আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ঢাকা : হিমালয়ের শৃঙ্গেও বসছে 'ভাড়াটে চাই' সাইনবোর্ড৷ হোটেল বা লজ নয়, ভাড়া দেওয়া হবে ৩২৬টি আস্ত শৃঙ্গ৷ সেখানে মুদি বা মণিহারির দোকান হতে পারে, ডাল-ভাতের পাইস হোটেল হওয়াও বিচিত্র নয়৷ পর্যটন শিল্পে জোয়ার আনতে তেমনই পরিকল্পনা নেপাল প্রশাসনের৷ যাঁদের বাস্তব বুদ্ধি অতি প্রখর, তাঁরা এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন৷

ভাড়া দেওয়ার উদ্দেশ্য দু'টি৷ এক, পর্যটনের হাল-হকিকত সুবিধার নয়৷ তাই দেশি-বিদেশি সংস্থাকে ভাড়া দেওয়ার আয়োজন৷ গেরস্থ বাড়ির ভাঁড়ারে টান পড়লে যেমন হয় আর কী! দুই, মাউন্ট এভারেস্টের উপর থেকে চাপ কমানো৷ পর্যটকেরা শুধু এভারেস্টেই যান, বাকিগুলি অনাঘ্রাতা৷ সেই সব দুস্থ ও অবহেলিত শৃঙ্গগুলিকে একটু চাঙ্গা করা দরকার৷ শুনতে প্রলাপ মনে হতে পারে, কিন্ত্ত এই তথ্য ষোলো আনা সত্যি৷ নেপালের পর্যটন বিভাগের মুখপাত্র মোহনকৃষ্ণ সপকোতা স্বয়ং নিশ্চিত করেছেন হিমালয় ভাড়া দেওয়ার বাসনা৷

নেপালের এই ৩২৬টি শৃঙ্গ পর্বতারোহীদের জন্য উন্মুক্ত৷ যদিও প্রতি বছর নেপালে যত সংখ্যক বিদেশি পর্বতারোহী আসেন, তাঁদের সিংহভাগেরই লক্ষ্য থাকে এভারেস্ট৷ হাতে গোনা কয়েকটিকে বাদ দিলে বাকি শৃঙ্গগুলির হাল রুগ্ণ চটকলের মতো৷ সাইরেন নেই, প্রায়ই ঝোলে সাসপেনশন অফ ওয়ার্কসের নোটিস৷ এই ঘোর বৈষম্য দূর করতেই নেপাল প্রশাসনের পরিকল্পনা, দেশি ও বিদেশি বেশ কয়েকটি সংস্থার হাতে তুলে দেওয়া হবে ৩২৬টি শৃঙ্গের দায়িত্ব৷ ওই সংস্থাগুলি শৃঙ্গগুলিতে পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তুলবে৷ পর্যটকদের নজর কাড়তে আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপনও দেওয়া হবে শৃঙ্গগুলির৷ যেমন বিজ্ঞাপন দেওয়া হয় গুঁড়ো হলুদ অথবা বাসন মাজার সাবানের৷

মোহনকৃষ্ণ জানিয়েছেন, হরেক কিসিমের লাভ হবে৷ প্রথমত, বিশেষ একটি রুটে (এভারেস্ট যাওয়ার জনপ্রিয় রুট সাউথ কল) ভিড় কমবে৷ দ্বিতীয়ত, শৃঙ্গের দায়িত্ব থাকবে যে সংস্থাগুলির হাতে, তাদের দেওয়া বিজ্ঞাপন দেখে তুলনায় অখ্যাত শৃঙ্গগুলিতেও ভিড় জমাবেন পর্যটকরা৷ দারিদ্রে বিপর্যস্ত নেপালের দুমড়ে যাওয়া অর্থনীতিকে মজবুত করতে কিছুদিন আগেই নেপালের পর্যটন বিভাগ এভারেস্টে ওঠার খরচ একধাক্কায় কমিয়ে দিয়েছিল অনেকটাই৷ এভারেস্টে ওঠার অনুমতি বাবদ খরচ মাথাপিছু ২৫ হাজার ডলার থেকে কমিয়ে ১১ হাজার ডলার করে দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়৷ নেপালের পর্যটন দপ্তর জানিয়েছে, ২০১৫ সাল থেকে এই নতুন খরচ চালু হতে চলেছে৷

পাহাড়ে চড়ার মাথাপিছু খরচ কমানো এবং বাকি শৃঙ্গগুলিকে 'ভাড়া দেওয়ার' এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে নেপাল মাউন্টেনিয়ারিং অ্যাসোসিয়েশন৷ সংস্থার প্রেসিডেন্ট আং শেরিং শেরপা জানিয়েছেন, বেরসকারি সংস্থাগুলি জানে কী ভাবে প্রচার করতে হয়৷ তারা এক একটি শৃঙ্গকে পর্যটকদের কাছে আরও বেশি করে গ্রহণযোগ্য করে তুলবে আকর্ষণীয় অফার দিয়ে৷ -তথ্যসূত্র : পিটিআই।

(ওএস/এইচ/মার্চ ১২, ২০১৪)