আবুল কালাম আজাদ, রাজবাড়ী : রাজবাড়ী পাংশার মৌরাট ইউনিয়নে ফসলি জমির ধারে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা আর,এম ব্রিকস ভাটায় গত জানুয়ারিতে অভিযান চালিয়ে গুঁড়িয়ে দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। কিন্তু এক মাস হতে না হতেই কাঠের ব্যবহার করে অবৈধভাবে পোড়ানো হচ্ছে ইট।

চারপাশের পরিবেশ দূষণের মধ্যে ফেলে কোনো ধরনের ভ্যাট, ট্যাক্সের ধার না ধেরে রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলায় দিব্যি চলছে ড্রামচিমনিওয়ালা এই ইটভাটা। নীতিমালা লঙ্ঘন করে লোকালয় ও কৃষিজমিতে গড়ে উঠেছে ভাটাটি।

সরেজমিনে উপজেলার জনবসতি এলাকায় এবং কৃষিজমির পাশে গড়ে উঠেছে এই ইটভাটা গিয়ে দেখা যায়, ভাটাতে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। শ্রমিকেরা জানান, এই ভাটায় কয়লা ব্যবহারের সুযোগ নেই। তাই সারা বছর কাঠই পোড়াতে হয়। ভাটাটির পাশে রয়েছে ফলের বাগান, পেয়াজ, রসুন, ও ধানখেত। আর ১০০ থেকে ১৫০ গজের মধ্যে রয়েছে জনবসতি। টিনের ড্রামচিমনি দিয়ে কাঠ পোড়ানোর ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ছে লোকালয়ে। অথচ ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩ অনুযায়ী, আবাসিক এলাকা ও কৃষিজমির এক কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা স্থাপন নিষিদ্ধ।

স্থানীয় ৩০ থেকে ৪০ জন বাসিন্দার সাথে কথা বলে জানা যায়, সাত-আট বছর ধরে স্থানীয় বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন ছাড়াই লোকালয় ও আবাদি জমির পাশে ইটভাটা স্থাপন করে ব্যবসা চালিয়ে আসছেন। ড্রামচিমনিওয়ালা এই ইটভাটার মালিক হলেন রইস উদ্দিন।তাঁর বিরুদ্ধে সরকারকে ভ্যাট ও ট্যাক্স না দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে।

ভাটার কোল ঘেঁষে থাকা ফসলি জমির কয়েকজন মালিক অভিযোগ করেন, কৃষিজমিতে বা জমির পাশে এসব ইটভাটা স্থাপন করায় তাঁদের ফসলের ক্ষতি হয়। ভালো ফলন পাওয়া যায় না। ইটভাটার মালিকেরা স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় তাঁরা প্রতিবাদ করতেও সাহস পান না।

তবে গত জানুয়ারিতে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনার মাধ্যমে ভাটাটি ভেঙে গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা আবার পুনরায় সেখানে খড়ি ব্যবহার করে অবৈধভাবে ইট পোড়াচ্ছে।

রাজবাড়ী পরিবেশ অধিদপ্তরের একজন পরিদর্শক জানান, ক্রমান্বয়ে অভিযান পরিচালনা করা হলেও ভাটাগুলো বন্ধ রাখা হয়নি।

কৃষকদের এসব অভিযোগ সঠিক হিসেবে উল্লেখ করে পাংশা উপজেলা উপ-কৃষি কর্মকর্তা সুনীল কুমার বলেন, কৃষিজমিতে ইটভাটা স্থাপন করা ঠিক না। ফসলি জমির পাশে ইটভাটা স্থাপন করায় ফসলের উৎপাদন কম হয়। ইটভাটা স্থাপনের ক্ষেত্রে এসব লক্ষ রাখা উচিত বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।

ড্রামচিমনিওয়ালা আর,এম ব্রিকসের মালিক রইস উদ্দিন অনুমতি ছাড়াই ইটভাটা পরিচালনা এবং কাঠ পোড়ানোর অভিযোগ স্বীকার করে বলেন, প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করেই তাঁরা ইটভাটা চালাচ্ছেন। তবে প্রশাসন বলতে তিনি কী বোঝাচ্ছেন তা পরিষ্কার করেননি।

(একে/এসপি/ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২১)