কুষ্টিয়া প্রতিনিধি : কুষ্টিয়া অঞ্চলে ডায়রিয়ার প্রকোপ মারাত্বক আকার ধারন করেছে। প্রতি দিনই রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। রোগীদের সেবা দিতে যেয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে কর্তব্যরত চিকিৎসক ও নার্সদের। এদিকে ডায়রিয়ায় আক্রান্তদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়াতে হাসপাতালের অভ্যন্তরিন সড়ক বন্ধ রেখে সেখানে রোগীদের স্থনান্তরের ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে।

বিজিবি কুষ্টিয়া সেক্টরের একটি মেডিকেল টিম নিজস্ব তাবু টাঙ্গিয়ে ডায়রিয়ায় আক্রান্তদের চিকিৎসা প্রদান শুরু করেছে। কুষ্টিয়ায় ডায়রিয়ার মারাত্বক আকার ধারন করায় তিনটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি করা হয়েছে। জেলা সিভিল সার্জন অফিসের মেডিকেল অফিসার ডা. মিজানুর রহমানকে প্রধান করে ৫ সদস্যের একটি কমিটি সারা জেলায় কাজ শুরু করেছে।


অন্যদিকে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মাহফুজুর রহমানকে প্রধান করে ১৫ সদস্যের একটি টিম সার্বক্ষনিক হাসপাতালে রোগীদের সেবা প্রদানে কাজ করছেন। এছাড়া কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রফেসর ডা. মোস্তানজিদের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের একটি টিম অবস্থা পর্যবেক্ষন এবং কারন নির্ণয়ের কাজ করছেন। একাজে সহযোগিতা করছে মেডিকেল কলেজের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থীরা।


আজ মঙ্গলবার সকালে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দেখা গেল ডায়রিয়া ওয়ার্ড রোগীতে পরিপূর্ণ। এছাড়া করিডোরে এবং আশেপাশের ছোট রুমগুলোতে রোগীদের স্থানান্তর করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক সৈয়দ বেলাল হোসেন হাসপাতালে সার্বক্ষনিক নজরদারী করছেন। তিনি ডায়রিয়া ওয়ার্ডের পাশের সড়কের উপর তাবু টাঙ্গিয়ে ডায়রিয়ায় আক্রান্তদের রাখার ব্যবস্থা করেন। তিনি বিজিবি কুষ্টিয়া সেক্টর কমান্ডারকে মেডিকেল টিম পাঠানোর অনুরোধ জানালে বিডিআরের একটি মেডিকেল টিম নিজেদের ব্যবস্থায় বিকেলে রাস্তার উপর তাবু টাঙ্গিয়ে ডায়রিয়ায় আক্রান্তদের চিকিৎসা সেবা শুরু করেছে।


জেলা প্রশাসক সৈয়দ বেলাল হোসেন ডায়রিয়া ওয়ার্ডের আশে পাশের পরিবেশ পর্যবেক্ষন করেন এবং ডায়রিয়া ওয়ার্ডের বাইরে ২ ট্রাক বালু ফেলে সেখানে অস্থায়ী ঘর করারও পরামর্শ দেন। জেলা প্রশাসক সৈয়দ বেলাল হোসেন সাংবাদিকদের জানান, ডায়রিয়ার বিষয়ে আমরা সিরিয়াস। চিকিৎসক, নার্স এবং সংশ্লিষ্ট সকলেই আন্তরিক রয়েছে। বিভিন্ন পর্যায়ে উচ্চ পর্যায়ের কমিটির সদস্যগণ কাজ করে যাচ্ছেন। বিজিবি, পৌরসভাসহ সংশ্লিষ্ট সকলে এ বিষয়ে সহযোগিতা করছে। তিনি শহরের বিভিন্ন খাবার হোটেলগুলোতে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনার কথা জানান।


কুষ্টিয়া পৌরসভা নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম জানান, জরুরী ভিত্তিতে কুষ্টিয়া পৌরসভার উদ্যোগে অস্থায়ীভাবে তিনটি পায়খানা স্থাপন এবং হাসপাতাল এলাকার জমে থাকা পানি নিস্কাশেন ব্যবস্থা করা হয়েছে।


কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন ডাঃ মোস্তাফিজুর রহমান জানান,প্রতি মুহুর্তে রোগী ভর্তি হচ্ছে। আক্রান্তদের বেশির ভাগই কুষ্টিয়া শহরের বিভিন্ন এলাকার। তাছাড়া বিভিন্ন বয়সের মানুষেরা রয়েছে। তিনি জানান, জেলার স্বাস্থ্য বিভাগের সকল পর্যায়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ছুটি বন্ধ রাখা হয়েছে। জেলা, উপজেলা এবং ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে সতর্কবার্তা পাঠিয়ে সেখানে পর্যবেক্ষনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। স্যালাইন পর্যাপ্ত রয়েছে।


এদিকে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীদের জায়গা সংকুলান না হওয়ায় বিজিবি কুষ্টিয়া সেক্টরের উদ্যোগে ৭ সদস্যের একটি টিম কাজ শুরু করেছে। বিজিবি কুষ্টিয়া সেক্টরের ভারপ্রাপ্ত সেক্টর কমান্ডার লে. কর্ণেল মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ জানান, নায়েব সুবেদার নুরুজ্জামানের নেতৃত্বে ৭ সদস্যের একটি মেডিকেল টিম কাজ শুরু করেছে। এ টিমটি ১০টি তাবু টাঙ্গিয়ে ৫০ জন রোগীর থাকার ব্যবস্থা করেছে। এছাড়া রোগীদের মাঝে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ, মেডিসিন প্রদান করছে।


শৈলকুপা উপজেলার জাঙ্গালিয়া গ্রামের ট্রাক ড্রাইভার আজাদের অবস্থা সবচেয়ে আশংকাজনক ছিল। সকালে ২হাত ও ২পায়ে ৪টি স্যালাইন দিয়ে রাখা হয় তাকে। আজাদের স্ত্রী জানান, রবিবার রাতে মজমপুর গেটের শিল্পী হোটেলে খাওয়ার পর ভোর রাতের দিকে সে অসুস্থ হয়ে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়ার পর তাঁর অবস্থা আশংকাজনক হলে চিকিৎসকরা তাকে একই সাথে ৪টি স্যালাইন পুশ করে।

হাসপাতালের স্বাস্থ্য সহকারী সালাউদ্দিন জানান, গত ৩দিনে ২২৯ জন ভর্তি হয়। বর্তমান শতাধিক চিকিৎসাধীন রয়েছে। হাসপাতালের রোগীদের সাথে কথা বলে জানা গেল। অধিকাংশই পানি পানের কারনেই ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে। কুষ্টিয়া মেডিকেল স্কুল (ম্যাটস) এর ১২জন শিক্ষার্থী ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে। এছাড়া শহরের বিভিন্ন মেসের শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বেশি মনে হচ্ছে।


(কেকে/এএস/আগস্ট ২৬, ২০১৪)