শিতাংশু গুহ


স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী উপস্থিত থেকে দিবসটি মহিমান্বিত করেছেন। বঙ্গবন্ধুকে মরণোত্তর মহাত্মা গান্ধী পুরস্কারে ভূষিত করেছেন। গেয়েছেন, ‘এক সাগর রক্তের বিনিময়ে বাংলার স্বাধীনতা আনলে যাঁরা আমরা তোমাদের ভুলবো না’। উচ্চারণ করেছেন, বঙ্গবন্ধু’র সেই অমর শ্লোগান, ‘এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম’। বর্ণিল সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠান সফল হয়েছে, মৌলবাদী গোষ্ঠীর মুখে একটি চপেটাঘাত পড়েছে। শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদী এবং বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের নুতন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে। অথচ এ চমৎকার মহতী অনুষ্ঠানকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চেয়েছে মৌলবাদীরা, কেন? বিএনপি-জামাত যা করতে সাহস পায়না, ওরা সেই সাহস পেলো কোত্থেকে?

মোদী আগেও বাংলাদেশে এসেছেন, এবার এত বিক্ষোভ কেন? বিক্ষোভ কি শুধু মোদী’র বিরুদ্ধে, না আরো কিছু আছে? পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচন এবং মমতা ব্যানার্জী’র বিপর্যয়ে মৌলবাদীরা উৎকণ্ঠিত? মমতা হারলে পশ্চিমবঙ্গ জঙ্গীদের অভয়ারণ্য থাকবে না বলে? মোদী ওড়াকান্দি ও যশোরেশ্বরী গেছেন, মতুয়ারা পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি-কে ভোট দেবেন, মমতার বিদায় নিশ্চত করবেন, এটাই কি কারণ? সম্ভবত: না, এর কারণ হয়তো, মোদী কাশ্মীর সমস্যা সমাধান করে ফেলছেন, সেখানে জঙ্গীরা আগের মত সন্ত্রাসী কার্যকলাপ করতে পারছে না! মোদী তিন তালাক বাতিল করেছেন। মোদী ভারতে হিন্দুত্ব কায়েম করছেন। মোদী এনআরসি এবং সিএএ কার্যকর করে অবৈধদের তাড়াবেন, এসব মৌলবাদীদের না-পছন্দ। তবু, হয়তো মোদীর আগমন একমাত্র ইস্যু নয়, ওদের লক্ষ্য স্বাধীনতা?

বিক্ষোভের সবচেয়ে বড় কারণটি হয়তো ‘মনোকষ্ট’-যা ওরা না পারছে বলতে, না পারছে সইতে? এটি হচ্ছে পাকিস্তান ভাঙ্গার দু:খ! সাম্প্রদায়িকতার অভিযোগে যাঁরা মোদীর বিরোধিতা করেছেন তাঁরা তো কট্টর সাম্প্রদায়িক। বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতা বিকাশে এঁরা বড় বড় খেলোয়াড়। কুর্দিস মুসলমানদের হত্যা করলেও ওঁরা তুরস্কের প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে রাস্তায় নামেনা; ইয়েমেনে মুসলিম হত্যার জন্যে সৌদি আরবের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেনা। ডান-বাম মিলে এবার ভারতের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হলো, চীনের প্রেসিডেন্ট এলে ‘উইঘুরে মুসলমানদের নির্যাতনের’ বিরুদ্ধে কি হবে? শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী তো এবার এসেছিলেন, সেখানে হিজাব-বোরখা নিষিদ্ধ, কই কোন বিক্ষোভ তো দেখলাম না? শ্রীলংকা-চীনের ক্ষেত্রে আপনাদের ‘ইসলাম-প্রেম’ কই যায়?

বামপন্থীরা কেন বিরোধিতা করেছেন? ভারত নিয়ে যাঁদের ‘চুলকানি’ আছে, তাঁরা আর যাই হোক, অসাম্প্রদায়িক হতে পারেন না! মোদী সাম্প্রদায়িক, আপনারা কি খুব বেশি অসম্প্রদায়িক? উপমহাদেশে মৌলবাদের সাথে গাঁটছড়া বেঁধেই তো আজ আপনাদের দৈন্য-দশা! বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে আপনাদের ভূমিকা কি? লোকে বলে, ‘ইসলামপন্থী আর বামপন্থী একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ’ কথাটি কি মিথ্যে? ভুলে গেলেন, ভারত বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র। ভারতে রাষ্ট্রধর্ম নেই! ভারতে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান যথেষ্ট শক্ত। মোদীকে কেন্দ্র করে ডান-বাম বিক্ষোভ কি সরকারের বিরুদ্ধে নয়? এটি কি স্বাধীনতা, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু’র বিরুদ্ধে ছিলোনা? কওমী মাদ্রাসা নাহয় আবারো প্রমাণ করেছে তারা স্বাধীনতাবিরোধী। আপনারা কি প্রমান করলেন?

মোদী এবার অনেকের সাথে দেখা করেছেন, বিএনপি’র সাথে নয়? প্রায়ত: প্রণব মুখার্জী কংগ্রেসের হলেও ভারতের রাষ্ট্রপতি ছিলেন, মোদী সেটি ভুলেননি। যাঁরা এবার ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে অপমানিত করেছেন হয়তো ভারত তাঁদের ভুলবে না? ভুলে গেছেন কি যে, শেখ হাসিনা বলেছিলেন, সংস্কারবাদীদের আমি মাফ করে দিয়েছি, কিন্তু ভুলিনি। মোদীও হয়তো আপনাদের ভুলবে না? একজন রাষ্ট্র বা সরকার প্রধান এলে প্রতীকী বিক্ষোভ হতেই পারে, কিন্তু সুবর্ণজয়ন্তীতে ৭জনের প্রাণহানির প্রয়োজন ছিলোনা, হরতাল ডাকার দরকার ছিলো না। যাহোক, মোদীর সাথে যাঁরা দেখা করেছেন, দেখলাম সবাই খুশি। কারণ কি, কি আছে তাঁর মধ্যে? মিডিয়া জানাচ্ছে ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান-মাশরাফি বিন মুর্তজারা মুগ্ধ। সাকিব সাক্ষাৎ শেষে যা বলেছেন তাতে না আবার মৌলবাদীদের রোষানলে পড়েন!

বাংলাদেশের ইতিহাসে সম্ভবত: বাংলাদেশ-ভারত বন্ধুত্ব এতটা জোরদার কখনো ছিলোনা। বিজেপি ক্ষমতায় এসে বাংলাদেশের জন্যে যা করেছে, কংগ্রেস তা করতে পারতো, করেনি। কংগ্রেস ভেবেছে, ছোট বাংলাদেশ তো ভারতের বন্ধু থাকতেই হবে? মোদী সেই ‘বড়ভাই’ সুলভ ধারণা পাল্টে ছোটদেশ বাংলাদেশকে সম্মানের আসন দিয়েছে। বিজেপি ক্ষমতায় এসে ১৩জুলাই ২০১৫-তে ছিটমহল বিনিময় করেছে, এতে বাংলাদেশ লাভবান হয়েছে। বাংলাদেশের সমুদ্রবিজয় ভারত মেনে নিয়েছে, এতে ২৫৬০২ বর্গকিলোমিটারের মধ্যে বাংলাদেশ পেয়েছে ১৯৪৬৭, ভারত পেয়েছে ৬১৩৫ বর্গকিলোমিটার। তিস্তা বিষয়টি অমীমাংসিত আছে, এবার পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি ক্ষমতায় আসলে হয়তো তা হবে? তারপরও এত বিক্ষোভ কিসের? বাংলাদেশে এখন উন্নয়ন দৃশ্যমান। বাংলাদেশ-ভারত সুসম্পর্ক সর্বোচ্চ পর্যায়ে থাকাকালে সর্বোচ্চ উন্নয়ন, এটাই বাস্তবতা। মোল্লারা সর্বদাই এন্টি-বাংলাদেশ, এন্টি-ভারত; রাজনীতিকদের তো বোঝা উচিত, ভারত-বিরোধিতা করে বাংলাদেশ অতীতেও লাভবান হয়নি, ভবিষ্যতেও হবেনা। জনস্বার্থেই বাংলাদেশ-ভারত সুদৃঢ় বন্ধুত্ব অপরিহার্য।

লেখক : আমেরিকা প্রবাসী।