উজ্জ্বল হোসাইন, চাঁদপুর : চাঁদপুর পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডস্থ পুরাণবাজার নিতাইগঞ্জের বাসিন্দা রিকশা ভ্যানচালক আনোয়ার হোসেন রাঢ়ী ও তার পরিবার প্রায় ৪৫ বছর যাবত নিজ জায়গায় থাকছেন পরবাসের মতো। নিজের জায়গায় বিদ্যুৎ অভিযোগ কেন্দ্র। অথচ এ পর্যন্ত বিদ্যুতের মুখ দেখেন নি। এতে করে স্ত্রী, ৪ মেয়ে ও ১ ছেলে সন্তানসহ পুরো পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। চাঁদপুর বিদ্যুৎ বিভাগের (পিডিবি) পুরাণবাজার বিদ্যুৎ অভিযোগ কেন্দ্রের পাশে দুই শতক জমি নিয়ে জটিলতার কারণে খুপড়ি ঘরের মধ্যে আনোয়ার তার পরিবার নিয়ে নিদারুণ কষ্টে জীবন-যাপন করলেও বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে তার দুই শতক জমি এখনো বুঝিয়ে দিচ্ছে না।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার যেখানে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়ার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে, সেখানে চারপাশে আলোর মধ্যেও এই অন্ধকার যেন অসহায় আনোয়ার রাঢ়ীর জীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে।

সম্প্রতি সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চাঁদপুর পৌরসভার পুরাণবাজার নিতাইগঞ্জে হোল্ডিং নং-০৯৭৪-এর আনোয়ার হোসেন রাঢ়ীর বাড়িতে ছোট্ট একটি খুপড়ি ঘরে পরিবারের প্রায় ৮/৯ জন লোক গাদাগাদি করে থাকছে আনোয়ারের পরিবার। তার ওপর বিদ্যুৎ নেই। প্রচ- গরম যখন পড়ে তখন তাদের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠে। কোনো রকমে সৌরবিদ্যুতের ওপর নির্ভর করেই চলছে তাদের জীবন সংসার।

জানা যায়, পুরাণবাজার বিদ্যুৎ অভিযোগ কেন্দ্রের সাথে দুই শতক জায়গার মালিকানা নিয়ে বিরোধের কারণে প্রায় ৪৫ বছর যাবৎ বিদ্যুৎ সেবা থেকে বঞ্চিত আনোয়ার রাঢ়ী (৫৯) ও তার পরিবার। জেলার অন্য কোথাও এভাবে আলোর মধ্যে থেকে অন্ধকারে থাকার নজির নেই। অবশেষে আদালত সেই দুই শতাংশ জায়গার ওপর স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা ডিক্রী প্রদান করে আইনগত মতামত দিয়েছে।

সেখানে উল্লেখ করা হয়, চাঁদপুর থানার ৯১নং চাঁদপুর মিউনিসিপ্যালিটি মৌজার পুরাণবাজারস্থ সাবেক ১৮৪৩নং খারিজি ১৮৪৩/১, ৩৭৭১নং খতিয়াতভুক্ত ১০৩০২/১০৩০৩ দাগের ২.০০ শতক ভূমি (যাহার উত্তরে বাচ্চু হাওলাদার, দক্ষিণে বিদ্যুৎ অফিসের ভূমি, পূর্বে মতি সল্টের বরফ কল, পশ্চিমে রাস্তা) সম্পর্কে আনোয়ার হোসেনের দায়েরকৃত চাঁদপুরের সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে দেওয়ানী ৯৫/২০০৭ খ্রিঃ এবং যুগ্ম জেলা জজ ২য় আদালতের দেওয়ানী আপীল ৭৪/২০১১ খ্রিঃ মোকদ্দমা আদালত কর্তৃক বিদ্যুৎ বিভাগের বিরুদ্ধে চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা ডিক্রী প্রদান করা হয়েছে। এসব তথ্য নিশ্চিত করেন আনোয়ার হোসেন রাঢ়ীর আইনজীবী চাঁদপুর জজ কোর্টের অ্যাডঃ আবদুর রহমান।

এদিকে নিজের ২ শতাংশ জায়গা বুঝে পেতে ভুক্তভোগী আনোয়ার হোসেন রাঢ়ী জানান, আমার আব্বা মৃত লোকমান রাঢ়ী এই জায়গা তৎকালীন সময়ে হিন্দু জমিদার প্রতাপ চন্দ্র সাহা গং থেকে ক্রয় করেন। এর কিছুদিন পর ওই সম্পত্তির ওপর কোনো রকমের নোটিশ ছাড়াই বিদ্যুৎ বিভাগ ১টি অভিযোগ কেন্দ্র স্থাপন করে ফেলে। এমন আইন বহির্ভূত কাজ করায় বিদ্যুৎ বিভাগকে বিবাদী করে আমার আব্বা আদালতে মামলা করেন। যা ১৯৭৫ সাল থেকে এখন পর্যন্ত চলমান রয়েছে। আর আব্বা মারা যাওয়ার পর এই মামলা আমিই এখন পরিচালনা করছি।

তিনি আরও জানান, এখানে এই খুপড়ি ঘরে কোনোরকমে স্ত্রী, ৪ মেয়ে ও ১ সন্তানসহ বিদ্যুৎ ছাড়াই বসবাস করছি। সমাজের কেউ আমাদের এই সমস্যা সমাধানে এগিয়ে না আসায় আমরা চরম ভোগান্তিতে রয়েছি। দ্রুত আমার ২ শতাংশ জায়গা বুঝে পেতে এবং বিদ্যুৎ সংযোগ পেতে আমি শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এমপি আপাসহ প্রশাসন ও সুধীমহলের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

এ ব্যাপারে চাঁদপুর পৌরসভার ১, ২ ও ৩নং ওয়ার্ডের নারী কাউন্সিলর ফেরদৌসী আক্তারকে অবহিত করা হলে তিনি জানান, আমি এ বিষয়টি জানতাম না। এখন যেহেতু জানলাম, আমি অবশ্যই ঘটনাস্থলে যাবো এবং সবার সাথে এর সমাধানের ব্যাপারে আলোচনা করবো।

এ ব্যাপারে চাঁদপুর বিদ্যুৎ বিভাগের বিক্রয় ও বিপণন বিভাগের প্রকৌশলী মোঃ মিজানুর রহমান বলেন, বিদ্যুতের এই কেন্দ্রটি সরকারি একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। আনোয়ারের সাথে আমাদের ব্যাক্তিগত কোনো দ্বন্দ্ব নেই। আদালতে ২ শতক জায়গা নিয়ে তার সাথে বিদ্যুৎ বিভাগের মামলা চলমান রয়েছে। সে আমাদের সাথে এ বিষয়টি নিয়ে কোনো আলোচনা ছাড়াই পূর্বে থেকে মামলায় জড়িয়েছেন। তাই যা সিদ্ধান্ত হওয়ার সেটা মহামান্য আদালতই দিবেন।

(ইউ/এসপি/এপ্রিল ১৭, ২০২১)