উজ্জ্বল হোসাইন, চাঁদপুর : চাঁদপুর লঞ্চঘাটে অটোবাইক ও সিএনজি অটোরিকশা চালকদের সীমাহীন নৈরাজ্যে যাত্রীরা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। ঘাটের পন্টুন, গ্যাংওয়ে ও চত্বরজুড়ে অটোবাইক ও সিএনজি অটোরিকশা চালকদের সীমাহীন দৌরাত্ম্য চরম পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে। কোনো ধরনের নিয়ম শৃঙ্খলাই তারা মানছে না। লঞ্চ একটি ঘাটে ভিড়লেই হলো। পন্টুনে গিয়ে হুমড়ি খেয়ে শুধু চিৎকার চেঁচামেচি করতে থাকে যাত্রী নেয়ার জন্যে। গ্যাংওয়েতেও জটলা বেঁধে থাকে। আর ঘাট চত্বরজুড়ে এলোপাতাড়িভাবে অটোবাইক ও সিএনজি অটোরিকশা ফেলে রাখে। তাদের এই বিশৃঙ্খলার কারণে কোনো যাত্রী নির্বিঘ্নে লঞ্চ থেকে নামতে পারে না। নিজেদের গাড়িতে ওঠানোর জন্যে যাত্রীদের ব্যাগ, মালামাল ও হাত ধরে টানাটানি করে থাকে। এ সবের জন্যে যাত্রীরা খুবই বিরক্ত এবং নিরাপত্তাহীনতা অনুভব করছে। দীর্ঘদিন যাবত এমন নৈরাজ্য চললেও প্রশাসনের কোনো ব্যবস্থাই তা ঠেকানো যাচ্ছে না।

চাঁদপুর লঞ্চঘাটটি এখন নৌপথে আন্তঃজেলা যাতায়াতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্পটে পরিণত হয়েছে। দিন-রাত চব্বিশ ঘণ্টা ছোট-বড় ত্রিশের অধিক লঞ্চ এই ঘাটে ভিড়ে। প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রী এই ঘাট দিয়ে লঞ্চযোগে দেশের বিভিন্ন স্থানে আসা-যাওয়া করে থাকে। যারা লঞ্চে এসে এই ঘাটে নামে, তারা চাঁদপুর শহরসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলা এবং আশপাশের জেলা-উপজেলা যেমন নোয়াখালী, কুমিল্লা, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, রায়পুর, রামগঞ্জ, শরীয়তপুর যায়।

আবার অনেকে চট্টগ্রাম, ফেনী, কুমিল্লা থেকে আন্তঃনগর মেঘনা এক্সপ্রেসে এসে চাঁদপুর লঞ্চঘাট দিয়ে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা যেমন বৃহত্তর বরিশাল ও খুলনায় নৌপথে যাতায়াত করে থাকে। আবার দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে চট্টগ্রাম যাওয়ার উদ্দেশ্যে নৌ পথে এসে চাঁদপুর লঞ্চঘাটে নেমে মেঘনা ট্রেনে চড়ে। এসব জেলার হাজার হাজার মানুষ প্রতিদিন চাঁদপুর লঞ্চঘাটে যাত্রা বিরতি দেয়। আর এই মানুষগুলো যখন লঞ্চযোগে এসে চাঁদপুর ঘাটে নামে, তখন তারা সীমাহীন বিড়ম্বনার শিকার হন।

লঞ্চ ঘাটে এসে ভিড়া মাত্র বিরক্তিকর এক নৈরাজ্য পরিস্থিতির শিকার হন যাত্রীরা। শুরু হয়ে যায় গাড়িতে যাত্রী নেয়ার অসুস্থ প্রতিযোগিতা। চিৎকার চেঁচামেচি আর যাত্রীদের মালামাল ও গায়ে ধরে টানাটানি করতে থাকে অটোবাইক ও সিএনজি অটোরিকশার চালকরা। এই বিরক্তিকর পরিস্থিতিতে যাত্রীরা অসহায় হয়ে পড়ে। অনেকে হয়রানির শিকারও হন। অন্য জেলার মানুষগুলো যখন চাঁদপুর লঞ্চঘাটে নেমে এই পরিস্থিতির শিকার হন, তখন তারা চাঁদপুর সম্পর্কে খুবই বাজে ধারণা পান।

লঞ্চঘাটের এই অনিয়ম ও বিশৃঙ্খল অবস্থা থেকে যাত্রীদের মুক্তি দিতে ইতিপূর্বে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বহুবার উদ্যোগ নেয়। নানা ব্যবস্থাও নেয়া হয়েছে। কিন্তু কোনো উদ্যোগ/ব্যবস্থাই কাজে আসে নি। জিহাদুল কবির চাঁদপুরের পুলিশ সুপার থাকাকালীন তিনি নিজে উদ্যোগী হয়ে লঞ্চঘাট চত্বরে বিভিন্ন উপজেলা ও জেলার নাম উল্লেখ করে সাইনবোর্ড টানিয়ে দিয়ে জায়গা নির্দিষ্ট করে দেন সিএনজি অটোরিকশা রাখার জন্যে। আর আরেক পাশে অটোবাইক রাখার স্থান নির্ধারণ করে দেন। তারা তাদের নির্দিষ্ট স্থানের বাইরে যেনো না আসতে পারে সে জন্য শিকল দিয়ে ব্যারিকেড দিয়ে দেয়া হয়। জিহাদুল কবির তখন মডেল থানার একজন এসআইসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্য সেখানে নিযুক্ত করে দেন শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্যে। যে কয়দিন পুলিশ ছিল সে কদিনই ঠিক ছিল। আর পুলিশি ব্যবস্থাটা ছিল সাময়িক। কিন্তু জরুরি প্রয়োজনে যখন এখান থেকে পুলিশ উঠিয়ে নেয়া হয়, তখন আবার আগের বিশৃঙ্খল অবস্থায় ফিরে আসে।

সর্বশেষ সদ্য বিদায়ী পুলিশ সুপার মোঃ মাহবুবুর রহমানের সময় সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার স্নিগ্ধা সরকার লঞ্চঘাটস্থ নৌ পুলিশ ফাঁড়িতে সভা করেন ঘাটের এই বিশৃঙ্খলা দূর করার জন্যে। সে সভায় ঘাটের ইজারাদার, অটোবাইক ও সিএনজি অটোরিকশা চালকদের প্রতিনিধিরা, বিআইডব্লিউটিএ’র তথা বন্দর কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন পর্যায়ের সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন। সে সভায় বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তখনও ওই সভার পর কিছুদিন শৃঙ্খলা বজায় ছিল। পরে আবার আগের অবস্থায় ফিরে আসে।

এদিকে যাত্রীরা প্রতিনিয়ত এমন নৈরাজ্যের শিকার হলেও স্থানীয় প্রভাবশালী গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এমনকি বিআইডব্লিউটিএ’র লোকজন এবং কাছেই থাকা নৌ পুলিশ সদস্যদের যেনো কিছুই করার নেই। তারা এসব বিশৃঙ্খল ও নৈরাজ্যকর অবস্থা শুধু অসহায় দর্শকের ন্যায় চেয়ে চেয়ে দেখে থাকেন। এখানে যেনো তাদের কোনো সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয় কোনো দায়িত্ব নেই। ভুক্তভোগীসহ চাঁদপুরবাসী এ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক এবং পুলিশ সুপারের কার্যকর পদক্ষেপ কামনা করছেন।

(ইউ/এসপি/মার্চ ২১, ২০২১)