শরীয়তপুর প্রতিনিধি : “ছোট বেলায় বাপ দাদার আমল থেকেই দেখছি পদ্মা নদী  আমাগো জমি জমা, ঘর বাড়ি বছর বছর ভাইঙ্গা নিয়া যায়। আমরা কখনো জমি কিইন্যা, আবার কখনো অন্যের জমিতে ঘর তুইল্যা বসবাস করেছি। আমার ৭৫ বছর বয়সে ১৮ বার পদ্মা নদী  বাড়ি-ঘর গিল্যা খাইছে। আবার নতুন কইরা গত মঙ্গলবার রাইতে আমার ঘর বাড়ি সব রাক্ষুইস্যা পদ্মা নদী কাইরা নিলো। এই বয়সে অহন আমি  কই গিয়া দারাইমু, কে আমারে আশ্রয় দিবো”। কাঁদতে কাঁদতে কথাগুলো বলছিলেন শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার উত্তর তারাবুনিয়া ইউনিয়নের দেওয়ান কান্দি গ্রামের বৃদ্ধ মজিবুর রহমান দেওয়ান।

হঠাৎ করেই গত মঙ্গলবার গভীর রাত থেকে শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার উত্তর তারাবুনিয়া ইউনিয়নের ৩টি ওয়ার্ডের মৃধাকান্দি, দেওয়ান কান্দি, গাজী কান্দি ও বেপারী কান্দি গ্রামে শুরু হয়েছে প্রমত্তা পদ্মার সর্বগ্রাসী ভাঙ্গণ। পদ্মার ভাঙ্গন টের পেয়ে ঘুমিয়ে থাকা শত শত পরিবার সারা রাত জেগে সরানোর চেষ্টা করে তাদের বসত বাড়ি। তার পরেও রাতের অন্ধকারেই চোখের সামনে নদী গর্ভে বিলিন হয়ে যায় প্রায় ৭০টি ঘর। রবিবার সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, শত শত পরিবার তখনও তাদের ঘর বাড়ি গাছপালা ভেঙ্গে নৌকা ট্রলার যোগে সরিয়ে নিচ্ছে অন্যত্র। যাদের দূরে কোথাও যাওয়ার সুযোগ হয়নি তারা আশ্রয় নিয়েছে স্থানীয় ছুরিরচর প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ৭ দিনের ভাঙ্গনে কমপক্ষে ৩ শতটি পবিরার তাদের ঘর বাড়ি, ফসলি জমি হারিয়েছে। গাজীকান্দি জামে মসজিদ, দেওয়ানকান্দি জামে মসজিদ ও হাজী আব্দুর রব বেপারীর কান্দি জামে মসজিদ নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ছুরিরচর ৪১ নং সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং স্থানীয় ষ্টেশন বাজারটি ভাঙ্গনের মুখে রয়েছে। ভাঙ্গন অব্যাহত থাকলে আগামী ২/১ মধ্যে অন্তত ৮০টি দোকানসহ ষ্টেশন বাজার লঞ্চঘাট ও বাজারটি নদী গর্ভে হারিয়ে যাবে। ৮ গ্রামের একমাত্র প্রাইমারি স্কুলসহ আরো ২ শতাধিক বাড়ি এখনো ভাঙ্গন আতংকে দিন কাটাচ্ছে।

স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিরা দূর্গত এলাকা পরিদর্শন করে ভাঙ্গনের ৭ দিন পর সোমবার মাত্র ১৫৫ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে ৩০ কেজি করে খয়রাতি সাহায্যের চাল দিয়েছে। অপ্রতুল এ সহায়তার ফলে এখনো খেয়ে-না খেয়ে মানবেতর জীবন পার করছে শত শত মানুষ।

উত্তর তারাবুনিয়া ৪১ নং ছুরিরচর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুর রাজ্জাক বলেন, এই স্কুলটিতে ৮টি গ্রামের শিশুরা লেখা পড়া করে। প্রায় ৭ শতজন শিক্ষার্থী রয়েছে এই বিদ্যালয়ে। ভাঙ্গনের যে গতি লক্ষ করা যাচ্ছে তাতে এবছর স্কুলটিকে রক্ষা করা যাবে বেল মনে হয়না। স্কুলটি বিলীন হলে শত শত শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবন অনিষ্চিত হয়ে যাবে।

গাজীকান্দি গ্রামের লুৎফা বেগম, বেপারী কান্দির মানসুরা বেগম, মৃধা কান্দির মোস্তফা মৃধা, দেওয়ান কান্দি গ্রামের জাহানারা খাতুনসহ অসংখ্য ক্ষতিগ্রস্ত লোক আক্ষেপ করে বলেন, সহায় সম্বল সব হারিয়ে এক সপ্তাহ পরে আমরা মাত্র ৩০ কেজি চাউল পেয়েছি। এই সাহায্য আমরা চাইনা। আমাগো মাথা গোজার ঠাই চাই।

ভেদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সো. নেছার উদ্দিন জুয়েল বলেন, উত্তর তারাবুনিয়া ইউনিয়নের বেশীরভাগ এলাকাই দীর্ঘ দিন থেকে পদ্মার ভাঙ্গনকবলিত। গত সপ্তাহ থেকে প্রবল ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। আমরা ত্রান সহায়তা প্রদান শুরু করেছি। উর্দ্ধতনদের সাথে কথা বলে ক্ষতিগ্রস্তদের পূনর্বাসনের জন্য উদ্যোগ গ্রহন করা হবে।

(কেএনআই/এইচআর/আগস্ট ২৬, ২০১৪)