স্টাফ রিপোর্টার : ভুয়া আগাম জামিননামা তৈরির ঘটনায় পৌর কাউন্সিলর আমিনুল ইসলাম সহ ১৬ জন বৃহস্পতিবার (০৪ মার্চ) বিকেলে বগুড়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন জানালে বিচারক তাদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

উল্লেখ্য, গত ০৯ ফ্রেব্রুয়ারি বগুড়া চারমাথায় মোটর মালিক গ্রুপের দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় মশিউল আলম দীপন বগুড়া পৌরসভার ১৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আমিনুল ইসলামকে প্রধান করে ৩৩ জনের নাম উল্লেখ করে চাঁদাবাজি, মারপিট ও বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে মামলা দায়ের করেন। উক্ত মামলায় হাইকোর্ট থেকে ৩৩ আসামির মধ্যে ৩০ জনের জামিননামার ভুয়া নথি তৈরি করা হয়েছিল। ভুয়া জামিননামার বিষয়টি গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ধরা পড়ার পরপরই হাইকোর্টের বিচারপতি আবু জাফর সিদ্দিকী ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলমের বেঞ্চ আসামিদের গ্রেফতারের আদেশ দেন। জানা যায়, হাইকোর্টের বেঞ্চ হতে এমন কোনো আগাম জামিনের আদেশ দেয়া হয়নি। এমনকি সেখানে যেসব আইনজীবীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে, তাও ছিল মিথ্যা। ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১ তারিখে হাইকোর্ট হতে তাদের মামলার আগাম জামিন নথি নং ছিল- ৪০৫৪২, যা ছিল ভুয়া ও জালিয়াতি। কারন ১৪ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের কার্যতালিকায় চলমান মামলা নং ছিল- ৭৮৯০ এবং ২৪ ফেব্রুয়ারিতে ৯২৩০।

হাইকোর্ট সাতদিনের মধ্যে আসামীদের গ্রেফতার করতে বগুড়া পুলিশ সুপার, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এবং সদর থানার তদন্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেয়। সেইসঙ্গে আগামী ০৯ মার্চ ২০২১ তারিখ সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে পরবর্তী আদেশের জন্য হাইকোর্টের সামনে রিপোর্ট উপস্থাপনের নির্দেশ প্রদান করে। বিষয়টি তদন্ত করতে বগুড়ার মুখ্য বিচারিক হাকিমকেও নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। এরপর পরই আত্মগোপনে চলে যান পৌর কাউন্সিলর আমিনুল ইসলাম সহ ৩০ জন।

আজ বৃহস্পতিবার (৪ মার্চ) বিকেলে জেলা বগুড়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির হয়ে পৌর কাউন্সিলর আমিনুল ইসলামসহ ১৬ জন জামিনের আবেদন করলে আসামী ও রাষ্ট্র পক্ষের শুনানী শেষে সকল আসামীর জামিন আবেদন না মঞ্জুর করেন আদালতের বিচারক আসমা মাহমুদ। আদালতের নির্দেশে বৃহস্পতিবার বিকেলেই আসামীদের জেল হাজতে পাঠিয়ে দেয় কোর্ট পুলিশ। আসামীপক্ষে জামিন শুনানী করেন সিনিয়র অ্যাড. আব্দুল মোন্নাফ এবং রাষ্ট্রপক্ষে জামিনের বিরোধীতা করেন সিএসআই প্রদ্যুৎ কুমার। উল্লেখ্য, একইভাবে গতকাল (০৩ মার্চ) পৌর কাউন্সিলর আমিনুলের শ্যালক দীপ্তসহ ১৪ জন আসামী আদালতে হাজির হয়ে জামিনের আবেদন জানালে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক আসমা মাহমুদ জামিন আবেদন না মঞ্জুর করে জেলহাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেয়। বর্তমানে ৩০ জন আসামী জেলহাজতে।

জানা যায়, এর আগেও হত্যা ও দুর্নীতির মামলাসহ বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগ রয়েছে আলোচিত পৌর কাউন্সিলর আমিনুল ইসলামের নামে। তার বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত প্রায় ৪ কোটি টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলায় সাড়ে তিন বছরের বেশি সময় ধরে তদন্ত শেষে (মঙ্গলবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২০) দুদকের বগুড়া সমন্বিত কার্যালয়ে অভিযোগপত্র দাখিল করেন দুদকের প্রধান কার্যালয়ের গোয়েন্দা ইউনিটের উপ-পরিচালক এ কে এম মাহবুবুর রহমান। অভিযোগপত্রে আমিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে ২০০৪ সালের দুর্নীতি দমন কমিশন আইনের ২৬(২) এবং ২৭(১) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, ইতিপূর্বে বগুড়ায় পহেলা বৈশাখে (১৪ এপ্রিল ২০১৯) পরিবহন ব্যবসায়ী অ্যাডভোকেট মাহবুব আলম শাহীন হত্যা মামলার চার্জশীটভুক্ত প্রধান আসামী বগুড়া পৌরসভার ১৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আমিনুল ইসলাম। গত প্রায় বিশ মাসে অজ্ঞাত কারণে সেই মামলার চার্জ গঠন হয়নি। অদৃশ্য ক্ষমতাবলে আমিনুল ইসলাম সবসময় ছিলেন ধরা ছোঁয়ার বাহিরে। উল্লেখ্য যে, সম্প্রতি বগুড়া পৌরসভা নির্বাচনে আমিনুল ইসলাম আওয়ামী লীগ বিরোধী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বগুড়া পৌর নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে সরকারি দলের কতিপয় নেতা কর্মীর সহায়তায় জয়ী হন।

আগাম জামিন জালিয়াতি ও আমিনুল ইসলামকে কারাগারে প্রেরণ বিষয়ে জাতীয় শ্রমিক লীগ বগুড়া জেলা শাখার যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও বগুড়া জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ আব্দুল গফুর প্রামাণিক জানান, বিএনপি সরকারের সময় ওয়ার্ড কাউন্সিলর আমিনুল ইসলাম পরিচিত ছিল একজন জামায়াত পন্থী মানুষ হিসেবে। তার পিতা আলহাজ্ব আব্দুল লতিফ মন্ডল জামায়াতের সক্রিয় কর্মী। বাস টার্মিনালের বিভিন্ন পয়েন্টে টাকা আদায়ের নামে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে আত্মোসাৎ করেছে। একসময় তাদের কিছুই ছিল না, তার বাবা আব্দুল লতিফ মন্ডল ছিলেন মোটর শ্রমিকের একজন সামান্য সহ-সাধারণ সম্পাদক। এখন তারা কোটি কোটি টাকার মালিক। নিজে টিকে থাকার জন্য এবং টাকা হাতিয়ে নিয়ে টাকার পাহাড় গড়ার জন্য আব্দুল মান্নান আকন্দ এবং মতিন সরকারকে হাত করে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করেছে।

এলাকার মানুষকে ভয়ভীতি দেখিয়ে জায়গা জমি দখল করে। কখনো বিএনপি ক্ষমতায় এলে সে আবার বিএনপিতে যোগ দিয়ে ত্রাসের রাজত্ব চালিয়ে যাবে। তার সন্ত্রাসী বাহিনীর কারনে বাস টার্মিনালে তাদের বিরুদ্ধে কথা বলতে কেউ সাহস পায়না। তাদের বিরুদ্ধে কথা বললে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী করে, হাজত খাটায়। হাইকোর্টের মহামান্য বিচারপতির স্বাক্ষরসহ কাগজ জাল করতে পারে যে, সে সব পারে। ফাঁসী বা যাবজ্জীবন কারাদন্ডের আসামীকে বের করতে আমিনুল হাইকোর্ট থেকে সবরকম কাগজ তৈরী করে আনতে পারে। হাইকোর্ট থেকে এর আগেও কাগজ এনে হাট-বাজারের ডাক বন্ধ করেছিল, পরে দেখা গেল পৌরসভাকে ফাঁকি দিয়ে বাজারের টাকা সংঘবদ্ধভাবে হাতিয়ে নিয়েছে। ইতিপূর্বে বিএনপির সরকারের সময় ওমর ফারুক ও শাহীনকে ব্যবহার করে সে বাস টার্মিনাল দখল করে, বাস টার্মিনালের টাকার জন্য পরে শাহীনকেও নির্মমভাবে হত্যা করতে সে দ্বিধা করেনি। ইতিপূর্বে আমিনুলের দ্বারা বহু মানুষ নির্যাতিত হয়েছে। প্রশাসনের নিকট বিনীত অনুরোধ জানাবো আর কেউ যেন নতুন করে নির্যাতিত না হয়।

(আর/এসপি/মার্চ ০৪, ২০২১)