আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল : ১৬ কোটি মানুষের এই দেশে বিভিন্ন ধর্ম-বর্ণ-সম্প্রদায় থাকলেও তাদের পেশাও রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন প্রকৃতির। তেমনই একটি সম্প্রদায়ের নাম হচ্ছে বেদে সমাজ। এরা পূর্বে ভাসমান জীবনযাপন করলেও বর্তমানে নদ-নদী, খাল-বিল চলাচল অনুপযোগী হওয়ায় নৌকায় অবস্থান না করে বিভিন্ন স্থানে স্থায়ী ও অস্থায়ী আবাস গড়ে তুলছে। কমে আসছে তাদের সংখ্যাও।

ফলে আগের মত ভাটি অঞ্চলে সচরাচর তাদের উপস্থিতি দেখা যায়না। এদের সন্তানরা লেখাপড়া করে বর্তমান ঝুঁকিপূর্ণ পেশা ছেড়ে অন্য পেশা বা চাকুরীর চেষ্টা করেও বিফল হচ্ছে। ফলে আবার তারা সাপ ধরা, তাবিজ বেচা, ঝাঁড়-ফুঁক দেয়ার মত ঝুঁকিপূর্ণ ও হঠকারী পেশা বেছে নিতে বাধ্য হচ্ছে। সাপ ধরে, তাবিজ বেচে সংসার চালায় এরা। বেদে সমাজের ১০ জনের একটি দল বর্তমানে বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার গৈলা ইউনিয়ন পরিষদে অস্থায়ী আবাস গড়ে তুলেছে। এরা এসেছে ঢাকার সাভার এলাকা থেকে।

সেখানেই তাদের স্থায়ী ঠিকানা। এই দলে কোন বেদেনী নেই। শুক্রবার এরা কোন কাজ করেনা। সেদিন জুম্মার নামাজ আদায় করে। অন্যান্য দিন গ্রামে গ্রামে ঘুরে সাপ ধরা ও সাপের খেলা দেখিয়ে, তাবিজ বিক্রিসহ বিভিন্ন দুরারোগ্য রোগের চিকিৎসার কথা বলে ঘুরে বেড়ায়। কথা হয় এই দলের সর্দার বক্তার হোসেনের সাথে। তিনি জানান, আমরা যে সাপ ধরি তা অনেক সময় বিক্রি করি। বড় সাইজের একটি সাপ ২-৩ হাজার টাকায় বিক্রি করি। এছাড়া সাপের বিষ সংগ্রহ করেও বিক্রি করি। চারটি বড় বিষধর সাপ থেকে ১ ভরি বিষ সংগ্রহ করা যায়। যার মূল্য ১৮ হাজার টাকা।

সাপের বিষ দিয়ে অনেক দুরারোগ্য রোগ সারার অষুধ তৈরী হয়। এগুলো সংগ্রহ করতে গিয়ে আমাদের অনেকে সাপের বিষাক্ত ছোবলে প্রাণ হারিয়েছেন। তিনি আরও জানান, সাপ ধরার কোন মন্ত্র নেই। আছে বুদ্ধি, সাহস আর কলা-কৌশল। এর অন্যথা হলে তাকে প্রাণ হারাতে হয়। আর তাবিজে বিভিন্ন গাছ-গাছড়া থাকে। গাছ-গাছড়ার দ্রব্যগুণ আছে এটা কেউ অস্বীকার করতে পারবেনা। তাই আমরা এগুলি বিক্রি করে, বিভিন্ন হাটে-বাজারে সাপের খেলা দেখিয়ে জীবিকা নির্বাহ করি। আমার বাপ-দাদার পেশা ছিল এটা। আমরাও বংশানুক্রমে তা চালিয়ে আসছি। তবে সরকার আমাদের কোন সুযোগ দিলে আমরা এই ঝুঁকিপূর্ণ পেশা ছেড়ে দেব।

আমাদের সন্তানরা লেখাপড়া করলেও বেদে সমাজের লোক হবার কারণে তারা কোন চাকরী-বাকরী পায়না। অন্য ব্যবসা করার জন্য আমরা ব্যাংক বা অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠান থেকে কোন লোন পাইনা। তাই জীবন জীবিকার কারণে আমাদের স্ত্রী-কন্যা ও ছেলে সন্তানরা অনেক সময় বিপথগামী হয়ে পরে। আমরা সুযোগ পেলে এ পেশা ছেড়ে দেব।

আমাদের দেশে বর্তমানে দাঁড়াশ, চন্দ্রমুখী, কাল নাগিনী, গোঁখড়ো, দুধমনি, পঙ্খীরাজসহ বিভিন্ন প্রজাতির দুর্লভ সাপ রয়েছে। তবে এগুলো পর্যায়ক্রমে কিলুপ্ত হবার পথে। ওই শ্রেনীর সাপ আমাদের সংগ্রহেও আছে। আগৈলঝাড়ার বিভিন্ন গ্রাম থেকে এপর্যন্ত আমরা বিভিন্ন প্রজাতির ৪টি সাপ ধরতে পেরেছি। কালের আবর্তে সাপুড়েদের মত ঝড়-বন্যাসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে এরাও হারিয়ে যাচ্ছে।


(টিবি/এএস/আগস্ট ৩০, ২০১৪)