মতিউর রহমান মুন্না, হবিগঞ্জ : নবীগঞ্জের কণ্যা ৭ মাসের অন্তঃসত্ত্বা শরিফার বাবার বাড়ি থেকে পাঠানো ইফতারিতে সাজানো থালা না থাকা এবং ঈদে নতুন কাপড় না দেওয়ায় সিলেটের ওসমানীনগরে স্বামী-শাশুড়ির নির্যাতনে মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় গৃহবধূর স্বামী আরশ আলী ও শাশুড়ি মিনারা বেগমকে আটক করেছে পুলিশ।

শনিবার (৮ মে) দুপুরে ওসমানীগর থানা পুলিশ উপজেলার উসমানপুর ইউনিয়নের তাহিরপুর গ্রামের মৃত ইছন আলীর বাড়ি থেকে শরিফা বেগমের মরদেহ উদ্ধার করে।

স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ৯ মাস আগে উপজেলার উসমানপুর ইউনিয়নের তাহিরপুর গ্রামের মৃত ইছন আলীর ছেলে আরশ আলীর সঙ্গে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় নবীগঞ্জ উপজেলার পুটিয়া গ্রামের শাকিম উল্যার ছোট মেয়ে শরিফার।

বিয়ের কিছু দিন পর যৌতুকসহ নানা অজুহাতে স্বামী-শাশুড়ি নির্যাতন শুরু করেন শরিফার ওপর। নিজে অন্তঃসত্ত্বা থাকায় তাদের নির্যাতন সহ্য করে গর্ভের সন্তানের আলোর মুখ দেখাতে তাদের সব নির্যাতন সহ্য করেই স্বামীর বাড়িতে পড়ে থাকেন শরিফা। চলতি রমজানে তার বাপের বাড়ি থেকে ইফতারি দিতে দেরি করায় এবং ইফতারির সঙ্গে স্বামীর জন্য আলাদাভাবে সাজানো থালা না দেওয়ায় শরিফার ওপর নির্যাতনের মাত্রা আরও বেড়ে যায়।

এছাড়া শুক্রবার (৭ মে) সন্ধ্যায় শরিফার বাপের বাড়ি থেকে স্বামীর বাড়ির লোকজনের জন্য ঈদের নতুন কাপড় না আসাকে কেন্দ্র করে শাশুড়ির সঙ্গে কথা কাটাকাটির জের ধরে আরশ আলী ও মিনারা বেগম মিলে মারপিট করেন শরিফাকে। বিষয়টি মোবাইল ফোনে শরিফা তার ভাইকে জানায় এবং পরে কথা বলবেন বলে ফোন রেখে দেন।

এমতাবস্থায় সেহরির সময়ে শরিফার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি বন্ধ পান তার ভাই-বোনেরা। এরপর শনিবার শরিফার বড় বোন শিপন আক্তার শরিফার স্বামী শাশুড়ির জন্য নতুন কাপড় নিয়ে আরশ আলীর বাড়ির (বোনের বাড়ি) উদ্দেশে রওয়ানা দেন। পথিমধ্যে শরিফার ভাশুরের মাধ্যমে খবর পান তার বোন খুবই অসুস্থ। এর কিছুক্ষণের মধ্যে আবার খবর আসে শরিফা আত্মহত্যা করেছে।

খবর পেয়ে শনিবার দুপুরে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে শরিফার মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।

শরিফার বড় বোন শিপন আক্তার ও ভাই মিনার হোসেন বলেন, বিয়ের পর থেকেই আমার বোনের ওপর তার স্বামী ও শাশুড়ি যৌতুকসহ নানা অজুহাতে নির্যাতন করতো। তাদের নির্যাতনের কারণে আমরা তাকে নিয়ে যেতে চাইলেও গর্ভের সন্তানের কথা চিন্তা করে আমার বোন সব কিছু নীরবে সহ্য করে যেত। আমরা গরিব মানুষ লকডাউনের কারণে অভাব অনটনে চলতি রমজান মাসে ইফতারি পাঠাতে দেরি এবং আরশ আলীর জন্য আলাদা করে সাজানো থালা না দেওয়ায় তার স্বামী ও শাশুড়ি শরিফাকে নানাভাবে নির্যাতন করে। সর্বশেষ নতুন কাপড় পাঠাতে দেরি করায় তারা আমার বোনকে দুনিয়া থেকে বিদায় করে দিয়ে তার গর্ভের সন্তানটিকেও আলোর মুখ দেখতে দিলো না। বোন হত্যার বিচার দাবি করেন তারা।

ওসমানীগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শ্যামল বনিক বলেন, খবর পেয়ে মরদেহ উদ্ধার করে মর্গে পাঠানো হয়েছে। লাশের গায়ে একাধিক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। নিহতের স্বামী ও শাশুড়িকে আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট আইনে মামলার প্রস্তুতি চলছে।

(এম/এসপি/মে ০৯, ২০২১)