আবীর আহাদ


গণতন্ত্রের মানসপুত্র হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মজলুম জননেতা মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মুক্তিযুদ্ধের মুজিবনগর সরকারের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গতাজ তাজউদ্দিন আহমেদ ও বঙ্গবন্ধু-কন্যা প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার ধারাবাহিক নেতৃত্বের বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আজ একটানা সুদীর্ঘ পনেরো বছর ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত । আওয়ামী লীগের সাথে এদেশের স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও অঙ্গীকার, অর্থনৈতিক-সাংস্কৃতিক মুক্তি, বাঙালির জাত্যাভিমান, জাতীয় মর্যাদা ও গর্ব তথা গণমানুষের আশা-আকাঙ্খা জড়িত ।

মহান মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগ এদেশের বৃহত্তম সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ, বিশেষ করে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রাণপ্রিয় রাজনৈতিক দল । সেই আওয়ামী লীগ, যে দলটির নেত্রী-নেতা-কর্মীরা দল ও দেশ পরিচালনায় দীর্ঘ সংগ্রাম ও অভিজ্ঞতায় পরিপূর্ণ । কিন্তু আজ বাস্তব দৃষ্টিতে বিচার-বিশ্লেষণ করলে, অতি পরিতাপের সাথে বলতে হয়, এতো অভিজ্ঞতা অর্জন করার পরেও দল ও দেশ পরিচালনা করতে তারা, বলা চলে, ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে আসছেন ! নেতৃত্ব মনে হয় বুঝতেই পারছেন না, দল ও রাষ্ট্র পরিচালনায় কাকে কাকে কোথায় কোথায় বসাতে হয় ! আজ তাদেরকে আত্মসমালোচনা ও আত্মশুদ্ধি করতে হবে যে, তাদের দলে ও সরকারে যাদেরকে গুরুত্বপূর্ণ পদ-পদবী দেয়া হয়েছে, তারা কারা, কী তাদের পরিচয়, কী তাদের ব্যাকগ্রাউন্ড, তারা কে কোথায় বসে কী করছে ? দল ও সরকার এমন কী দেউলিয়ায় হাবুডুবু খাচ্ছে যে, এতো লক্ষ-কোটি নিবেদিতপ্রাণ ত্যাগী সৎ মেধাবী ও জাতীয় ক্ষেত্রে নানান অবদান রাখা আদর্শবান নেতা-কর্মী ও শুভানুধ্যায়ী থাকতে দলে ও সরকারে আওয়ামী আদর্শ ও চরিত্রবিরোধী লোকদের জামাই আদরে স্থান দিতে হবে ? দেশের মধ্যে আজকে যে সর্বগ্রাসী দুর্নীতি ও লুটপাটের হোলিখেলা চলছে, তার সঙ্গে যারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত---- তারা কারা ? হাতেগণা দু'চারজন দলীয় পুরনো ব্যক্তি ছাড়া, বাইরে থেকে, অর্থাত্ মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধীরা দলে ও সরকারে স্থান করে-নেয়া লোকজনই এসব দুর্নীতি ও লুটপাটের সাথে জড়িত । এতোদিনেও কি তারা বুঝতে পারছেন না যে, তারা আওয়ামী লীগের জন্য আশীর্বাদ, না অভিশাপ ? এসব দুর্নীতিবাজ ও লুটেরাগোষ্ঠী কি দল ও রাষ্ট্রের চেয়েও অধিক শক্তিশালী যে, তাদেরকে দল ও সরকারের সাথে জড়িয়ে রাখতেই হবে ?

এসব বিষয়ে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বকে এখনি আত্মসমালোচনা ও আত্মশুদ্ধি করতে হবে । অন্যথায় আজ যে চাকচিক্য ও ক্ষমতার অন্ধত্বে তারা আবিষ্ট হয়ে আছেন, কখন যে তা বালির বাঁধের মতো ধসে পড়বে, তা তারা ঘূর্ণাক্ষরেও টের পাবেন না ।

জয়বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু ।

লেখক : মুক্তিযোদ্ধা লেখক গবেষক।