স্টাফ রিপোর্টার : বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘পত্রিকায় দেখলাম যে, পুলিশের আইজি সাহেব তিনি একটা প্রশ্ন রেখেছেন। সেটি হচ্ছে- পুলিশকে প্রতিপক্ষ বলা হচ্ছে কেন? আমারও একই প্রশ্ন। আপনি তো একজন শিক্ষিত মানুষ, ব্রাইট অফিসার, সুদর্শন। আপনি কি একবারও প্রশ্ন করেছেন নিজেকে যে পুলিশকে কেন প্রতিপক্ষ ভাবছে জনগণ? কারা প্রতিপক্ষ ভাবছে? এই প্রশ্ন আপনি নিজেকে করে উত্তর খুঁজে বের করুন।’

মঙ্গলবার (২ মার্চ) বিকেলে এক আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব এ কথা বলেন। জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে স্বাধীনতা সুর্বণজয়ন্তীতে পতাকা উত্তোলন দিবস উপলক্ষে এ আলোচনা সভা হয়।

ফখরুল বলেন, ‘আজ যখন নির্বাচন হয়, সেই নির্বাচনে পুলিশ দিয়ে ভোট দিয়ে দেন। অন্য কাউকে দরকার হয় না। আজকে যখন একটা রাজনৈতিক ইস্যুতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল নিয়মতান্ত্রিকভাবে গণতান্ত্রিকভাবে সাংবিধানিক অধিকার অনুযায়ী প্রতিবাদ করতে যায় তখন তাদের এই যে, নিষ্ঠুরভাবে নির্যাতন কেন করা হয়? আজকে কেন বলা হয় থানায় থানায় যে দেশটা আমরা চালাই, আমরা সরকার তৈরি করেছি, আমরাই এসব ব্যবস্থা করব। সেই প্রশ্নটা নিজেদের করুন, জানার চেষ্টা করুন তাহলে প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আজ দুর্ভাগ্য আমাদের রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠানগুলো দলবাজ হয়ে পড়েছে, তাদের দলীয়করণ করা হয়েছে। আমাদের স্বপ্ন ১৯৭১ সালের সব স্বপ্ন ভেঙে তছনছ করে দেয়া হয়েছে।’

৫০ বছরে আওয়ামী লীগ দেশকে শুধু বিভক্ত করেছে উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘১৯৭১ সালে যে যুদ্ধ আমরা করেছিলাম, যে স্বপ্ন দেখেছিলাম সেই স্বপ্নগুলো ভেঙে চুরমার করেছে। এই এই ৫০ বছর সব অধিকার ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে। উন্নয়নের কথা বলে, সিঙ্গাপুর বানানোর কথা বলে, উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার কথা বলে আজ আমাদের সম্পদ লুট করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। লুটেরাদের হাতে এদেশ দিয়ে দেয়া হয়েছে।’

দেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে সব রাজনৈতিক শক্তির বৃহত্তর ঐক্যের আহ্বান জানিয়ে ফখরুল বলেন, ‘আজকে দেশের একমাত্র প্রধান সঙ্কট হচ্ছে যে, আমাদের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে-টু রেস্টোর ডেমোক্রেসি। আজকে আমাদের গণতন্ত্র হারিয়ে গেছে, স্বাধীনতার সব চেতনা লুণ্ঠন করে নিয়েছে। আজকে বিএনপিকে নেতৃত্ব দিতে হবে এই ভয়াবহ ফ্যাসিবাদী সরকারকে সরিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য।’

তিনি বলেন, এখানে আ স ম আবদুর রবের যে বক্তব্য, মাহমুদুর রহমান মান্নার যে বক্তব্য, নুরুল হক নুরের যে বক্তব্য সেই বক্তব্যে একথা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, সব রাজনৈতিক শক্তি যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে তারা আজকে ঐক্যবদ্ধ হতে চায়। তারা জনগণের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে চায়। আসুন আজ আমরা সেই শপথ নিয়ে সেই লক্ষ্যে সংগঠিত হই।’

তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতা কোনো একজন বিশেষ ব্যক্তি বা কোনো বিশেষ গোষ্ঠী বা দলের কারণে আসেনি। স্বাধীনতা এসেছে দীর্ঘকাল ধরে এদেশের মানুষের যে স্বাধীনতা আকাঙ্ক্ষা আমি যতটুকু দেখেছি যে, সেই ব্রিটিশ পিরিয়ড থেকে এদেশের মানুষ স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা করে আসছিল, সেজন্য এখানে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে স্বদেশী আন্দোলন হয়েছে, পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে উঠে যার নেতৃত্ব দিয়েছে বাংলাদেশের ছাত্র সমাজ।’

শেরেবাংলা একে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে তিনি বলেন, ‘সবচেয়ে বেশি শ্রদ্ধা জানাতে চাই যিনি যুদ্ধ ঘোষণা না করলে এদেশ স্বাধীন হতো না। তিনি যুদ্ধ ঘোষণা না করলে সারাদেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তো না, তিনি যুদ্ধ ঘোষণা না করলে সত্যিকার অর্থেই যে চেতনার জন্য আমরা লড়াইটা করেছিলাম- একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা সেটা সম্ভব হতো না।

বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, ‘আজ সরকার গণতন্ত্রের সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করেছে, রাষ্ট্রীয় যন্ত্রকে ব্যবহার করছে। আজকে সত্যিকার একটি স্বাধীন বাংলাদেশ নির্মাণ করা, সত্যিকার অর্থে একটা গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ নির্মাণ করা, সত্যিকার অর্থে একটা উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা সেটাকে ধ্বংস করে দিয়েছে।’

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন গঠিত বিএনপির জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালামের সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য করেন খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান, আমানউল্লাহ আমান, এসএম ফজলুল হক, খায়রুল কবির খোকন, শিরিন সুলতানা প্রমুখ।

এছাড়া নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল ইসলাম নুরু বক্তব্য রাখেন।

(ওএস/এসপি/মার্চ ০২, ২০২১)