আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল : দক্ষিণাঞ্চলের প্রতিটি রাজনৈতিক দলের আন্দোলন সংগ্রাম চাঙ্গা হয় বরিশাল মহানগরের কমিটির তৎপরতায়। ফলে বরাবরেই যোগ্য নেতৃত্বদানকারীদের মহানগরের কমিটিতে স্থান দেয়া হয়। সবদিকের বিবেচনায় কে হচ্ছেন বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি?

এনিয়ে সর্বত্রই চলছে ব্যাপক আলোচনা। গুরুত্বপূর্ণ এ পদটি বাগিয়ে নিতে কেন্দ্রে লবিং থেকে শুরু করে তৃণমূলেও চলছে নানামুখী তৎপরতা। অবশ্য দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের ওপর পুরোটাই নির্ভর করছে কে হচ্ছেন বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি। খুব শীঘ্রই সভাপতি নির্বাচনের সিদ্ধান্ত হওয়ার খবরে গুরুতপূর্ণ পদটির জন্য দলের অভ্যন্তরে বেশ জমজমাট লড়াই জমে উঠেছে।

সূত্রমতে, সদর আসনের প্রয়াত সাংসদ ও সাবেক সিটি মেয়র শওকত হোসেন হিরণ মৃত্যুর আগ পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এ পদের দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০০৮ সালে তিনি (হিরণ) মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর নগরীকে যেমন ঢেলে সাজিয়েছেন, তেমনি দলকেও গুছিয়ে নিয়েছেন নিজের মতো করে। তখন অবশ্য হিরণ ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের আহবায়ক। ২০১২ সালে সম্মেলনের মাধ্যমে হিরণকে সভাপতি এবং এ্যাডভোকেট আফজালুল করিমকে সাধারণ সম্পাদক করে গঠিত হয় মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটি। গত ৯ এপ্রিল হিরণের অকাল মৃত্যুতে এ পদটি শুণ্য হয়ে যায়। হিরণের অসমাপ্ত কাজ সম্পন্নের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে উপ-নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী হিসেবে তার স্ত্রী জেবুন্নেসা আফরোজ নির্বাচিত হয়েছেন। জেবুন্নেসা আফরোজকে সভাপতি হিসেবে চাচ্ছেন মহানগরীর কিছু নেতারাও।

কিন্তু জেলা-মহানগর আওয়ামী লীগের পূর্ব বিরোধ এ পদে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। জেবুন্নেসার বিপরীতে সভাপতির পদ পেতে কয়েকজন নেতা ইতোমধ্যে কেন্দ্রে লবিং থেকে শুরু করে পুরোদমে মাঠে নেমেছেন। তারা হলেন-বরিশাল শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এ্যাডভোকেট গোলাম আব্বাস চৌধুরী দুলাল, জেলা আ’লীগের সভাপতি আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ-এমপি’র ভাই খোকন আব্দুল¬াহ, ছেলে সাদিক আবদুল¬াহ, মুক্তিযোদ্ধা মাহবুব উদ্দিন আহম্মেদ বীর বিক্রম ও কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামিম। এছাড়া আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা অগ্রণী ব্যাংকের পরিচালক এ্যাডভোকেট বলরাম পোদ্দার ও সদর উপজেলার চেয়ারম্যান বরিশাল চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টুর নাম শোনা গেলেও তারা সভাপতি হতে আগ্রহী নন বলে জানিয়েছেন।

সাইদুর রহমান রিন্টু জানান, জেবুন্নেসা আফরোজ-এমপি’র পক্ষে ৩০টি ওয়ার্ডের নেতাকর্মীরা রেজুলেশন করে দিয়েছেন। তাকে সভাপতি করা হলে আমার কোন আপত্তি নেই। তবে নারী বিবেচনায় যদি তাকে সভাপতির পদ না দেয়া হয় তাহলে আমি সভাপতির পদ পেতে চাই। এ্যাড. বলরাম পোদ্দার কোন অবস্থাতেই মহানগর সভাপতির দায়িত্ব নিতে রাজি নন। মহানগর আ’লীগের একাধিক নেতারা জানান, সদর আসনের দলীয় এমপি জেবুন্নেসা আফরোজের যদি কোন গুরুত্বপূর্ণ পদ না থাকে তাহলে দল পরিচালনা করা এবং ভবিষ্যত রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে যাবে।

তাছাড়া এমপি’র বাইরে কেউ সভাপতি হলে তার পক্ষে দল পরিচালনা করাও কঠিন হয়ে পড়বে। অপরদিকে সম্ভাব্য সভাপতিদের মধ্যে অনেকেই আবার দীর্ঘদিন যাবত স্থায়ীভাবে ঢাকায় বসবাস করছেন। তাই বরিশাল মহানগর সভাপতির পদে যাকে মনোনীত করা হবে তা চিন্তা-ভাবনা করেই করতে হবে। নতুবা ভবিষ্যতে এর খেসরাত আওয়ামী লীগকেই দিতে হবে। এসব যুক্তিতর্ক নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে আ’লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের মাঝে।

(টিবি/এএস/আগস্ট ৩০, ২০১৪)