নূরুল আমিন খোকন, ফেনী : ফেনী জেলার ৬ টি উপজেলার মধ্যে একমাত্র উপকূলীয় (কোস্টালবেল্ট) উপজেলা সোনাগাজী। সোনাগাজীর তিন দিকেই নদী ও সাগর দ্বারা বেষ্টিত। সোনাগাজীর পূর্বপাশ দিয়ে বড় ফেনী নদী, পশ্চিমপাশ দিযে বয়ে গেছে ছোটফেনী নদী, আর দক্ষিণ দিক জুড়ে রয়েছে সুবিশাল বিস্তৃত সন্দীপ চ্যানেল ও বঙ্গোপসাগর।

ষাটের দশকে সোনাগাজীর ছোটফেনী নদীর উপর কাজির হাট নামক স্থানে 'কাজির হাট রেগুলেটর নির্মাণ করা হয়। অপর দিকে ১৯৮৫ সালে জাপান সরকারেের অর্থ ও কারিগরি সহায়তায় বড়ফেনী ও মূহুরী নদীর সংযোগ স্থলে বাঁধ দিয়ে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সেচ প্রকল্প মূহুরী রেগুলেটর নির্মাণ করা হয়। কালের পরিক্রমায় দু'নদীর মোহনার ভাটি অঞ্চলে হাজার হাজার একর পলিমাটির চর জেগে উঠে। বিগত বছর গুলোতে ওই সকল চরাঞ্চলে উপকূলের ছিন্নমূল ও অসহায় লোকগুলো ঘর-বাড়ী নির্মাণ করে স্থায়ী বসতি গড়ে তুলেছে। অপর দিকে নদীর তীরবর্তী তৃণভূমির চারণভূমিকে কেন্দ্র করে স্থানীয় উদ্যোগে বেশ কয়েকটি গরু-মহিষের খামার গড়ে উঠেছে।

উপকূলীয় এলাকার লোকজন নদীর চরের চারণভূমিতে গরু-মহিষ, ছাগল, ভেড়া পালন করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে। চরাঞ্চলের মানুষ ও খামারিরা তাদের প্রতিষ্ঠিত খামার হতে প্রতিদিন হাজার হাজার লিটার দুধ উৎপাদন করে। ওইসব দুধ স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ও ঢাকায় রপ্তানী করা হয়, যাহা দেশের অর্থনীতিতে বিশেষ অবদান রাখছে।

অপর দিকে ২০১১-২০১২ সালে কাজির হাট রেগুলেটরটি পরিত্যক্ত ও ধসে পড়ায় ছোট ফেনী নদীর ১৮/২০ কিলোমিটার দক্ষিণের ভাটি অঞ্চল মুছাপুর নামক স্থানে ২০১৭ সালে মুছাপুর রেগুলেটর (দ্বিতীয় ছোটফেনী নদী রেগুলেটর) নির্মাণ করা হয়। দুই নদীর তীরঘেষে ষাটেের দশকে নির্মিত বেড়ীবাঁধটি প্রয়োজনীয় মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে অনেকটা ধ্বংস ও বিলীন হয়ে যায়। ফলে প্রত্যেক বছরই সামুদ্রিক সাইক্লোন, জলোচ্ছ্বাস ও সুনামীর প্রভাবে উপকূলে বসবাসকারী লোকগুলোর ক্ষেতের ফসল, পুকুরের মাছ, হাঁস-মোরগ ও গবাদি পশু ভাসিয়ে নিয়ে যায় ! এতে চরাঞ্চলে বসবাসকারী লোকগুলো আর্থিকভাবে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়।

নদীর তীরবর্তী মোহনায জেগে উঠা চরাঞ্চলকে কেন্দ্রকরে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার মিরসরাই উপজেলার ইছাখালী থেকে সোনাগাজীর চর বড়ধলী পর্যন্ত চরাঞ্চলকে অর্থনৈতিক অঞ্চল ঘোষণা করেছেন।

উপকূলীয এলাকায় বসবাসকারী লোকদের ঘর-বাড়ী, জান-মাল ও গবাদি পশু রক্ষাকল্পে সোনাগাজী মূহুরী রেগুলেটরের পশ্চিম পাশ থেকে শুরু করে মিরসরাই এলাকার ইছাখালী পর্যন্ত বেড়ীবাঁধ (সুরক্ষা বাঁধ) নির্মাণ করা হলেও সোনাগাজীর চর খোন্দকার থেকে দক্ষিণ চর চান্দিয়া, বড়ধলী ও আদর্শগ্রাম হয়ে ছোটফেনী নদীর মুছাপুর রেগুলেটর পর্যন্ত দীর্ঘ প্রায় ২০/২৫ কিঃমিঃ এলাকার কোন বেড়িবাঁধ নেই !

তাই অর্থনৈতিক অঞ্চল ও দুর্গম চরাঞ্চলে বসবাসকারী লোকদের ঘর-বাড়ী ও সম্পদ রক্ষায় 'আউটার বেড়ীবাঁধ' নির্মাণের দাবি সোনাগাজীবাসীর দীর্ঘদিনের।

অপর দিকে স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে থানা পশু হাসপাতালটি সোনাগাজী থানা সদর থেকে ১৪/১৫ কিঃমিঃ উত্তরে মঙ্গলকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের পাশে স্থাপন করা হয়। ফলে সোনাগাজীর দক্ষিণে চরাঞ্চলের লোকজন তাদের গরু-মহিষ রোগাাক্রান্ত হলে অথবা গবাদি পশুর মোড়ক বা স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিলে ২৫/৩০ কিঃমিঃ দূরে অবস্থিত পশু হাসপাতাল থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও পশুস্বাস্থ্য সেবা নিতে পারে না। ফলে কখনো কখনো চরাঞ্চলে ব্যাপকহারে গবাদি পশুর মৃত্যুও ঘটে !

তাই চরাঞ্চল ও খামার মালিকদের গরু-মহিষের জাত উন্নতর ও রোগাক্রান্ত পশুর চিকিৎসা কল্পে সোনাগাজীর দক্ষিণাঞ্চলে আধুনিক সুবিধা সমেত 'ভেটেরিনারি হাসপাতাল/বিশ্ববিদ্যালয' স্থাপন করা হলে বৃহত্তর নোয়াখালী, চট্টগ্রাম ও কুমিল্লা অঞ্চলের জনগোষ্ঠী গরু-মহিষের খামার গড়ে দেশেের অর্থনীতে বিশেষ অবদান রাখতে পারবে।
তাই সোনাগাজীর চরাঞ্চলকে ঘিরে আউটার বেড়ীবাঁধ ও ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয় / হাসপাতাল নির্মাণ করার জন্য সোনাগাজীবাসী সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের শুভ দৃষ্টি কামনা করছে।

(এনকে/এসপি/মার্চ ০২, ২০২১)