মানিক সরকার মানিক, রংপুর : রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিশেষ প্রকল্পে দূর্নীতির অভিযোগে নির্বাহী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলমকে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। এছাড়া ভূয়া নিয়োগপত্র দিয়ে টাকা লেনদেন করার প্রমাণ পাওয়া গেছে। রবিবার ঢাকায় অনুষ্ঠিত ৭৭ তম বিশেষ সিন্ডিকেটে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। নাম প্রকাশ না করা শর্তে সিন্ডিকেটের এক সদস্য বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এদিকে ভিসির অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগেবিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারিরা এখন দু’ভাগে বিভক্ত। শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক তাবিউর রহমান প্রধানসহ শিক্ষকদের একাংশ ভিসির পক্ষ নিয়ে বলছেন, যারা এখন উপাচার্যের বিরোধীতা করছেন, আন্দোলন করছেন, তারাই দু’বছর আগে উপাচার্যের খুব কাছের মানুষ ছিলেন। এখন সুবিধা নিতে পারছেন না বলে আন্দোলন করছেন।

তাবিউর রহমান আরো জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে বঙ্গবন্ধু পরিষদের এক নেতা যে সাংবাদিক সম্মেলন করেছিলেন, সেই নেতার বিয়ের উকিল বাপ ছিলিনে ভিসি স্যার। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ে তার বউয়ের চাকুিরও দিয়েছিলেন তিনি। আজ স্বার্থের কারণে পর হয়েছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম জানান, প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিশেষ প্রকল্পে দুর্নীতের ঘটনাবিশ্ববিদ্যালয়মঞ্জুরি কমিশনের তদন্তে উপাচার্য দোষি সাব্যস্ত হওয়ায় তার বিরদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি। কিন্তু তিনি উল্টো আমাকে বরখাস্ত করেছেন।

জানা গেছে, স্থায়ীভাবে বরখাস্ত হওয়া নির্বাহী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলমকে ২০১৭ সালের ২৫ মার্চবিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ উন্নয়ন প্রকল্পের টেন্ডার ডকুমেন্টস ও কাগজপত্রে অনিয়মের অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত করেবিশ্ববিদ্যালয়প্রশাসন। অপরদিকে ভুয়া নিয়োগপত্র দেখিয়ে চাকরি দেয়ার নামে টাকা লেনদেনের ঘটনায় সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের সেকশন অফিসার মনিরুজ্জামান পলাশ, বঙ্গবন্ধু হলের শেরে জামান সম্রাটকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। একই ঘটনায় মাষ্টারোল কর্মচারি গুলশান আহমেদ শাওনকে স্থায়ী বরখাস্ত করা হয়েছে। এর আগে চলতি বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি কর্মকর্তা পদে জাল নিয়োগপত্র দেখিয়ে এক চাকরি প্রার্থীর কাছে ১৩ লাখ টাকা লেনদেনের একটি ভিডিও ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। যা বাংলা ৭১ কাগজে প্রকাশিত হয়েছে। ভিডিওতে সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের সেকশন অফিসার গুলশান আহমেদ শাওনকে দেখা যায় টাকা লেনদেনের ঘটনায়।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি গাজী মাজহারুল আনোয়ার জানান, বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারিরা এখন দু’ভাগে বিভক্ত। সমিতির সাধারণ সম্পাদকসহ কিছু শিক্ষক উপাচার্যের দুর্নীতিসহ বিভিন্ন অপকর্ম ঢাকার চেষ্টা করছেন। আগামী ১৪ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জরী কমিশন থেকে একটি তদন্ত দল আসার কথা রয়েছে। আমরা তাদের হাতে উপাচার্যের অনিয়মের নমুনা তুলে দিতে চাই। এই অনিয়মের বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিবাদ অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আব্দুল লতিফ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে আবেগঘন স্ট্যাটাস দিয়েছেন। সোমবার দুপুরে তার ব্যক্তিগত ফেইসবুক প্রোফাইল থেকে যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও প্রমোশন না পাওয়ায় এই আবেগঘন স্ট্যাটাস দেন।

তার স্ট্যাটাসটি তুলে ধরা হলো: ‘আজকে তাবিউর ভাই, সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পেয়েছেন। একই সাথে জয়েন করেছিলাম। জাপান থেকে পিএইচডি করেছি, বিশ্বের সেরা সব জার্নালে প্রকাশনা করেছি। সামর্থ্যের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে শিক্ষকতা করবার চেষ্টা করেছি। আমি পেলাম না, ওনারা পেলেন। শিক্ষক সমিতির নেতা হিসাবে একবারও মনে হলো না এক বঞ্চিতের কথা ? মাননীয় উপাচার্যকে বলেছি, উনি ফেইসবুকে, পত্রিকায় তাঁর প্রশংসা করে কলাম লিখতে বলেন। সর্বশেষ উপাচার্য মহোদয় কর্তৃক আইন লঙ্ঘন করে নিয়োগকৃত রসায়ন বিভাগের বিভাগীয় প্রধানকে ও মহামান্য হাইকোর্টের আদেশ অমান্য করে তাঁকে সহযোগিতা করতে বলেন। আমি বিনীতভাবে না করেছি। সেলিম স্যারকেও বলেছি-উনি বলেছেন তিনি নাকি অথর্ব কিছু করতে পারবেন না বরং তিনি কোর্ট টাই বানানো বা কলাম লিখতে পরামর্শ দেন। আমি কার্যত কোনদিন শিক্ষক রাজনীতি করিনি বা ইচ্ছাও ছিলো না। জ্ঞাতভাবে একাডেমিক কোন অন্যায় করিনি। আমার বাবাও একজন শিক্ষক। আমার পারিবারিক বা নৈতিক শিক্ষা আমাকে এই গোলামী করতে বাঁধা দিয়েছে। শুনি এখান থেকে তালিকা যায়, কাকে প্রমোশন দেওয়া হবে আর কাকে বঞ্ছিত করা হবে। এই জুলুম, এই অবিচার একদিন আল্লাহ্ বুঝিয়ে নিবেন। ভিসি ডঃ কলিম উল্লাহ স্যার আপনারা মনে রাখবেন আমাকে যে বঞ্ছিত করলেন, জুলুম করলেন আমি আগে মরলে আখিরাতে আর আপনারা আগে মরলে আপনাদের জানাজায় গিয়ে শত মানুষের সামনে এর হিস্যা চাইবো। আল্লাহ্ আপনাদের অনুধাবনের সুযোগ দিন। আল্লাহ্ সর্বোচ্চ ন্যায় বিচারক’।

উক্ত স্ট্যাটাসের বিষয়ে তিনি সাংবাদিকদের জানান, ‘আমি আমার প্রোমোশনের জন্য বর্তমান অবৈধ বিভাগীয় প্রধান তানিয়া তোফাজ এবং ভিসিকে বারবার ফর্মালি একাডেমিক মিটিং করার এবং আমার প্রমোশন নিয়ে বললেও তারা কোনোভাবেই আমার কথা শোনেন নি। পরিস্থিতি এমন ছিলো যে, আমাকে আবেদনই করতে দেননি। এই স্ট্যাটাস নিয়ে তিনি বলেন, ‘অনেক অভিমান নিয়েই স্ট্যাটাসটি দিয়েছি। আমার মত আরও অনেক যোগ্য শিক্ষকরাও পদোন্নতি পাননি। অনেকেই তৈলবৃত্তি করে প্রমোশন পেয়েছেন।

(এম/এসপি/মার্চ ০৯, ২০২১)