আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল : সুগন্ধা নদীর ভাঙ্গনের কবলে পরে মারাত্মক হুমকির মুখে পরেছে দক্ষিণাঞ্চলের সাথে সড়ক পথে যোগাযোগ রক্ষাকারী একমাত্র বরিশাল-ঢাকার ৮নম্বর জাতীয় মহাসড়কের বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার দোয়ারিকা এলাকার বীরশ্রেষ্ঠ মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সেতু। সুগন্ধা নদীর ভয়াবহ ভাঙ্গনে প্রায় দেড়’শ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত জনগুরুত্বপূর্ণ এ অবকাঠামো নদী গর্ভে চলে যাওয়ার উপক্রম হলেও তা রক্ষায় কার্যকরী কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বলছে সেতুটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের। তাই এটি রক্ষার দায়িত্ব তাদের। সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) বলছে নদীভাঙ্গন প্রতিরোধ সম্পূর্ণ পাউবোর কাজ। তাই ভাঙ্গন রোধের কোন কারিগরি জ্ঞান বা অর্থ বরাদ্ধ নেই সওজের। সরকারি এ দু’দফতরের দায় চাপানোর ঠেলাঠেলি ও বরাদ্ধের অজুহাতে দক্ষিনাঞ্চলের সড়ক পথের যোগাযোগের গুরুত্বপূর্ন এ সেতুটি মারাত্মক হুমকির মুখে রয়েছে।

যে কোন সময় সেতুটি ধ্বসে পরার আশংকা করছেন খোঁদ ওই দু’দফতরের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারাই। সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রমত্তা সুগন্ধা নদী ইতোমধ্যেই জনগুরুত্বপূর্ণ ৩৮৮ মিটার দৈর্ঘ্য ও সাড়ে ৭ মিটার প্রস্থের সেতুটির ‘ওয়েভ প্রটেকশন ড্যাম’-এর প্রায় পুরোটাই গ্রাস করে নিয়েছে। নদী ভাঙ্গন মূল সেতুটির বরিশাল প্রান্তের এবাটমেন্টের বাইরের নদী তীর রক্ষাবাঁধের ৮০ ভাগ এলাকাও গ্রাস করেছে। এমনকি সুগন্ধা ইতোমধ্যে সেতুটির বরিশাল প্রান্তের সংযোগ সড়কটির মাত্র ১৫ মিটারের মধ্যে আঘাত হানতে শুরু করেছে।


নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক পানি উন্নয়ন বোর্ডের এক প্রকৌশলী বলেন, জনগুরুত্বপূর্ণ ওই সেতু ও তার সংযোগ সড়ক রক্ষায় ২০১২ সালের ২ আগস্ট পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের এক যৌথসভায় ‘বীরশ্রেষ্ঠ মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সেতুর ভাঙ্গন প্রতিরোধ কাজ শুরু করার সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়েছিলো। সভায় যোগাযোগ মন্ত্রণালয় পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়কে তহবিল বরাদ্দ দিলে পানি উন্নয়ন বোর্ড ‘ডিপোজিট ওয়ার্ক’ হিসেবে ভাঙ্গন প্রতিরোধে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সে সময়ই এ লক্ষ্যে প্রায় সোয়া ১১ কোটি টাকার একটি দরপত্র আহ্বান করে সব আনুষ্ঠানিকতা আগাম সম্পন্ন করে রাখে। কিন্তু প্রায় দুই বছরেও যোগাযোগ মন্ত্রণালয় কোনো তহবিলের সংস্থান করেনি। পরবর্তীতে তারা ‘জলবায়ু পরিবর্তন ঝুঁকি তহবিল-সিসিটিএফ’ থেকে অর্থ বরাদ্দের লক্ষ্যে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করেন। কিন্তু অতিসম্প্রতি পরিবেশমন্ত্রী ওইখাত থেকে সেতুটি রক্ষায় কোনো তহবিল বরাদ্দের বিষয় নাকচ করে দিয়েছেন। ফলে প্রায় দেড়’শ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ওই সেতু ও সংযোগ সড়কের অস্তিত্ব রক্ষার বিষয়টি চরম অনিশ্চয়তার মুখেই থাকছে।

এ ব্যাপারে সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী মো. খালেদ শাহেদ বলেন, নিরাপত্তা প্রাচীরের ২৫ ফুটের মতো অংশ কিছুদিন পূর্বে ভেঙ্গে নদী গ্রাস করে নিয়েছে। গত চারদিন পূর্বে ভাঙ্গনের তীব্রতা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। বরিশাল-২ আসনের সংসদ সদস্য এ্যাডভোকেট তালুকদার মোঃ ইউনুস বলেন, গুরুত্বপূর্ন এই সেতুটি এখন চরম ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। বরিশাল-৩ আসনের সাংসদ এ্যাড. শেখ মোঃ টিপু সুলতান ক্ষোভের সাথে বলেন, সরকারি প্রতিষ্ঠান পাউবো এবং সওজ একে অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে ভাঙ্গন প্রতিরোধের দায় এড়ানোর চেষ্টা অত্যন্ত দুঃখজনক।


সূত্রমতে, ১৯৯৮ সালে তৎকালীন চীফ হুইপ আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর প্রাণপন চেষ্ঠায় বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কের উজিরপুরের শিকারপুরের সন্ধ্যা ও দোয়ারিকার সুগন্ধা নদীর ওপর দু’টি সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়।

‘কুয়েত উন্নয়ন তহবিল-কেএফএআইডি’র আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় দীর্ঘ প্রতীক্ষিত দু’টি সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন বর্তমান ও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আনুষ্ঠানিক ভাবে সেতু দুটি উদ্বোধনের পর বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর জলিল ও বীরশ্রেষ্ঠ মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের নামানুসারে সেতু দু’টির নামকরণ করা হয়। এ দুই মুক্তিযোদ্ধাই বরিশালের কৃতী সন্তান।


(টিবি/এএস/আগস্ট ২৬, ২০১৪)