স্টাফ রিপোর্টার : বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আর্থিক দুরাবস্থা লাঘবের লক্ষ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু-কন্যা প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত ২০ হাজার টাকা ভাতা এবং মুক্তিযোদ্ধাদের সঠিক তালিকা বাস্তবায়নের জন্যে একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা সংসদের চেয়ারম্যান আবীর আহাদ মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী মহোদয়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ।

আজ এক বিবৃতিতে উপরোক্ত মন্তব্য করে আবীর আহাদ বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাঁর অত্যন্ত সংবেদনশীল ও মানবিক হৃদয় দিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মাসিক ভাতা বৃদ্ধি করার যে ঘোষণা দিয়েছেন, সেটি বাস্তবায়ন করবে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় । যেহেতু প্রধানমন্ত্রী জাতীয় অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াবলি নিয়ে সর্বদা ব্যস্ত থাকেন, সেহেতু তাঁর ঘোষিত কোনো নির্দেশনার যথাযথ বাস্তবায়নের যাবতীয় দায়দায়িত্ব বর্তায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও তাঁর মন্ত্রণালয়ের ওপর । অতীতে আমলাতান্ত্রিক মারপ্যাঁচ ও দীর্ঘসূত্রিতায় সরকারের বহু আদেশ-নির্দেশ মাঠে মারা গেছে । এ ক্ষেত্রে যাতে সেটি না ঘটে সেজন্য জরুরীভিত্তিতে কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে ।

সাম্প্রতিক সমাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই সম্পর্কে আবীর আহাদ বলেন, সারা দেশ থেকে যেসব খবরাখবর পাওয়া যাচ্ছে তাতে অধিকাংশ ক্ষেত্রে সঠিক যাচাই বাছাই হয়নি । অর্থ, আত্মীয়তা, স্বজনপ্রীতি ও রাজনৈতিক ক্ষমতার প্রভাবে মুক্তিযুদ্ধের সাথে জড়িত নয়, এমনকি রাজাকাররাও উপরোক্ত কারণে মুক্তিযোদ্ধা হিশেবে বহাল হয়েছে । কোনো কোনো স্থানে সাক্ষীদের অর্থ দিতে পারেননি অথবা অর্থ দেননি বলে অনেক প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন বলে গুরুতর অভিযোগ রয়েছে । এবারের যাচাই বাছাই কার্যক্রমে অতীত কমিটির সদস্যদের রাখা হবে না বলে মন্ত্রী মহোদয়ের ঘোষণার প্রতিফলন ঘটেনি । অধিকাংশ স্থানে ২০১৭ সালের যাচাই যাচাই কমিটির সদস্যরা এবারের যাচাই বাছাই কমিটিতে পুনরায় ফিরে এসে পেছনের বাণিজ্যিক ধান্দার অভিজ্ঞতা নিয়ে বিপুলবিক্রমে বাণিজ্য করেছে বলেও বহু অভিযোগ রয়েছে । তাদের নতুন করে এবারের যাচাই বাছাই কমিটিতে ফিরে আসার এবং যথাযথ যাচাই বাছাই না হওয়ার ক্ষেত্রে বেশকিছু মন্ত্রী এমপি আমলা ও প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের নজর ও খবরদারি কাজ করেছে বলেও অভিযোগ রয়েছে । ফলে বেসামরিক গেজেটধারীদের মধ্যে যে বিশাল সংখ্যক অমুক্তিযোদ্ধা ছিলো তারা ঐসব কারসাজিতে পার পেয়ে গেছে ।

আবীর আহাদ সারা দেশের যাচাই বাছাই কমিটির পক্ষ থেকে প্রেরিত সুপারিশ ও মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ থেকে পূরণকৃত যাচাই ফরম পুন:তদন্তের ভার অভিজ্ঞ গোয়েন্দা সংস্থার হাতে অর্পণের দাবি জানিয়ে বলেন, ইতোমধ্যে তারা বাহিনী গেজেট, যুদ্ধাহত ও লাল মুক্তিবার্তার মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্য থেকে বিপুল পরিমাণ অমুক্তিযোদ্ধাদের উচ্ছেদ করতে সফল হয়েছে । সেই একই গোয়েন্দা সংস্থার হাতে সাম্প্রদায়িক সমাপ্ত বেসামরিক গেজেটধারীদের যাচাই বাছাই ফরমসহ বেসামরিক অঙ্গনের লাল মুক্তিবার্তা, মুজিবনগর ও অন্যান্য গেজেটধারী মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে যাদের বিরুদ্ধে অমুক্তিযোদ্ধার অভিযোগ রয়েছে, তাদের বিষয়টিও জরুরীভিত্তিতে পুন:তদন্ত করে দেখা যেতে পারে । যদিও আমাদের দাবি ছিলো, ভারতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের তালিকা বাদে অন্যান্য সব তালিকার মুক্তিযোদ্ধাদের বঙ্গবন্ধু সরকারের বাহাত্তর সালের মুক্তিযোদ্ধা সংজ্ঞার আলোকে একটি বিচার বিভাগ ও সামরিক বাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত মুক্তিযোদ্ধা তদন্ত কমিশন গঠন করে মুক্তিযোদ্ধা নির্ণয় করা হোক । এ কাজ করতে বড়োজোর তিন মাস সময় লাগতে পারে । তবে যেহেতু একটি দায়িত্বশীল গোয়েন্দা সংস্থা মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই ক্ষেত্রে বিশাল সফলতা দেখাচ্ছে, সেক্ষেত্রে তাদের ওপর আস্থা রাখা যায় ।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশের জনগণসহ প্রকৃত বীর মুক্তিযোদ্ধারা কেউ চান না যে, বীর মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় অমুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থান থাকুক । ভুয়া মুক্তিযোদ্ধারা প্রকৃত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সীমাহীন শৌর্য ত্যাগ রক্ত ও বীরত্বের ভাগ বসিয়ে বীর সেজে প্রজাতন্ত্রের ভাতা ও অন্যান্য সুবিধাদি ভোগ করবে, এটা কারোই কাম্য নয় । এটা মুক্তিযোদ্ধাদের জন্যে অপমান। মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব প্রদানকারী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ সরকারের সময় বীর মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা থাকবে-----অপরদিকে প্রতারণা, মিথ্যাচার, অর্থ, আত্মীয়তা ও রাজনৈতিক দলীয় বিবেচনায় অমুক্তিযোদ্ধারা মুক্তিযোদ্ধা হয়ে গরীব দেশের অর্থ ও অন্যান্য সুবিধাদি লুটেপুটে খাবে, এটা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জন্যেও অপমান । আমরা বঙ্গবন্ধু-কন্যার এধরনের অপমান হতে দিতে পারি না ।

(এ/এসপি/মার্চ ০২, ২০২১)