আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল : উজিরপুর উপজেলা হাসপাতাল থেকে নিখোঁজ আহত গৃহকর্মী নিপা বাড়ৈকে আগৈলঝাড়া থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ।

বরিশালের উজিরপুর উপজেলা হাসপাতাল থেকে নিখোঁজ আহত গৃহকর্মী নিপা বাড়ৈকে (১১) আগৈলঝাড়া থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ।

শনিবার ভোরে উজিরপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী আগৈলঝাড়া উপজেলার আস্কর গ্রামের বিমল বাড়ৈর বাড়ি থেকে আহত শিশুটিকে উদ্ধার করে উজিরপুর থানায় পুলিশের হেফাজতে রাখা হয়েছে।

উদ্ধার হওয়া নিপা বাড়ৈ উজিরপুর উপজেলার জামবাড়ি এলাকার ননী বাড়ৈর মেয়ে। তার বাবা একজন মানসিক প্রতিবন্ধি। তার মা দুই বছর আগে অন্যত্র বিয়ে করেন। দুই বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে নিপা মেঝ। করোনা কালীন সময়ে অভাব অনটনের কারণে ৭ মাস আগে নিপাকে ঢাকার জাতীয় পঙ্গু হাসপাতালের অর্থপেডিক্স ও ট্রমা বিশেষজ্ঞ ডা. সিএইএস রবিনের শ্যামলীর বাসায় গৃহকর্মীর কাজে দেয়া হয়।

নিপার স্বজনেরা জানান, প্রায় সাত মাস আগে চিকিৎসক সিএইএস রবিনের বাসায় নিপাকে কাজে দেয়া হয়। তখন চিকিৎসক রবিন ও তার স্ত্রী রাখি দাস বলেছিলেন নিজের সন্তানের মতো করে নিপাকে দেখে রাখবেন তারা।

কিন্তু গত (২৩ ফেব্রুয়ারী) কাউকে কিছু না বলার শর্তে ভয়ভীতি দেখিয়ে নিপাকে গোপনে ডা. রবিনের চেম্বারের সহকারী বাসু হালদারকে দিয়ে মঙ্গলবার গ্রামের বাড়ি পাঠিয়ে দেন নির্যাতনকারী রাখি দাস। বাসুদেব দাস উজিরপুরের জামবাড়ি তার গ্রামের বাড়ির কাছে একটি দোকানের সামনে ফেলে রেখে যায়।

এরপর নিপা বাড়িতে এসে জানায়, কাজে সামান্য ভুল করলে তার ওপর চালানো হতো অমানবিক নির্যাতন। গরম খুন্তি দিয়ে ছ্যাঁকা দেয়া হত তার শরীরে। ঠিকমতো খাবার দেয়া হত না তাকে। বাসার মধ্যে আটকে রেখে প্রতিদিনই তাকে মারধর করা হত। এমনকি তাকে গলাও টিপে ধরা হতো বলে বলে জানায়। চিকিৎসকের স্ত্রী রাখি দাসের নির্যাতনে মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে নিপার ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে। নির্যাতনের কারনে কয়েক দিন আগে সে অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাকে কোন ওষুধও খেতে দেয়নি তারা। শারীরিক অবস্থা আরও খারাপ হলে চিকিৎসক রবিনের এক কর্মচারী দিয়ে তাকে উজিরপুরে পাঠিয়ে দেয়। খবর পেয়ে রাতেই পুলিশ নিপাকে উদ্ধার করে উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি করে।

এদিকে শিশু নির্যাতরে বিষয়টি জানাজানি হলে গ্রামের লোকজন ওই চিকৎসক ও তার স্ত্রীর শাস্তির দাবি জানালে মামলার ভয়ে চিকিৎসক রবিন ও তার স্ত্রী রাখি দাস উজিরপুর উপজেলা হাসপাতাল থেকে থেকে অসুস্থ নিপাকে অন্যত্র নিয়ে যেতে প্রলোভন ও নানাভাবে চাপ দিতে থাকেন নিপার পরিবারের সদস্যদের। এমন অবস্থায় নিপার কাকা চাচা তপন বাড়ৈ শুক্রবার ভোরে স্থানীয় এক ইউপি সদস্যর সহায়তায় নিপাকে হাসপাতাল থেকে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যান।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. শওকত আলী জানান, শিশুটিকে ভর্তির পর থেকেই নানা ধরনের লোকজন এসে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেস্টা করেন। তবে তিনি পুলিশের অনুমতি ছাড়া নিপাকে নিয়ে যেতে নিষেধ করেন। শুক্রবার ভোর ৫টার পর থেকে নিপাকে উপজেলা হাসপাতালে খুঁজে না পাওয়ায় হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. সামসুদ্দোহা তৌহিদ উজিরপুর মডেল থানায় সাধারন ডায়েরি করেন।

উজিরপুর মডেল থানার ওসি জিয়াউল আহসান জানান, নিপাকে উদ্ধারে শুক্রবার দিনভর অভিযান চালানো হয়। তবে তার সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিল না। শুক্রবার রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ জানতে পারে, নিপাকে তার কাকার মামা শ^শুর বিমল বাড়ৈর আগৈলঝাড়া উপজেলার আস্কর গ্রামের বাড়িতে রাখা হয়েছে। ভোরে ওই বাড়িতে অভিযান চালিয়ে অসুস্থ নিপাকে উদ্ধার করা হয়েছে। নিপা এখন থানায় পুলিশের হেফাজতে রয়েছে।

তিনি আরও বলেন ঘটনাটি অমানবিক। গত বুধবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ৩টার দিকে খবর পেয়ে শিশুটিকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। একই সঙ্গে ঢাকায় ওই চিকিৎসকের বাড়ির ঠিকানা খোঁজা হচ্ছে। এ বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তুতি চলছে।

উপজেলা হাসপাতালের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শওকত আলী জানান, ‘শিশুটির মাথায় কুপিয়ে জখম করার চিহ্ন রয়েছে তা প্রায় চার থেকে পাঁচ দিন আগের। এছাড়া শরীরের অন্যান্য আঘাতের ক্ষতগুলো অনেক পুরোনো। আর সেগুলো ধাতব দ- এবং নক দিয়ে করা হয়েছে।’ তিনি আরও জানান, ‘ওই শিশুর শরীরের আঘাত দেখে ধারনা করা হচ্ছে অনেকদিন ধরেই সে নির্যাতনের শিকার হয়ে আসছে। বর্তমানে শারিরিকভাবে শিশুটি অনেকটা সুস্থ। তবে তার মানসিক ক্ষত ঠিক হতে দীর্ঘ সময় লাগবে।’

আগৈলঝাড়া থানার ওসি (তদন্ত) মো. মাজহারুল ইসলাম জানান, উজিরপুর থানা পুলিশ আগৈলঝাড়া থানা পুলিশের সহায়তায় শনিবার সকালে আস্কর গ্রাম থেকে উদ্ধার করে উজিরপুর থানায় নিয়ে গেছে। সেখানে হাসপাতাল থেকে এই শিশু নিখোঁজের ঘটনায় জিডি রয়েছে।

(টিবি/এসপি/ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২১)