উজ্জ্বল হোসাইন, চাঁদপুর : সারাদেশে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। চাঁদপুরও এর বাইরে নয়। বরং সারাদেশের গড় হিসেবের সাথে তুলনা করলে দেখা যায় যে, চাঁদপুর আক্রান্তের দিক দিয়ে এক পয়েন্ট এগিয়ে আছে। যেমন জাতীয়ভাবে স্যাম্পল পরীক্ষার আনুপাতিক হারে পজিটিভ তথা করোনায় আক্রান্ত পাওয়া যায় ১১ শতাংশ। আর চাঁদপুরে এর হার হচ্ছে ১২ শতাংশ। তবে গ্রামগঞ্জের মানুষের স্যাম্পল দেয়ার ব্যাপারে আগ্রহ একেবারেই কম। কোনো কোনো উপজেলায় স্যাম্পল পরীক্ষা সপ্তাহে শূন্যের কোটায়ও থাকে বলা চলে। এরপরও যাই কিছু স্যাম্পল পরীক্ষা করা হয় তাতে অর্ধেকের মতো পজিটিভ রিপোর্ট আসে। এই চিত্র বলে দেয় উপজেলাগুলোতে স্যাম্পল দেয়া এবং পরীক্ষার পরিমাণ বাড়লে পজিটিভের সংখ্যা আরো বেড়ে যাবে। যেমন গত সোমবার হাজীগঞ্জ উপজেলায় স্যাম্পল পরীক্ষা করা হয় ৯ জনের। এর মধ্যে পাঁচজনেরই রিপোর্ট পজিটিভ আসে। চাঁদপুরে করোনার হার বেড়ে যাওয়ার এমন চিত্র দেখে চিকিৎসকরাও উদ্বিগ্ন।

চাঁদপুর সিভিল সার্জন কার্যালয় এবং জেলা সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ২৪ মার্চ পর্যন্ত সদর হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে রোগী ভর্তি আছে ১৩ জন। এর মধ্যে ৮ জন হচ্ছে কোভিড তথা করোনা রোগী। আর বাকি পাঁচজন ননকোভিড। আক্রান্ত ৮ জনের মধ্যে তিনজন গুরুতর। এই তিনজনের মধ্যে একজনকে ঢাকা রেফার করা হয়েছে। তার অক্সিজেনের স্যাচুরেশান ৮০ থেকে ৮৫ নেমে যায়। এছাড়া অন্য যারা গুরুতর অবস্থায় আছেন তাদের অক্সিজেন ৯০ পর্যন্ত নেমে আসে।

হাসপাতালের আরএমও ও করোনা বিষয়ক ফোকালপার্সন ডাঃ সুজাউদ্দৌলা রুবেল জানান, এক সপ্তাহ যাবৎ চাঁদপুরে করোনায় আক্রান্ত রোগী বাড়ছে। হাসপাতালে এখন প্রতিদিন দশজনের উপরে রোগী ভর্তি থাকছে। এর মধ্যে কোভিড রোগী থাকে ৭-৮ জনের মতো। এক সপ্তাহ আগে ২/৩ জন করে রোগী ভর্তি থাকতো হাসপাতালে। এর মধ্যে করোনা আক্রান্ত রোগী একজন দুজন থাকতো, আবার মাঝে মধ্যে আক্রান্ত কোনো রোগীই থাকতো না। এক সপ্তাহের ব্যবধানে হঠাৎ আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় চিকিৎসকরাও উদ্বিগ্ন। তাঁরা বুঝে উঠতে পারছেন না কী কারণে হঠাৎ করোনা সংক্রমণের হার ঊর্ধ্বমুখী। তবে চিকিৎসকরা মানুষদেরকে সচেতন ও সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। এর বিকল্প কিছু নেই বলে তাঁরা মন্তব্য করেন।

এদিকে চাঁদপুরে নতুন করে আরও ১১ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। ১০৬ জনের করোনার স্যাম্পল বা নমুনা পরীক্ষা করে ১১ জনের রিপোর্ট পজিটিভ পাওয়া গেছে। এতে দেখা যায় স্যাম্পল পরীক্ষার হার অনুযায়ী আক্রান্ত ১০.৩৭ ভাগ। এই রিপোর্ট ২৩ মার্চ মঙ্গলবারের। আগের দিন তথা সোমবার ছিলো ১১৬ জনের মধ্যে ১৪ জনের পজিটিভ রিপোর্ট। এ দিনকার নমুনা অনুসারে আক্রান্তের হার ছিলো ১২.০৩ ভাগ। ২৪ মার্চ রাতে দিনের সংগ্রহকৃত নমুনা পরীক্ষার পর এ রিপোর্ট পাওয়া যায়।

আরো জানা গেছে, মতলব উত্তরে ১১ জনের মধ্যে ৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। নতুন করে আক্রান্ত ১১ জন হচ্ছে সদর উপজেলায় ২, মতলব দক্ষিণে ১, হাজীগঞ্জে ১, মতলব উত্তরে ৬ এবং শরীয়তপুর জেলার ১ জন। নতুন এই ১১ জনসহ চাঁদপুর জেলায় এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত মোট রোগী হচ্ছে ২৯৮১ জন। আড়াইশ’ শয্যাবিশিষ্ট চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালের আরএমও ও করোনাবিষয়ক ফোকালপার্সন ডাঃ সুজাউদ্দৌলা রুবেল থেকে গতকাল রাত ১১টায় এ তথ্য জানা গেছে। তিনি আরো জানান, মতলব উত্তর উপজেলায় ১১ জনের স্যাম্পল পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে ৬ জনেরই করোনা পজিটিভ রিপোর্ট পাওয়া যায়। চাঁদপুর জেলায় এ পর্যন্ত করোনা রোগী মারা গেছেন ৯০ জন।

উপজেলাভিত্তিক আক্রান্তদের সংখ্যা হচ্ছে : চাঁদপুর সদর ১৩০৪ জন, হাইমচর ১৭৭ জন, মতলব উত্তর ২২৩ জন, মতলব দক্ষিণ ৩১৩ জন, ফরিদগঞ্জ ৩২৩ জন, হাজীগঞ্জ ২৬১ জন, কচুয়া ১১০ জন ও শাহরাস্তি ২৬৯ জন। এছাড়া ঢাকা হতে আগত ৪ জন, লক্ষ্মীপুর থেকে ২ জন, মতলব (দঃ) আইসিডিডিআরবি হতে প্রাপ্ত ৩০ জন, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হতে প্রাপ্ত ১ জন ও নারায়ণগঞ্জ থেকে আগত ১ জন আক্রান্ত হওয়ার মোট হিসেবে রয়েছে।
মারা যাওয়া ৯০ জন হচ্ছে : চাঁদপুর সদর ২৯, ফরিদগঞ্জ ১৪, হাজীগঞ্জ ১৭, শাহরাস্তি ৭, কচুয়া ৬, মতলব উত্তর ১১, মতলব দক্ষিণ ৫ ও হাইমচর উপজেলায় ১ জন।

(ইউ/এসপি/মার্চ ২৪, ২০২১)