স্টাফ রিপোর্টার : পুঁজিবাজারে স্বল্পমূলধনী কোম্পানিগুলোকে নিয়ে বারবার পৃথক মার্কেট গঠন করার প্রতিশ্রুতি দেয়া হলেও তা এখনও বাস্তবায়ন হয় নি। বাজারের সার্বিক উন্নয়নে নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর সমন্বিত পদক্ষেপ ও তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর তথ্য যাচাইয়ে বিনিয়োগকারীদের তথ্য ভিত্তিক বিনিয়োগের ওপর নজর দেয়া জরুরি বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। এ লক্ষে তালিকাভুক্ত এই স্বল্পমূলধনী কোম্পানিগুলোকে নিয়ে একটি পৃথক মার্কেট গঠনের যে সিদ্ধান্ত হয়েছে তা বাস্তবায়ন করা জরুরি হয়ে পড়েছে।

প্রতিবারই স্বল্পমূলধনী কোম্পানিগুলোকে নিয়ে পৃথক মার্কেট গঠনের আশ্বাস দেয়া হয়েছে। কয়েকদিন আগেও সিএসইর ঢাকা কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ আহ্বান জানিয়েছিলেন চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের বর্তমান চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ। তাঁর সাথে কথা বলা হলে তিনি জানান, তালিকাভুক্ত স্বল্পমূলধনী কোম্পানিগুলোকে নিয়ে পৃথক মার্কেট গঠন করা হচ্ছে। এসএমই, গ্রোথ ও স্বল্পমূলধনী কোম্পানির জন্য বিকল্প বাজার সৃষ্টির লক্ষ্যে সিএসই কাজ করছে এবং এ সংক্রান্ত একটি প্রেজেন্টেশনও বিএসইসিকে প্রদান করা হয়েছে। অন্যদিকে, শরিয়াহ্ ও আইপিও ইন্ডেক্স গঠনের জন্য বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জের নিকট একটি প্রেজেন্টশন জমা দেয়া হয়েছে। সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে তা কার্যকর হতে পারে।

এছাড়াও তিনি আরো বলেন, ডিসক্লোজার ভিত্তিক আইপিও অনুমোদনের কারণে পুঁজিবাজারে অসুস্থ কোম্পানিগুলো তালিকাভুক্ত হচ্ছে। কারণ, ডিসক্লোজার পদ্ধতিতে বিএসইসিতে ইস্যুয়ার কোম্পানিগুলো যে আর্থিক প্রতিবেদন দাখিল করে সেটাই পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে আইপিও অনুমোদন দেয়া হয়। কিন্তু চীন আইপিও অনুমোদন দেয় মেরিটের ওপর ভিত্তি করে। আমাদের দেশেও যদি এ ব্যবস্থায় আইপিও অনুমোদন দেয়া হয়তবে ভালো কোম্পানিগুলো এগিয়ে আসবে এবং বিনিয়োগকারীরা উপকৃত হবে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর তথ্য যাচাই না করে গুজবে কান দিয়ে বিনিয়োগ করায় বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তাদের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়ছে। যার ফলে তাদের বড় আকারের মাশুল দিতে হচ্ছে। তাই বাজারের সার্বিক উন্নয়নে নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর সমন্বিত পদক্ষেপ ও তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর তথ্য যাচাইয়ে বিনিয়োগকারীদের তথ্য ভিত্তিক বিনিয়োগের ওপর নজর দেয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। তার জন্য শিগগিরই এ বিষয়ে যে সিদ্ধান্ত হয়েছে তা বাস্তবায়ন হওয়া দরকার।

চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান নিয়ন্ত্রক সংস্থার সাম্প্রতিক পদক্ষেপ ও প্রজ্ঞাপনসমূহের প্রভাব নিয়ে বলেন, চলতি বাজেটে ব্যক্তি মূলধনী লাভের ওপর কর আরোপ করায় তিনি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সমালোচনা করে বলেন, যেখানে বিনিয়োগকারীরা তাদের ক্ষতিপুষিয়ে উঠতে চেষ্টা করছে সেখানে নতুন করে বক্তি শ্রেণীর বিনিয়োগকারীদের মূলধনী লাভের ওপর ট্যাক্স আরোপ করায় বাজারের নতুন করে তারল্য সংকট দেখা দিয়েছিল। ফলে টানা দুই মাস বাজারের সূচক ও লেনদেন ছিল নিম্নমুখী।

এছাড়াও বাজেটে তালিকাভুক্ত এবং তালিকা বহির্ভূত কোম্পানিগুলোর ওপর কর্পোরেট ট্যাক্সের বৈষম্যে তালিকা বহির্ভূত কোম্পনিগুলোকে বাজারের তালিকাভূক্তিতে নিরুৎসাহিত করছে। কারণ, বর্তমানে বাজেট অনুযায়ী, তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোকে ২৭ শতাংশ কর্পোরেট ট্যাক্স বহন করতে হবে। অন্যদিকে, তালিকা বহির্ভূত কোম্পানির কর্পোরেট ট্যাক্স ২.৫ শতাংশ কমায় তাদের পরিশোধন করতে হচ্ছে মাত্র ৩৫ শতাংশ।

এদিকে, ব্যাংক কোম্পানিগুলোর নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকের সম্প্রতি কিছু বিষয়ে নিয়ে তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, ২০১৩ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোকে তাদের মোট মূলধনের ২৫ শতাংশ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের বাধ্যবাধকতা আরোপ করে। কিন্তু ২০১০ সালে ধসপূর্ববর্তী সময়ে ব্যাংকগুলোর অধিকাংশেরই বিনিয়োগ ছিল ২৫ শতাংশের বেশি। ফলে, ব্যাংকগুলো বিনিয়োগ অতিরিক্ত বিনিয়োগ নির্দিষ্ট সীমায় আনার প্রচেষ্টায় বাজারে দীর্ঘসময় লেনদেনে ভাটা দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে, বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগসীমা ২৫ শতাংশ আনার জন্য ২০১৬ সালের মধ্যে কমিয়ে আনার নির্দেশ দেয়া হয়েছে যা পর্যাপ্ত নয় বলে জানান তিনি।

এদিকে, পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির সাম্প্রতিক কিছু সিদ্ধান্ত সম্পর্কে তিনি জানান, প্রথমবারের মত বিএসইসি দুটি কোম্পানির আইপিও আবেদনের সময় মিথ্যা তথ্য দেয়ায় সংশ্লিষ্ট ইস্যু ম্যানেজারকে শাস্তি প্রদান করে। এছাড়াও আইপিও আবেদন সহজ করার লক্ষ্যে বিএসইসি সেপ্টেম্বর থেকে পাইলট প্রজেক্ট চালু করবে। যা বাজারের স্বচ্ছতা ও গতিশীলতায় ভূমিকা রাখবে।

(ওএস/এটিআর/আগস্ট ৩০, ২০১৪)