রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : আদালতের আদেশ উপেক্ষা করে রেকডীয় জমি থেকে জোরপূর্বক গাছ গাছালি কেটে ও পুকুর ভরাট করে জমি জবরদখল করে রাস্তা নির্মাণ করা হচ্ছে। শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার গোবিন্দকাটি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। অভিযোগ, পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে জবরদখলকারিদের নিবৃত্ত করতে পারেনি।

গোবিন্দকাটি গ্রামের অঞ্জনা বিশ্বাস জানান, জমি তার বাবা শেখর বিশ্বাসের নামে থাকাকালিন ২০১৯ সালের ২৩ জুন দক্ষিণ শ্রীপুর ইউপি চেয়ারম্যান প্রশান্ত চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে একই গ্রামের বিনয় সরকার, আরতি সরকার, মানিক গাইন ও তপতী গাইনের পক্ষে জমির উত্তর পাশের ঘেরা বেড়া কেটে দিয়ে জমি দখলের চেষ্টা করা হয়।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করলে তিনি কোন ব্যবস্থা নেননি। গত বছরের ১৮ মার্চ তার বাবা শেখর বিশ্বাস ১১৮৯/২০ নং দানপত্র দলিল মূলে তাকে ৮০ শতক জমি লিখে দেন। ওই একই দাগে তার শ্বশুরের দু’ শতক জমি রয়েছে। গত বছরের পহেলা জুন জমির দক্ষিণ পাশে থাকা ১২ ফুট চওড়া জমির ঘেরা, বেড়া ও গাছ গাছালি কেটে ফেলে একই গ্রামের বিনয় সরকার, আরতি সরকার, মানিক গাইন ও তপতী গাইনও তাদের লোকজন। বাধা দেওয়ায় তাকে ও শ্বশুরকে মারপিট করা হয়। এ ঘটনায় তিনি কালিগঞ্জ সার্কেলের সহকারি পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিলে প্রতিপক্ষ তারক গাইন বাদি হয়ে তার শ্বশুরসহ চারজনের নামে ৮ জুন মিথ্যা মামলা করে।

বিষয়টি অবহিত করলে সহকারি পুলিশ সুপারের নির্দেশে তিনি (অঞ্জনা) বাদি হয়ে ১৩ জুন থানায় ১১ জনের নামে থানায় মামলা দায়ের করেন। এমতাবস্থায় তিনি বাদি হয়ে কালিগঞ্জ সহকারি জজ আদালতে গত বছরের ১৯ অক্টোবর মামলা দায়ের করে নিষেধাজ্ঞা চান। বিনয় সরকার, আরতি সরকার, মানিক গাইন ও তপতী গাইনকে বিবাদী করা হয়। শুনানী শেষে আদালত বিবাদীদের বিরুদ্ধে কারণ দর্শাণোর নোটিশ দিলেও তারা কোন জবাব না দিয়ে গায়ের জোরে জমি দখলের চেষ্টা করে। সবশেষে আদালত বিবাদীদের জবাব দেওয়ার জন্য ২ মার্চ দিন ধার্য করে।

অঞ্জনা বিশ্বাস বলেন, দেওয়ানী আদালতে জবাব না দিয়ে প্রতিপক্ষরা স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, উপজেলা চেয়ারম্যান ও পুলিশের সহায়তায় তড়িঘড়ি করে জোরপূর্বক রাস্তা তৈরির উদ্যোগ নেয়। একপর্যায়ে থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার বরাত দিয়ে কালিগঞ্জ সার্কেল অফিসে তাকে ও স্বামীকে ডাকা হয়।

কালিগঞ্জ সার্কেলের ভারপ্রাপ্ত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইয়াছিন আলী বিভিন্ন প্রশ্ন করে তাকে তাদের প্রতিপক্ষের জন্য জমি ছেড়ে দিতে বলেন।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান সাঈদ মেহেদী , দক্ষিণ শ্রীপুর ইউপি চেয়ারম্যান প্রশান্ত সরকার ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নরিম আলী মাষ্টার। নরিম আলী মাষ্টার জমি মেপে দেখার কথা বললে পুলিশ কর্মকর্তা ইয়াছিন আলী কথা শোনেননি। উপরন্তু তাদেরকে উত্তপ্ত বাক্য শোনান। এরই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার সকাল ৮টার দিকে ইউপি চেয়ারম্যান প্রশান্ত সরকারের নেতৃত্বে বিনয় সরকার, আরতি সরকার, মানিক গাইন ও তপতী গাইনসহ কমপক্ষে ৫০ জন লোক দা’ কুড়াল, কোদাল ও শাবল নিয়ে তাদের জমির দক্ষিণ পাশের পুকুর পাড়সহ ১৮ ফুট চওড়া রাস্তা তৈরি শুরু করে।

এ সময় কাটা হয় বেশ কয়েকটি বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। জমি জবরদখলের বিষয়টি থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে মোবাইল ফোনে জানানোর চেষ্টা করলে তাকে না পাওয়ায় ট্রিপল নাইনে ফোন করা হয়। সকাল ১০টার দিকে কালিগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক গোবিন্দ আকর্ষণ ঘটনান্থলে আসলেও কাজ বন্ধ করা হয়নি। পুলিশ কর্মকর্তা চলে গেলে দ্রুত গতিতে পুকুর ভরাটের কাজসহ চার শতক জমি দখলে নেওয়ার চেষ্টা চালানো হয়। বিষয়টি কালিগঞ্জ সার্কেলের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইয়াছিন আলীকেও জাননো হলেও কোন ব্যবস্থা গৃহীত হয়নি।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিনয় সরকার বলেন, তারা শেখর বিশ্বাসের সময়ে ওই জমির উপর দিয়ে চলাচল করতেন। মেয়েকে ওই জমি দেওয়ার পর তারা পথ বন্ধ করে দেয়। বাধ্য হয়ে তারা চেয়ারম্যান ও উপাজেলা চেয়ারম্যানের সহায়তায় রাস্তা বানানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে কাজ করছেন।

দক্ষিণ শ্রীপুর ইউপি চেয়ারম্যান প্রশান্ত সরকার বলেন, অঞ্জনা বিশ্বাস যে জমি তার নিজের জমি বলে দাবি করছে ওই জমিতে তারা রাস্তা বানাচ্ছেন না।

কালিগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক গোবিন্দ আকর্ষণ বলেন, তিনি ঘটনাস্থলে থাকাকালিন কাজ করেনি চেয়ারম্যান ও তার লোকজন। তিনি চলে এলে কাজ করলে তার কিছু করার নেই।

কালিগঞ্জ সার্কেলের ভারপ্রাপ্ত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইয়াছিন আলী কাউকে কটাক্ষ করার কথা অস্বীকার করে বলেন, অভিযোগ পেয়ে ঘটনাস্থলে ফোর্স পাঠানো হয়েছে।

(আরকে/এসপি/ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২১)