বাগেরহাট প্রতিনিধি : বাগেরহাটে নিজ শিশু সন্তানকে হত্যার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আদালত এক মা’সহ তিন জনকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন। বাগেরহাটের জেলা ও দায়রা জজ এস.এম. সোলায়মান সোমবার দুপুরে এই আদেশ দেন। দেড় বছর বয়সী নিহত ছেলে শিশুটির নাম ডিপজল। ২০০৫ সালের ১২ এপ্রিল তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়।

ফাঁসির দণ্ডাদেশ প্রাপ্তরা হলেন বাগেরহাটের মোল্লাহাট উপজেলার নগরকান্দি গ্রামের ইকু বিশ্বাসের স্ত্রী ও ডিপজলের মা লতিফা বেগম (৩৪), একই গ্রামের আয়েন উদ্দিন মোল্লার ছেলে মনির মোল্লা (৪৪) এবং মেয়ে নাজমা বেগম (৩৩)। রায় ঘোষণার সময় দণ্ডাদেশ প্রাপ্তরা কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন। পরে তাদের কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে বাগেরহাট কারাগারে নেয়া হয়।
পুলিশের অভিযোগপত্র ও স্বাক্ষীদের স্বাক্ষ্যে ঐ মায়ের বিরুদ্ধে স্বামী ও ননদের সাথে ঝগড়া বিবাদ, দণ্ডাদেশ প্রাপ্ত মনিরের সাথে পরকীয়া সম্পর্ক এবং এই সম্পর্কের সূত্র ধরে মনিরকে বিয়ে করে সংসার পাতার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে দেড় বছরের ছেলে ডিপজলকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রমাণিত হয়। মনিরের বোন নাজমা বেগমের বিরুদ্ধে এই হত্যা পরিকল্পনায় সহযোগিতা ও অংশগ্রহণের অভিযোগ প্রমাণিত হয়।
আদালত ও মামলা সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় গ্রাম প্রতিরক্ষা দলের সদস্য ইকু বিশ্বাসের স্ত্রী লতিফার সাথে তার স্বামীর পারিবারিক সম্পর্ক সুখের ছিলো না। সর্বশেষ ননদ মাকু বেগমের টাকা চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সম্পর্কের চরম অবনতি হয়। এদিকে প্রতিবেশী মনির মোল্লার সাথে লতিফার পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক ছিলো। এক পর্যায়ে লতিফা ও মনির বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেয়। নাজমাকে নিয়ে তারা লতিফার দেড় বছরের ছেলে ডিপজলকে হত্যার ষড়যন্ত্র করে।
মামলার বর্ণনা অনুযায়ী ইকু বিশ্বাস পেশাগত কাজে ২০০৫ সালের ১২ এপ্রিল ভোররাত পর্যন্ত বাড়ির বাইরে ছিলেন। পরদিন ভোরে ডিপজলকে ঘরে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিলো না। পরে বাড়ির পাশের একটি পুকুর থেকে ডিপজলের লাশ উদ্ধার হয়। এই ঘটনায় মোল্লাহাট থানার অপমৃত্যু মামলা ও লাশের ময়না তদন্ত প্রতিবেদনের সূত্র ধরে ঐ বছরের ২৯ অক্টোবর ডিপজলের বাবা ইকু বিশ্বাস বাদী হয়ে ছেলে হত্যার অভিযোগে মনির মোল্লা ও তার বোন নাজমাকে আসামী করে মোল্লাহাট থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মোল্লাহাট থানার উপ-পরিদর্শক মো. নজিবুল হক মামলাটি তদন্ত শেষে ২০০৬ সালের ১০ মে ডিপজলের মা লতিফা, মনির ও নাজমার বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
মামলা পরিচালনায় সরকার পক্ষে ছিলেন বাগেরহাট আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) শেখ মোহম্মদ আলী। আসামী পক্ষে ছিলেন অ্যাড. ফরিদ উদ্দিন আহম্মেদ। মামলা চলাকালে আদালত মোট সাত জনের স্বাক্ষ্য গ্রহণ করেন।
(একে/এএস/এপ্রিল ২১, ২০১৪)