কক্সবাজার প্রতিনিধি : কক্সবাজার জেলা প্রশাসন কর্তৃক আয়োজিত বই মেলার ৪র্থ দিনও ছিল ক্রেতা ও দর্শকহীন। এতে স্টল মালিকদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। প্রচারনার অভাব, দায়সারা গোছের আয়োজন, নিরাপত্তার অভাব, ত্রিবিভক্ত আয়োজনের কারনে বই মেলায় বেচাকিনি নেই বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। এমনকি তারা আগামীতে বই মেলায় আসবে না বলেও দাবী করেছে।

সূত্র জানায়, ১৮ এপ্রিল শহরের জেলা প্রশাসন চত্বরে সপ্তাহ ব্যাপী বই মেলাটি শুরু হয়। আগামী ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত প্রত্যেক দিন বিকাল তিনটা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত মেলাটি চলবে। বই মেলা আয়োজন কমিটির সাধারণ সম্পাদক তাপস রক্ষিত জানিয়েছেন ৪০টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান এবারের বই মেলায় অংশ গ্রহন করছে।

সরেজমিনে রবিবার বই মেলা ঘুরে দেখা যায়, এবারের বই মেলাটি ত্রিবিভক্ত। শহরের পাবলিক লাইব্রেরীর সামনের দুপাশের ফুটপাতে স্টলের একাংশ, টেকনাফ কোর্টের সামনের মাঠে স্টলের বাকি অংশ বসানো হয়েছে। আর সাংস্কতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে জেলা প্রশাসন ভবনের সামনের গাড়ি পার্কিং চত্বরে। ফলে স্টলগুলো পড়ে গেছে মূল অনুষ্ঠানের পেছনে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে দর্শক থাকলেও স্টলে নেই দর্শক। রবিবার রাত আটটায় দেখা যায় গানের মঞ্চের সামনে বসে রয়েছে শ’ পাচেঁক দর্শক। কিন্তু বইয়ের স্টলে রয়েছে মাত্র ১০/১২ জন দর্শক। স্টল মালিকরা অলস সময় পার করছে। ক্রেতার অভাবে নিজেদের মধ্যে খোষ গল্পে মেতে রয়েছে তারা। এ সময় প্রতিবেদকের সাথে কথা হয় স্টল মালিক ও প্রকাশকদের। তারা সবাই বেচা কেনা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

এ বিষয়ে শিকড় প্রকাশনীর সেলসম্যান মাহবুব জানিয়েছেন, বেচাকিনি মোটেও ভাল নয়। ১৮ এপ্রিল তিনি মাত্র ৩০৫ টাকা বই বিক্রি করেছেন। তারপরদিন ৩৮৫ টাকা এবং ২০ এপ্রিল ৯৪০ টাকার বই বিক্রি করেছেন। তিনি আরও জানিয়েছেন এক সাপ্তাহের জন্য স্টল ভাড়া দুই হাজার টাকা। এই বেচা কিনিতে স্টল ভাড়াই উঠবে না। আর প্রচারণা না থাকার কারণেই বেচা কিনি কম হচ্ছে বলেও তিনি দাবী করেছেন।

কথামালা প্রকাশনীর স্বত্ত্বাধিকারী আব্দুর রউফ বকুল জানিয়েছেন, গত বারের তুলনাই এবারের বেচা বিক্রি নেই বললেই চলে। প্রচারণা না থাকায় এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বই মেলার বাইরে হওয়ায় বেচা কিনি কম হওয়ার জন্য দায়ী বলে তিনি দাবী করেছেন।

উদাহরণ প্রকাশনীর স্বত্ত্বাধিকারী রাশেদ মামুন জানিয়েছেন, প্রচারণাহীন দায়সারা গোছের আয়োজন আর নিরাপত্তাহীন বই মেলায় বেচা কেনা যেমন হওয়ার কথা তেমনী হচ্ছে। আগামীতে কক্সবাজারের বই মেলায় তিনি আর অংশগ্রহণ করবেন না বলেও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি আরও জানিয়েছেন, নামকা ওয়াস্থে বই মেলা আয়োজন করে প্রকাশনকদের কষ্ট দেওয়া কোন মানে হয় না। তিনি বুঝতে পারছেন না মূল আয়োজন বই মেলা নাকি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান? নিরাপত্তার অভাবে মূল্যবান বইপত্র চুরি হচ্ছে বলেও তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

বই মেলায় আসা এক ক্রেতা জানিয়েছেন, তিনি জানেন না শহরে বইমেলা হচ্ছে। টেকপাড়া থেকে পৌরসভায় ব্যক্তিগত কাজে এসে দেখতে পায় এখানে বই মেলা হচ্ছে। তাই বই মেলার স্টলে উকি দেয়ার জন্যই তিনি পৌরসভা থেকে বই মেলায় এসেছেন।

এ দিকে বই মেলা আয়োজক কমিটির সাধারণ সম্পাদক তাপস রক্ষিত ও আয়োজনের দূর্বলতা কথা স্বীকার করেছেন। বই মেলায় নিরাপত্তার অভাব এবং প্রচারণা চালানো হয়নি বলে বিকিকিনি কম। কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তোফাইল আহমেদ রবিবার রাতে জানিয়েছেন এখনি নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। কক্সবাজারের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক জাফর আলম জানিয়েছেন, তিনি সোমবার বই মেলা পরিদর্শন করবেন। এর পাশাপাশি বিকিকিনি বৃদ্ধির জন্য তিনি সরকারি বিভিন্ন সংস্থাকে বাধ্যতামূলক বই কেনার নিদের্শনা দিবেন। নিরাপত্তাও জোরদার করার আশ্বাস প্রদান করেছেন তিনি। সোমবার থেকে বই মেলার প্রচারণাও চালানো হবে পুরোদমে বলে তিনি প্রতিবেদককে জানিয়েছেন।

(টিটি/এইচআর/এপ্রিল ২১, ২০১৪)