মোঃ আব্দুল কাইয়ুম, মৌলভীবাজার : কালবৈশাখী ঝড় আর বৈরী আবহওয়ার শঙ্কা মাথায় নিয়ে চলতি বোরো মৌসুমে দেশব্যাপী শুরু হয়েছে বোরো ধান কাটা। একাজে শুধু কৃষকই নয়, সানন্দে কৃষকের পরিবারের অন্য লোকজনও এসে যোগ দিচ্ছেন সেই ধান কাটায়।

আবহাওয়া অধিদপ্তর আসন্ন দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়াসহ অতিবৃষ্টি এবং বন্যার পূর্বাভাস দেয়ায় মৌলভীবাজারের বিভিন্ন উপজেলায় শুরু ধান কাটার ব্যাপক আয়োজন। এ যেন ফসলাদি কর্তনকালীন উৎসব। এমন উৎসবকে স্মরণীয় করতে প্রয়োজনের বাস্তবতায় একত্রে ধান কাটছেন চাচা-ভাজিতা।

সম্প্রতি শ্রীমঙ্গল উপজেলার হাইল হাওরের পাকা জমিতে গিয়ে দেখা গেল, তীব্র রোদের দখল মাথায় নিয়ে দুজন পৃথক দূরত্বে অবস্থান করে ধান কাটছেন। কাছে দিয়ে তাদের পরিচয় জানা গেল। সম্পর্কে তারা একে অপরের চাচা-ভাজিতা। দ্রুততম সময়ে ক্ষেতের ধান কেটে ফেলতে এই একত্রিত আয়োজন।

অন্য কাজ ফেলে ভাতিজা এসে যোগে দিয়েছেন চাচার সঙ্গে, আধা-পাকা ধান কাটতে। ভাজিতার নাম রিপন রবিদাস (২৫) আর চাচার নাম পিয়ারিলাল রবিদাস (৬০)।

রিপন জানান, আমাদের পৌঁনে ৪ কিয়ার (বিঘা) জমি। এখানে ব্রি-ধান ৪৮ লাগিয়েছি। আমাদের ধারণা এই জমিতে প্রায় ৬০ মণের মতো ধান পাবো।

তিনি বলেন, নিজের জমির ধান কাটতে আমার খুবই ভালো লাগছে। হাসিখুশি মনে চাচার সাথে মিলে ধান কাটছি। আমি অন্য ব্যবসার সাথেও জড়িত। কিন্তু এই ধান কাটার আগ্রহের জন্য সেই ব্যবসা রেখে চলে এসেছি। পুরো জমির ধান কাটতে সাপ্তাহ, দশদিন সময় লাগবে।

এটা তো আমাদের নিজের জমির ধান। তাই খুব সকালে আসা হয় না। নাস্তা করে সকাল সাড়ে ৮টা, ৯টার দিকে আসি। ধান কাটার ফাকে ফাকে গাছের ছায়ায় গিয়ে বিশ্রাম নেই। আবার শুরু করি। এভাবে বিকেল ৫টা পর্যন্ত চলে ধান কাটা।

দরদাম সম্পর্কে রিপন বলেন, এখন চালের মণ প্রায় ১ হাজার থেকে ১১শ’ টাকা। সেই হিসেবে আমাদের টার্গেট ৬০ হাজার টাকার ধান পাবো। চার প্যাকেট ব্রি-ধান ৪৮ বীজ ধানের দাম ১৬শ’ টাকাসহ সার, ধান রোপণে শ্রমিক মুজুরীসহ প্রায় ১০ বাজার হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ধানকাটা জন্য দক্ষ শ্রমিকের সংকট রয়েছে। সব সময় শ্রমিক পাওয়াও যায় না। আর পেলেও দৈনিক মুজুরি ৫০০/- টাকার সাথে দুপুরের খাবার দু-তিন বার চা-বিস্কুট দিতে হয় বলে জানান।

(একে/এসপি/এপ্রিল ৩০, ২০২১)