ডেস্ক রিপোর্ট : অনেকেই মনে করি নতুন মডেলের আইফোন, ল্যাপটপ এসব থাকা মানেই স্মার্টনেস। আসলে কি তাই! সর্বাধুনিক এসব গ্যাজেটকে অনেকেই মনে করেন উন্নতির সূচক।

একটা মাত্রা পর্যন্ত প্রযুক্তির ব্যবহার এলেই আমাদের মস্তিষ্কের জন্য উপকারী। তবে তার মাত্রা অতিরিক্ত নয়। আর যখন মাত্রা ছাড়িয়ে যায় তখনই তার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে থাকে মস্তিষ্কের ওপর। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, প্রযুক্তি আসলেই কমিয়ে দিতে পারে আপনার বুদ্ধিমত্তা এবং দিচ্ছেও বটে।

স্মার্টফোন, ট্যাবলেট এবং ল্যাপটপ থেকে যে নীলচে আলো আসে তা শরীরের মেলাটোনিনের কাজ ব্যাহত করে। শরীরের স্বাভাবিক ঘুমের প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে মেলাটোনিন। বেশিক্ষণ এসব গ্যাজেট ব্যবহারের ফলে এই প্রক্রিয়া ব্যাহত হয় এবং আমাদের ঘুম কমে যায়।

সহজেই আমাদের মনোযোগ নষ্ট করে দিচ্ছে এ প্রযুক্তি। জরুরি কোনো কাজ করতে করতে হঠাত্ই মনে হলো ফোনটা একটু চেক করে নিই। অথবা ল্যাপটপে অনেকগুলো ব্রাউজার ট্যাব খুলে রাখলেন, আসলে মনোযোগ দিতে পারলেন না একটিতেও। এভাবে আমাদের পড়াশোনা, অফিশিয়াল কাজ এমনকি পারিবারিক জীবনের অবস্থা খারাপ হয়ে যাচ্ছে।
খারাপ হয়ে যাচ্ছে আমাদের স্মৃতি ভাবতে অবাক লাগে।

প্রযুক্তির কল্যাণে প্রতিনিয়তই প্রচুর পরিমাণে তথ্য নিয়ে কাজ করছে আমাদের মস্তিষ্ক। এর ফলে যেসব তথ্য আমাদের মনে রাখাটা অতি জরুরি তা আমরা ভুলে যাচ্ছি সহজে। এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে আমাদের স্মৃতি, থাকছে না কোনো ব্যবস্থাপনা। কোনো কিছু মনে করার জন্য আমরা ইন্টারনেটের সাহায্য নিচ্ছি এবং তথ্য পেয়েও যাচ্ছি সহজে।

এক সময়ে ইন্টারনেট ছিল না। অনেক বড় বড় বই মুখস্থ করা হতো, একেবারে দাঁড়ি-কমাসহ। এখন তার প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে।

যার ফলে মানুষের মাঝে তা করার কোনো উত্সাহও নেই। আপনি যখন জানেন গুগল করেই একটা তথ্য জানা যাবে, তখন তা মুখস্থ করার প্রয়োজন মনে হয় না।

এর ফলে একটু একটু করে কমে যাচ্ছে আমাদের মস্তিষ্কের মুখস্থ করার শক্তি। একটা বই পড়লে আমরা যত তথ্য মনে রাখতে পারি, অনলাইনে কিছু পড়ে ততটা মনে রাখতে পারি না। ব্যাপারটা পরীক্ষা করার জন্য যে কোনো অনলাইনের একটি পাতা পড়ে দেখতে পারেন। বারবার মনোযোগ হারিয়ে যাবে এবং পড়া শেষে খুব বেশি কিছু মনে রাখতে পারবেন না। ল্যাপটপ, আইফোন বা ট্যাবলেটের স্ক্রিনে যাই পড়ুন না কেন, স্মৃতিতে তার খুব বেশি থাকে না।

এখন জিপিএস ছাড়া রাস্তা খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে উঠছে। মস্তিষ্কের হিপ্পোক্যাম্পাস অংশে প্রভাব ফেলছে জিপিএসের ব্যবহার। যারা সব সময় জিপিএস ব্যবহার করে রাস্তায় চলেন তাদের হিপ্পোক্যাম্পাসের কার্যক্ষমতা কম থাকে। যারা জিপিএসের ওপর কম নির্ভরশীল তারা বরং প্রৌঢ়ত্বে গিয়ে স্মৃতি সংক্রান্ত সমস্যাগুলোয় কম পড়ে থাকেন। আমাদের মস্তিষ্ক হয়ে উঠছে মাদকাসক্ত মানুষের মস্তিষ্কের মতো।

ইন্টারনেট আসক্তি খুবই বাস্তব একটি সমস্যা। মাদক ব্যবহারে মস্তিষ্কে যেসব পরিবর্তন আসে, খুব বেশি ইন্টারনেট ব্যবহারেও মস্তিষ্কে সে ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে। এর ফলে আবেগ নিয়ন্ত্রণ, মনোযোগ ধরে রাখা এবং সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষমতা কমে যায় অনেকাংশে।

(ওএস/এইচআর/আগস্ট ৩০, ২০১৪)