শরীয়তপুর প্রতিনিধি : গত কয়েক দিনে পদ্মা ও মেঘনা নদীতে অস্বাভাবিক ভাবে পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদ সীমার ৪৫ সে.মি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বন্যার পানি। ইতিমধ্যে জেলার ২০ ইউনিয়নের ১৮০ টি গ্রামে বন্যা দেখা দিয়েছে। পানি বন্দি হয়ে পরেছে হাজার হাজার মানুষ ও গবাদী পশু। দুর্গত এলাকায় বিশুদ্ধ খাবার পানি ও খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে।

গত শুক্র ও শনিবার সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, পদ্মা নদীর পানি সুরেশ্বর পয়েন্টে বিপদ সীমার ৪৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধি পেয়ে নদীর তীরবর্তী গ্রাম গুলো প্লাবিত হয়েছে। জাজিরা উপজেলার বিলাসপুর, বড়কান্দি, কুন্ডেরচর, পালেরচর, নাওডোবা, পূর্বনাওডোবা, ভেদরগঞ্জ উপজেলার কাঁচিকাটা, চরভাগা, উত্তর তারাবুনিয়া, চরসেন্সাস, গোসাইরহাট উপজেলার কোদালপুর, আলওয়ালপুর, কুচাইপট্টি, নলমুড়ি ও নড়িয়া উপজেলার কেদারপুর, চরআত্রা, নওপাড়া, মোক্তারেরচর, ইউনিয়নের ১৮০টি গ্রামের মানুষ পানি বন্দি হয়ে পরেছে। গত এক সপ্তাহ যাবৎ গ্রাম গুলোতে অস্বাভাবিক পানি প্রবেশ করতে শুরু করে। পানি বন্দি হয়ে গ্রাম গুলোর মানুষ চরম দুর্ভোগে পরেছে। সংকট দেখা দিয়েছে খাবার পানি, খাদ্য ও পশু খাদ্যের। স্যানিটেশন ব্যবস্থাও ভেঙ্গে পরেছে। নদীর তীরবর্তী গ্রাম গুলো শত শত মানুষ ছুটে বেড়াচ্ছে আশ্রয়ের আশায়।

বন্যা কবলিত এলাকায় গিয়ে দেখা যায়। গ্রামের রাস্তা-ঘাট পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় মানুষ ঘরের মধ্যে আটকা পরেছে। বিদ্যালয়ের মাঠ ও ঘরের মধ্যে পানি উঠে যাওয়ায় শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে যাতায়াত বন্ধ করে দিয়েছে। জেলার ৭৭ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ১০ টি উচ্চ বিদ্যালয় ও কয়েকটি দাখিল মাদ্রাসায় বানের পানি ঢুকে পরেছে। ইতিমধ্যে ২৫ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৫টি উচ্চ বিদ্যালয় ও একটি মাদ্রসা সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। পানি বন্দি এলাকার মানুষ উচু জায়গা না পেয়ে ঘরের ভিতর মাচা করে রান্নার কাজ সারছে। খাবার পানি ও খাদ্য সংকট দেখা দেওয়ায় মানুষ চরম বিপাকে পরেছে। গবাদি পশু নিয়ে অনেকে উচু রাস্তার উপর আশ্রয় নিয়েছে। দুর্গত মানুষের কাছে এখনো সাহায্য নিয়ে সরকারি বা বেসরকারি কোন সংস্থা এগিয়ে আসেনি। তারা মানবেতর জীবন যাপন করছে।

জাজিরা উপজেলার পূর্ব নাওডোবা ইউনিয়নের মাঝি কান্দি পাইনপাড়া গ্রামের আলোমতি বেগম (৬০) বলেন, আব্দুল হাকিম মজুমদার (৭০) বলেন, ৮ দিন যাবত আমরা পানি বন্দি অবস্থায় আছি। ঘরে খাবার না থাকায় অর্ধাহারে অনাহারে দিন কাটাতে হচ্ছে। এখনো আমাদের কাছে এলাকার মেম্বার, চেয়ারম্যানরা কেউ আসেনি।

ভেদরগঞ্জ উপজেলার তারাবুনিয়া ইউনিয়নের ছুরিরচরে বানভাসি আলেমুদ্দিন বেপারী (৭৫), কাচিকাটা ইউনিয়নের আবদুল আলী শরিফ (৫০) বলেন, পানিতে বাড়ি-ঘর তলিয়ে গেছে। বাড়িতে থাকতে পারছিনা। এলাকায় কোন কাজ নাই । আমরা কোন সহায়তা পাইনি।

শরীয়তপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আলেয়া ফেরদৌসি শিখা জানান, জেলার ৭৭ টি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। শ্রেণী কক্ষে পানি ঢুকে পরায় প্রায় ২৫টি স্কুল সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সামনে পিএসসি পরীক্ষা, এসময় শিক্ষার্থীদের স্কুলে উপস্থিত থাকা আবশ্যক। কিন্তু বন্যার কারণে শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙ্গে পরার সম্ভাবনা রয়েছে।

শরীয়তপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. আসিফ আহসান বলেন, জেলার ৪টি উপজেলায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে কয়েকটি গ্রামের মানুষ পানি বন্দি হওয়ার খবর পেয়েছি। সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের দুর্গত এলাকা গুলোর খোঁজ খবর রাখার কথা বলা হয়েছে। ইতিমধ্যে ১৫ মেট্রিক টন খাদ্য সশ্য সহায়তা দেয়া হয়েছে। অতিরিক্ত বরাদ্দ চেয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবেলা করার সকল প্রস্তুতি আমরা নিয়ে রেখেছি।

(কেএনআই/এএস/আগস্ট ৩১, ২০১৪)