আবুল কালাম আজাদ, রাজবাড়ী : রাজবাড়ীর পাংশা পৌরসভা এলাকায় মূল্যবান ১২ শতাংশ জমির মূল মালিক আদিবাসী আরতি রানী সরদার অথচ প্রতিবেশী কোপেন ও কোহেন রাজনৈতিক শক্তির বলে অহেতু মামলা করে শতাধিক বছর বসবাসরত বাড়ি থেকে বিধবা বৃদ্ধাকে চুলির মুঠো ধরে রাস্তায় ফেলে দেওয়া হয়েছ। যার সত্যতা মেলে ২০১৯ সালের পাংশা মডেল থানায় মামলা করা নথিতে। সেখানে উল্লেখ করা হয় আমি আরতি রানী সরদার (৯০) আদিবাসী সংখ্যালঘু (বুনো)।

আমি দীর্ঘ ৬০/৭০ বছর উক্ত জমি (খতিয়ান নং-৭৫৪ দাগ নং-৬৮১) তে ঘর-দরজা উত্তলন পূর্বক ছেলে মেয়ে সহ বসবাস করে আসছি। বিবাদী মোঃরবিন শেখ (৫৪), মোঃকোহেন শেখ (৫২), মোঃ কোপেন শেখ (৩৮) সহ অজ্ঞাত নামা ৪/৫ জন বিবাদী বে-আইনি ভাবে ১৯/০৮/১৯ তারিখ ভোর রাত আনুমানিক ৫.৩০ ঘটিকার সময় তাদের হাতে থাকা দা,খোনতা ও আগ্নেয়াস্ত্র সহ আমার তফসিল বর্ণিত জমিতে অনাধিকার প্রবেশ করে ও দুইটা ঘর ভাঙ্গচুর করে ১৫০০০০টাকার ক্ষতি সাধন করে এবং আমাদের জোর পূর্বক ঘর থেকে বাহির করে দেয়।

উল্লেখ্য বিবাদী উক্ত সম্পত্তি নিয়ে রাজবাড়ী জেলার দেওয়ানি আদালতে ১২৭/৯৬ মামলা করেন, উক্ত মামলায় বাদীপক্ষ হেরে যায়। মাননীয় জজ সাহেব ২৪/১১/২০০৯ তারিখে আরতি রানী সরদারের পক্ষে রায় দেয়। ঐ রায়ের বিরুদ্ধে বিবাদী পক্ষ হাইকোর্টে সিভিল রিভিশন মামলা করে। ঐ মামলায় হাইকোর্ট স্থিতিবস্থা বজায় রাখার নিদ্দেশ দেন। কিন্তু অত্যান্ত পরিতাপের বিষয় বিবাদী পক্ষ উক্ত স্থিতিবস্থা অবজ্ঞা করিয়া আরতি রানী সরদাও তার ছেলে মেয়েদের বাড়ি থেকে বাহির করে দেয়।

তবে পাংশা মডেল থানার অত্যান্ত নিটে ওই জমি হলেও থানা পুলিশ কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। বর্তমানে ও পাংশা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ কারা হয় নি। আরতি রানী সরদার এখন রাস্তায় রাস্তায় দিন কাটাচ্ছে।

তবে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আরতি রানী সরদারের বসত ভিটা আর কোপেন ও কোহেনর বাড়ি পাশাপাশি হওয়ায় প্রভাবশালী কোপেন, কোহেন আরতি রানীর জায়গা দখল করে প্রাচীর দিয়েছে। সাংবাদিক উক্ত স্থানে যেতে চাইলে কোপেন ও কোহেন বাধা দেয় এবং বলতে থাকে ওটা আমার জায়গা কাউকে ঢুকতে দেওয়া যাবে না।

তবে স্থানীয় দেনাদার দের মাধ্যমে জানাযায় ওই জাইগার দাম প্রায় তিন থেকে সাড়ে তিন কোটি টাকা। এই জাইগা নিয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রভাব শালী মহল শালিসের মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করেছে কিন্তু সুরাহা হয়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জন সাংবাদিকদের জানান, এই জমি নিয়ে কয়েক বছর আগে স্থানীয় এমপির বাসায় উপজেলার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ নিয়ে শালিস হয় সেখানে একপর্যায়ে আরতি রানী কে ৩৫ লক্ষ টাকা দিতে হবে কোপেন ও কোয়েল কে। তবে সেই টাকা দিতে প্রায় দেড় মাস অতিবাহিত হয়। যখন টাকা এনে বলে চলো এবার জমি রেজিস্ট্রি করতে চলো, তখন আরতি রানী বলে আমার নাকি জমি নাই তবে আমি রেজিস্ট্রি করে দিবো কেমনে। আমি রেজিস্ট্রি করে দিবো না মামলায় যা হয় সেটা মেনে নিবো।

স্থানীয় অনেকেই ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছে।

উল্লেখ্য, উক্ত জমি সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে হামলা ও হুমকির ব্যাপারে পাংশা মডেল থানায় একটি মামলা করা হয়েছিল। জমি দাবিদার হিসেবে কোপেন ও কোহেন জমির দাগ নম্বর ভুল রয়েছে এই মর্মে বাদী দাবি করেন যে ভুলক্রমে ৬৮১ দাগের স্থলে ৮৬১ দাগ লিখিত হলেও তিনি দাতার কাছ থেকে ৬৮১ দাগের জমি খরিদ করেছেন, তবে নথি পর্যালোচনা করে দেখা যায় আপিলকারি বাদীপক্ষ ইতিপূর্বে ভুলের বিষয়ে দলিল সংশোধনের কোন মামলা দায়ের করেন নাই।

তবে দেখা যায় ২১/০৩/২১ তারিখে ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ রশিদে আরতি রানী সরদার তার উক্ত জমির খাজনা পরিশোধ করেছেন।

তবে মামলা চলাকালীন সময় উক্ত জমি থেকে জোর পূর্বক আদিবাসী আরতি রানী সরদার কে কেনো তুলে দিলো কোপেন ও কোহেন সেটা কি প্রশাসন দেখবে না?

বর্তমানে আরতি ও তার পরিবার রয়েছে জীবন সংকটে। যে কারণে তারা সংশয়ে পালিয়ে জীবন যাপন করছে।

(একে/এসপি/মে ০৮, ২০২১)