স্টাফ রিপোর্টার : করোনার শুরুর দিকে বিশ্ববাজারে তেলের দাম অস্বাভাবিকভাবে কমে যায়। সে সময় বাংলাদেশ তেল কিনে রাখলে বড় ধরনের মুনাফা করতে পারত। কম দামে তেল কেনার শক্তি ও সামর্থ্য দুটিই ছিল বাংলাদেশের। কিন্তু দক্ষতার অভাবে বাংলাদেশ এই সুযোগ নিতে পারেনি বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম।

শনিবার ইকোনোমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত ‘ডায়ালগ অন বিজনেস অ্যান্ড ইকোনমি’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, ‘করোনার শুরুর দিকে বিশ্ববাজারে পেট্রোলের দাম ৫ ডলারে নেমে এসেছিল। সে সময় ৫ ডলারে তেল কিনে রাখলে ৩০ ডলারে বিক্রি করা সম্ভব হতো। এই তেল কেনার শক্তি ও সামর্থ্য সবই ছিল আমাদের। কিন্তু দক্ষতার অভাবে এটা সম্ভব হয়নি।’

পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থার চেয়ারম্যান রিজার্ভের অর্থ দ্রুত বিনিয়োগের পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘সামনে আমাদের রিজার্ভ ৫০ বিলিয়ন ডলার হয়ে যাবে। এই রিজার্ভের অর্থের যোগান যারা দেন, তাদের টাকা কিন্তু পরিশোধ করা হয়ে গেছে। এই রিজার্ভ ধরে রাখলে দায় বাড়বে। তাই দ্রুত রিজার্ভের অর্থ বিনিয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে।’

পুঁজিবাজার সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘কমিশনের দায়িত্ব নেয়ার পর আমি দেখলাম পুঁজিবাজারের যে চরিত্র, তার বেশকিছু এখানে অনুপস্থিত। ব্যাংক দীর্ঘ মেয়াদের অর্থায়ন করছে। অথচ দীর্ঘ মেয়াদের অর্থের যোগান দেয়ার কথা পুঁজিবাজারের। এখানে ব্যাংককে দীর্ঘ মেয়াদে ঋণ দিতে বললে ব্যাংকের প্রতি অন্যায় হবে। পুঁজিবাজার যাতে দীর্ঘমেয়াদী অর্থের উৎস হয়, সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি।’

বন্ড মার্কেটের প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, ‘আমাদের এখানে ৫-৬টা কোম্পানি আছে, যাদের বার্ষিক টার্নওভার ২০ হাজার কোটি টাকার বেশি। এসব প্রতিষ্ঠান যাতে বন্ড ছেড়ে অর্থ সংগ্রহ করতে পারে, সে জন্য আমরা বন্ডের ওপর জোর দিচ্ছি। সামনে বাংলাদেশকে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে নিয়ে যেতে হলে বন্ডের বিকল্প নেই।’

প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) বিষয়ে শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, ‘আমরা দেখে, বুঝে আইপিও দেয়ার চেষ্টা করছি।’

সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য লভ্যাংশের সীমা বেঁধে দেয়া সংক্রান্ত এক প্রশ্নের উত্তরে বিএসইসির চেয়ারম্যান বলেন, ‘একেক ব্যাংকের অবস্থা একেক রকম। সুতরাং আমরা মনে করি ব্যাংকের লভ্যাংশের বিষয় বেঁধে দেয়া ঠিক হবে না। এখানে অনেক ব্যারিয়ার আছে। এটা নিয়ে আমরা আলাপ-আলোচনা করে ঠিক করবো। তবে এখানে শেয়ারহোল্ডার ও এজিএম’র একটা বড় ভূমিকা আছে, সেটাকে কোনোভাবেই উপেক্ষা করা উচিত হবে না।’

আরেক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘শেয়ারবাজারে ১৯৯৬ সালের মতো ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা আর নেই। কেউ চাইলেই পুঁজিবাজার নিয়ে খেলতে পারবে না। গ্রুপ করে হয়তো বাজারে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করা সম্ভব, তবে সেটা করতে গেলেও ধরা পড়ে যাবে। এরপরও যদি সবাই একদিনে বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নেয়, এ ব্যাপারে আমি কিছু বলতে পারব না। কিন্তু বাজারকে কেউ যদি ফেলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, তার অসুবিধা আছে। সরকার বদ্ধপরিকর, কেউ এখানে অসুবিধা সৃষ্টি করলে সরকার সহ্য করবে না।’

জাঙ্ক কোম্পানি সংস্কার নিয়ে বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, ‘ম্যানেজমেন্ট সমস্যা অথবা মালিকের অসৎ উদ্দেশ্যের কারণে কোম্পানি ধ্বংস হয়। এজন্য আমরা প্রথমে পর্ষদ পুনর্গঠন করে কোম্পানি ঠিক করার উদ্যোগ নিচ্ছি। তাতে কাজ না হলে এক্সিটের (পুঁজিবাজার থেকে বের হয়ে যাওয়া) ব্যবস্থা আছে। এ ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি ৯৯.৯ শতাংশ কোম্পানির যথেষ্ট সম্পদ আছে।’

ইনসাইডার ট্রেডিংয়ের বিষয়ে করা এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘ইনসাইডার ট্রেডিং সঙ্গে সঙ্গে আমাদের সফটওয়্যারে ধরা পড়ে। আমরা সংশ্লিষ্টদের ডেকে আনি। বিও হিসাব বন্ধ করে দেয়া, জরিমানার মতো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়। সবকিছুই এমনভাবে করি, যাতে পেনিক সৃষ্টি না হয়।’

(ওএস/এসপি/মার্চ ১৩, ২০২১)