ইউএনডিপি এবং বাংলাদেশ সরকারের আর্থিক সহায়তায় ও ত্রিপক্ষীয় অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে বাংলাদেশ গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ (দ্বিতীয় পর্যায়) প্রকল্পের অধীনে ফরিদপুর জেলা সহ আরও ১২ টি জেলায় ২০০৯ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ১ ম পর্যায় প্রকল্পটি অতান্ত সফলতার সাথে বাস্তবায়িত হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় বর্তমানে ২৭ টি জেলার১২৮ টি উপজেলা ১০৮০টি ইউনিয়নে গ্রাম আদালতের কার্যক্রম চলছে। ফরিদপুর জেলায় বর্তমানে ৮১ টি ইউনিয়নের মধ্যে ৩৫ টি ইউনিয়নে প্রকল্পের অধীনে কার্যক্রম চললছে। যার মেয়াদ ৩০ জুন ২০২১ তারিখে শেষ হবে।

(ডিসি/এসপি/ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২১)