চৌধুরী আবদুল হান্নান


ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ও সেনাপ্রধান জেনারেল মানেক শ’র কথা বলছি। ‘৭১ এর এপ্রিল, ভারতীয় মন্ত্রীসভায় বাংলাদেশে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর নিষ্ঠুর হত্যাযজ্ঞের বিরুদ্ধে ভারতের সামরিক হস্তক্ষেপের বিষয়টি আলোচিত হয়। সেখানে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল মানেক শ’কে উপস্হিত থাকতে বলা হয়।

ইন্দিরার মধ্যে অস্থিরতা প্রস্ফুটিত, চিরশত্রু পাকিস্তানকে উচিৎ শিক্ষা দেয়ার মেক্ষম সময়, এ সুযোগ কি হাতছাড়া করা যায় ? অন্যদিকে তাঁর দেশে আশ্রয় নেয়া শরনার্থীদের সসন্মানে স্বাধীন দেশে ফেরত পাঠানো।

প্রধানমন্ত্রী খুবই ক্ষুব্ধ ও ব্যথিত ছিলেন, বিপুল সংখ্যা গরিষ্ঠতা নিয়ে তিনি ক্ষমতায়, মন্ত্রীসভায় তাঁর কথাই শেষ কথা। তাছাড়া ভারতকে প্রটেক্ট করার জন্য আন্তর্জাতিক পরিমল্ডলে মহীরুহের মতো দাঁড়িয়ে আছে পরাশক্তি সোভিয়েত ইউনিয়ন।

তিনি সেনাবাহিনী প্রধানকে বলেন, ভারতীয় বাহিনী বাংলাদেশে মার্চ করুক—এটাই আমি চাই। উত্তরে সেনাপ্রধান বলেন, এর অর্থ হচ্ছে যুদ্ধ। ইন্দিরা বলেন, যদি এটা যুদ্ধ হয়, আমার আপত্তি নেই। মানেক শ’ : মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি কি প্রস্তুত ? আমি কিন্ত প্রস্তুত নই। অল্প দিনের মধ্যেই বর্ষা নেমে আসবে, তখন পূর্বপাকিস্তানের নদীগুলো সমুদ্রের মতো হয়ে যায়, এক তীর থেকে অন্য তীর দেখা যায় না। এ সময়টা যুদ্ধের জন্য আমাদের উপযুক্ত সময় নয়।

মানেক শ’ আরও কিছু সমস্যার কথা তুলে ধরে বললেন— আমি জানি, আপনি কি চাইছেন। কিন্ত আমাকে আমার মতো প্রস্তুত হতে সময় দিতে হবে। পরাজয়ের আশংকা নিয়ে যুদ্ধ করতে চাই না, আমি আপনাকে শতভাগ সফলতার নিশ্চয়তা দিচ্ছি। মন্ত্রীসভার বৈঠক শেষে একে একে সবাই চলে গেলেও প্রধানমন্ত্রী সেনাপ্রধানকে বসতে বললেন।

সেনাপ্রধান বলেন, আমি কি মানসিক কিংবা শারীরিক কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ পত্র পাঠিয়ে দেব ?

উত্তরে প্রধানমন্ত্রী তাকে শান্ত হতে বলেন এবং তার কাজে কেউ হস্তক্ষেপ করবে না—এ আশ্বাসও দেয়া হলো।

পরের ঘটনাগুলো ইতিহাসের অংশ, পাকিস্তানের একটি ডানা ভেঙে পঙ্গুত্ব বরণ আর বিশ্বের মানচিত্রে লাল-সবুজের পতাকা সুশোভিত স্বাধীন একটি দেশ বাংলাদেশের অভ্যুদয়।

মানেক শ’ বরখাস্ত হতে পারতেন কিন্ত যুদ্ধ জয়ের কারণে তাকে ফিল্ড মার্শাল পদে উন্নীত করা হয় । মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সহযোগীতা পাওয়ায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা ত্বরান্বিত হয়েছিল, অন্যথায় স্বাধীনতা পেতে নয় মাসের স্হলে নয় বছরও লাগতে পারতো ।

‘৭১ এ বর্বর পাকিস্তানি দ্বারা আক্রান্ত নিরীহ বাঙালিদের পাশে সহযোগিতার হাত নিয়ে দাঁড়াবার জন্য এ মুজিব বর্ষে আর একবার শ্রদ্ধার্ঘ প্রয়াত ইন্দিরা গান্ধীর প্রতি ।

Source: Writings from D P Dhar,the then Indira Gandhi’s adviser and diplomat and from Srinath Raghavan,prominent historian and professor of Ashoka University, India.

লেখক : সাবেক ব্যাংকার।