স্টাফ রিপোর্টার : দেশের ব্যাংকিং খাত কিছুটা অস্থিরতার মধ্যে দিন কাটালেও এখন এ খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান।

শনিবার রাজধানীর রেডিসন হোটেলের বলরুমে ‘সিয়েনজা গভর্নর’স সিম্পোজিয়াম-২০১৪’ অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।

গভর্নর বলেন, ব্যাংকিং খাতে যে শৃঙ্খলা ছিল, তা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমাদের মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। অনিয়ম দুর্নীতির দায়ে ইতোমধ্যে কয়েকটি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙ্গে দিয়ে পুনঃগঠন করা হয়েছে। তাছাড়া কিছু নির্বাহীদের বিপুল অঙ্কের অর্থ জরিমানাও করা হয়েছে। এর ফলে ব্যাংকিং খাতে একধরনের শৃঙ্খলা ফিরে আসছে।

ড. আতিউর রহমান বলেন, ব্যাংকিং খাতে সুশাসন নিশ্চিত করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে। অপরাধ করে কেউ পার পেতে পারবে না বলেও তিনি সতর্কবানী উচ্চারণ করেন তিনি।

তিনি বলেন, আমরা এখন বিশ্ব অর্থনীতির অংশ হয়ে গেছি; সুতরাং বিশ্ব অর্থনীতির সব ধরনের প্রভাব আমাদের অর্থনীতির ওপরও পড়বে। এ কারণে আমাদের আরও বেশি সতর্ক হতে হবে। আমাদের ঝুঁকি ব্যবস্থাপনাকে আরও বেশি শক্তিশালী করতে হবে। ঝুঁকি বড় হওয়ার আগেই তাকে শেষ করে দিতে হবে।

গভর্নর বাংলাদেশর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতা উল্লেখ করে বলেন, গত কয়েক বছর আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশের ওপরে অবস্থান করছে। কিন্তু আশপাশের অনেক দেশে এ প্রবৃদ্ধি ওঠা-নামা করছে।

গভর্নর জানান, ভারতের প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশ থেকে ৪ শতাংশ এবং পাকিস্তানের প্রবৃদ্ধি পূর্বের তুলনায় অনেক কমে গেছে। আমাদের দেশের মুদ্রাস্ফীতির লাগামও টেনে ধরার সব ধরনের চেষ্টা অব্যহত আছে বলে জানান তিনি।

সম্মেলনে নেপালের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ড. যুবরাজ খাতিওয়াদা এবং বাংলাদেশ, কোরিয়া, মালয়েশিয়া ও পাকিস্থানের ডেপুটি গভর্নর ছাড়াও ১৪টি দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মোট ২৯ জন উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

এবারের সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য- ‘মাইক্রোইকোনমিক এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সেক্টর স্ট্যাবিলিটি: ভারানারেবল অ্যান্ড ম্যানেজিং ক্রাইসিস’।

সিয়েনজা ফোরামের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এসকে সুর চৌধুরী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি বিভাগ এ সম্মেলনের সার্বিক পরিচালনার দায়িত্ব পালন করছে।

এসকে সুর চৌধুরী বলেন, মুদ্রানীতির বাস্তবায়নের জন্য একটি সুস্থ্ ও মসৃণ আর্থিক খাতের গুরুত্ব অপরিহার্য। এ খাতের দুর্বলতা একদিকে মুদ্রানীতির প্রয়োগকে যেমন জটিল করে তোলে, তেমনি অন্যদিকে অর্থনীতির বাহ্যিক অভিঘাত সমূহের কারণে মুদ্রানীতিতে প্রয়োজনীয় উপযোজন করার ক্ষমতাকে সীমাবদ্ধ করে রাখে। এ কারণে আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতাকে রক্ষার জন্য দুর্বল দিকগুলো চিহ্নিত করে বিচক্ষণ নীতিমালা প্রণয়ন ও প্রয়োগ অপরিহার্য।

তিনি আরও বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মাত্রাতিরিক্ত ডেরিভেটিভস এর ব্যবহার এবং শিথিল আর্থিক ব্যবস্থাপনার কারণে আর্থিক ব্যবস্থা ভঙ্গুর হয়ে পড়েছে। আর এর প্রভাব পড়েছে সামগ্রীক অর্থনীতিতে। ফলে সার্বিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডও ব্যাপকভাবে বাধাগ্রস্ত হয়েছে। আর তাই এ খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো নতুন নতুন কৌশল অবলম্বন করছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। আর্থিক খাতকে স্থিতিশীল রাখতে নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোকে একসাথে কাজ করারও আহ্বান জানান তিনি।

(ওএস/এটিআর/আগস্ট ৩০, ২০১৪)