নওগাঁ প্রতিনিধি : বিদ্যুৎ মানুষের এক অনন্য আবিষ্কার। আর এই বিজলীর আলো অর্থ্যাৎ বিদ্যুতের অলোতে হারিয়ে গেছে গ্রাম বাংলার কুপিবাতি ও চুঙ্গা শিল্প। আঞ্চলিক ভাষায় এটি কুপিবাতি নামে বেশি পরিচিত। এক সময় কেরোসিনের হাতবাতি বা কুপিবাতি ছিল রাতের আঁধার নিবারণের একমাত্র অবলম্বন। আর এ বাতিতে কেরোসিন ভরানোর জন্য চুঙ্গা ছিল একমাত্র উপাদান। প্রযুক্তি ও আধুনিকতার ছোঁয়ায় বর্তমানে গ্রামে লেগেছে শহরের ছোঁয়া। বর্তমান সরকারের উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় নওগাঁ জেলার ১১ উপজেলার  প্রায় সব বাড়িতেই পৌছে গেছে বিদ্যুৎ। রাতে গ্রামের রাস্তার পাশে জ্বলছে লাম্পপোস্ট। প্রত্যন্ত গ্রামও আজ উন্নয়নের আওতায় চলে এসেছে। প্রায় প্রতিটি গ্রামেই পাকা রাস্তারসহ বিদ্যুতায়িত করা হয়েছে।

এক সময় কুপি বাতির এই শিল্প ছিল লাভজনক। বাতি ও চুঙ্গা তৈরী করে অনেক পরিবার জীবিকা নির্বাহ করতো। টিন, কাঁচ ও মাটি এই তিন উপাদান দিয়েই তৈরি করা যায় হাতবাতি। কাঁচের বাতি গুলোর দাম ছিল ৪০/৫০ টাকা, টিনের বাতিগুলোর দাম ছিল ২০/৩০ টাকা আর মাটির বাতিগুলোর দাম ছিলো ৫/১৫ টাকা। জেলার বিভিন্ন বাড়িতে তৈরি হতো এই শিল্প। এ জেলার হাত বাতি একসময় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকাররা এসে নিয়ে যেতো। আর এ শিল্প এখন নেই বললেই চলে।

এক সময় বিদ্যুৎ চলে গেলেও হাত বাতির ও চুঙ্গার চাহিদা ছিল। তখন কিছু কিছু মানুষ এ পেশাকে আঁকড়ে ধরে সংসার চালাতো। কিন্তু বর্তমানে বিজ্ঞান ও আধুনিক প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে বিদ্যুতের বিকল্প হিসেবে অনেক সহজলভ্য ইলেকট্রিক উপকরনগুলো তৈরি করছে। এরমধ্যে অন্যতম হলো, ইমারজেন্সী লাইট, চার্জার লাইট, এলইডি লাইট, আইপিএস, সোলার প্যানেলসহ বিভিন্ন উপকরন। এগুলো বর্তমান বাজারে কম দামে হাত বাড়ালেই পাওয়া যাচ্ছে। কারণ বিদ্যুৎ চলে গেলে মানুষ বিকল্প হিসেবে এসব জিনিস ব্যবহার করে থাকেন। যার ফলশ্রুতিতে কেরোসিনের হাতবাতি ও চুঙ্গার চাহিদা উদ্বেগজনক হারে কমে গেছে।

আগে জেলার বিভিন্ন হাট বাজারে সন্ধ্যা হলেই টিম টিম করে জ্বলতো কোরোসিন তেলের হাতবাতি। কিন্তু সময়ের সঙ্গে এখন হাট বাজারে জ্বলে ওঠে বিদ্যুতের আলো। তাই গ্রামের হাটবাজারগুলোতে এখন আর কেরোসিনের বাতি ও চুঙ্গা এখন আর চোখ পড়েনা। গ্রামের মানুষরা সামর্থ অনুযায়ী কুপি কিনে ব্যবহার করতেন। বাজারে সাধারণত দুই ধরনের কুপি পাওয়া যেত, বড় ও ছোট। বেশি আলোর প্রয়োজনে কুপি বাতিগুলো কাঠ এবং মাটির তৈরি গছা অথবা স্ট্যান্ডের ওপর রাখা হতো। এই গছা অথবা স্ট্যান্ডগুলো ছিল বাহারি ডিজাইনের।

রূপসী-গ্রামবাংলা আপামর মানুষের কাছেু কুপি বাতির কদর কমে গেলেও আবার কেউ কেউ এই কুপি বাতির স্মৃতি আঁকড়ে ধরে আছেন। আবার অনেকেই স্ব-যত্ন গ্রামবাংলার ঐতিহ্যের নিদর্শন স্বরূপ কুপি বাতি সংরক্ষণ করে রেখেছেন। কুপি বাতির ব্যবহার ও কদর যে হারে লোপ পাচ্ছে তাতে অদূর ভবিষ্যতে এটি শুধুই স্মৃতি হয়ে থাকবে অথবা কোন এক যাদুঘরে সংরক্ষন করে রাখা হবে আগামীর প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার জন্য।

(বিএস/এসপি/মার্চ ০৩, ২০২১)